২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিশ্লেষণ

মানবিকে ফল বিপর্যয়

-

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার ও জিপিএ ৫ সবচেয়ে কম। গত দু’বছর থেকে এইচএসসির ফলাফল নি¤œমুখী। মানবিক বিভাগের ফল বিপর্যয়ের কারণেই এবারের ফলাফলে মূল প্রভাব পড়েছে। এ বিভাগে পাস করেছে ৫৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ পরীক্ষার্র্থী। মানবিক বিভাগে এবার (২০১৮) পরীক্ষার্থী ছিল পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে মাত্র তিন লাখ ১৮ হাজার ৫৪৪ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র এক হাজার ২৬৯ জন। এ বিভাগে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি বা ফেল করেছেন। এত বিপুল পরীক্ষার্থী ফেল করায় এবারের সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।
বিপরীতে বিজ্ঞান বিভাগে এবং বাণিজ্য শিক্ষা বিভাগে পাসের হার যথাক্রমে বিজ্ঞানে ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং বাণিজ্য শিক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞানে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯০৩ জন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২৫ জন এবং বাণিজ্য শিক্ষায় দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেছে ৮৪ হাজার ৫৫৮ জন।
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। মোট পাস করেছে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শিক্ষার সাথে সমান তালে মানবিকের পাসের হার হলে শতকরা পাসের হার আরো বেশি হতো। তবে সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে দিনাজপুর ও যশোর বোর্ডেও পাসের হার কম হয়েছে। এ দু’টি বোর্ড এবার ফল খারাপ করেছে দিনাজপুর বোর্ড এবার সব বোর্ডের মধ্যে সর্বনি¤œ পাস করেছে। এ বোর্ডে পাস করেছে ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ পরীক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে যশোর বোর্ডে। এখানেও এবার পাস করেছে মাত্র ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ দু’টি বোর্ডের ফলাফলও মোট পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে।
পাসের হার নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে ইংরেজিও : শিক্ষা বোর্ডগুলোয় পাসের হার নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে ইংরেজি। পরীার ফলাফলে ইংরেজি বিষয়ে সব বোর্ডে শিার্থীরা খারাপ করেছে। তবে অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে ইংরেজিতে ভালো করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে রসায়ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে।
একাধিক বোর্ডের সিনিয়র শিকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ইংরেজি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে শিার্থীরা খারাপ করেছে। অভিজ্ঞ ইংরেজি শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এছাড়া ইংরেজি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জেলাপর্যায়ের গ্রামের শিা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভালো মানের শিার পরিবেশ নেই। বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিকও নেই। এমনও রয়েছে যে, বাংলার শিক কাস নেন ইংরেজি কিংবা ধর্ম ও নৈতিক শিার। অনেক স্কুলে নেই ইংরেজি ও বিজ্ঞানের শিক। ফলে ওই স্কুলগুলোর শিার্থী পরীার ফলে পিছিয়ে থাকছে। মফস্বলের শিার্থী ও অভিভাবকেরা ততটা সচেতন নন।
জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এবার ছিল নি¤œমুখী প্রবণতা : ফলাফলের মানের সর্বোচ্চসূচক পরীক্ষার্থীদের জিপিএ ৫ প্রাপ্তি সংখ্যা কতÑ এটিকে সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষাকার্যক্রমে মেধার সর্বোচ্চসূচক বলে অভিহিত করা হয়। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর (২০১৭) পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। গত বছরের তুলনায় কমেছে ৮ হাজার ৭০৭ জন। উপরি উক্ত পরিসংখ্যানটি ২০১৮ ও ২০১৭ সালের। ২০১৬ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৫৮ হ্জাার ২৭৬ জন। তার আগের বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। মেধার বিচারে বা শিক্ষার মানের অগ্রগতির বিচারে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির নি¤œমুখী প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ নি¤œমুখী প্রবণতার প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু গুণগত মানের দিকেই এখন বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এর জন্য পরীক্ষা ভালো করে নেয়া, খাতা মূল্যায়নে জোর দেয়া, আগের চেয়ে মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার বিদ্যমান বা প্রকাশিত ফলাফলকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে এখন আমরা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীা শেষ হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরিশোধন, মুদ্রণ, প্যাকেটজাতকরণ, ট্রাংকজাতকরণ, কেন্দ্রে প্রেরণসহ প্রতিটি স্তরেই কঠোর নজরদারি, সতর্কতা ও বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement