২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘নিউ ইয়র্কে মুসলমানদের ওপর হামলা বেড়েছে’

-

নিউ ইয়র্ক সিটিতে ধর্মীয় এবং জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আগের ঘটনাগুলোয় পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অথবা কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থায় অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় গত বছর ৭১ শতাংশ ভিকটিমই বিচার চায়নি। নিউ ইয়র্ক সিটির হিউম্যান রাইটস কমিশনের জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত বছরের শেষ পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, রাশিয়ান, হিন্দি, উর্দু, যুডিশÑ এই সাত ভাষায় পরিচালিত জরিপে অংশ নেন তিন হাজার ১০০ জন। দক্ষিণ এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান ছাড়াও শিখ ও ইহুদিরাও এতে অংশ নেন। এই রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে ১৯ জুন মঙ্গলবার ব্রুকলিনে আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টারে কমিশন অন হিউম্যান রাইটসের আয়োজনে এক অনুষ্ঠান হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কী করা উচিত তা নিয়ে খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন কমিশনার কারমেলিন পি মালালিস।
জরিপে বলা হয়েছেÑ ৩৮.৭% কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন, ৮.৮% শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন, ১৬.৬% ধর্মীয়, বর্ণ অথবা জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন কর্মক্ষেত্রে অথবা চাকরির ইন্টারভিউর সময়, ২৭% মহিলা হেনস্থার শিকার হন হিজাব পরিহিত অবস্থায় সিটির সাবওয়েতে, ৮০% ইহুদি লাঞ্ছিত হয়েছেন অথবা বিদ্বেষমূলকভাবে সহায়-সম্পদের ওপর হামলার শিকার হয়েছেন, ১৯% দক্ষিণ এশিয়ানই কর্মক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছেন, ৭১% বলেছেন যে, তারা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পুলিশ কিংবা কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন অথবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করেননি। কারণ, এর আগে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার দূরের কথা, উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন, জরিপে অংশ নেয়া শিখ সম্প্রদায়ের অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়েসীরা বলেছেন, তারা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়রানি হচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে নিউ ইয়র্ক সিটির এই মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করেছে যে, কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সক্রিয় একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে হবে। যার মাধ্যমে ভিকটিমরা বিচার প্রার্থনায় উৎসাহিত হতে পারবেন। দুর্বৃত্তদের যদি গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে বিদ্বেষমূলক ঘটনা দ্রুত হ্রাস পাবে।
এ সময় বলা হয়, সিটি, স্টেট এবং ফেডারেল প্রশাসনের অনুদানে পরিচালিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা মানবাধিকার সংস্থার অ্যাটর্নিরাও এসব ব্যাপারে বিস্তারিত সহায়তা দিচ্ছে। পুলিশ যদি অভিযোগ আমলে নিতে না চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত পদক্ষেপের সুযোগ রয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনকারীকেও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ ডলার জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। এই কমিশন সে পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রাখে। তবে ভিকটিমরা এগিয়ে না এলে কোনো আইনই প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না।
কমিশনার কারমেলিন তার বক্তব্যে বলেন, কোথায় তারা নামাজ, পূজা, প্রার্থনা করেন কিংবা কী তার দৈহিক অবস্থা বা কোত্থেকে তিনি এসেছেনÑ এ কারণে কেউ লাঞ্ছিত হবে, এটি নিউ ইয়র্ক সিটি কখনো মেনে নেবে না।
কমিশনার বলেন, শিখ, মুসলমান অথবা ইহুদিদের নিরাপত্তায় বদ্ধপরিকর এই সিটির সব এজেন্সি। কর্মক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণকেও মেনে নেয় না এই প্রশাসন। কমিশনার উল্লেখ করেন, জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মানবাধিকার কমিশন সোচ্চার হবে। সিটির সব এজেন্সির সাথে মতবিনিময় করার মধ্য দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর এভাবেই সব মানুষের জন্য নিরাপদ সিটির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা হবে।
এ সময় সিটি মেয়রের ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত কমিশনার বিটা মোস্তফি বলেন, বর্ণ, জাতীয়তা, ধর্মীয় কারণে কেউ হয়রানি হবে অথবা কর্মস্থলে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হবেÑ এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া উচিত নয়।
নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়রের কমিউনিটি এফেয়ার্স ইউনিটের কমিশনার মারকো এ ক্যারিয়ন বলেন, বৈষম্য, হয়রানি, বায়াস, হেইট ক্রাইমের স্থান নয় এই সিটি। মেয়র ব্লাসিয়োর প্রশাসন বদ্ধপরিকর কমিউনিটির সবার নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং নাগরিকের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ল’র বেনন সেন্টার অব জাস্টিসের লিবার্টি অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের উপপরিচালক এবং মানবাধিকার কমিশনার ফাইজা পাটেল বলেন, এই সিটিতে ধর্মীয়-জাতিগত-সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ-বৈষম্যের স্থান কখনোই হবে না। এই জরিপে তা চিহ্নিত হলো।
আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও রাওয়া ন্যান্সি বলেন, এখন থেকে আমাদের এই সেন্টারকে আরো গণমুখী করা হবে, যাতে ভিকটিমরা দ্বিধাহীনচিত্তে রিপোর্ট করতে সাহসী হন। এখানে শুধু মুসলমানেরাই নন, শিখ, জুইশ, এমনকি খ্রিষ্টানরাও স্বাগত।
কেয়ারের নিউ ইয়র্ক চ্যাপ্টারের লিগেল ডিরেক্টর এলবার্ট ফক্স কাহন বলেন, হয়রানি, বৈষম্য, নির্যাতন প্রতিরোধে মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রমে অংশীদার হতে পেরে আমরাও গৌরববোধ করছি। এই সিটিতে কেন আমেরিকার কোথাও হেইট ক্রাইমকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। এজন্য কমিউনিটিভিত্তিক ঐক্যের বিকল্প নেই।
এলবার্ট ফক্স উল্লেখ করেন, ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাই আমাদেরর আরো বেশি উদ্যমী হতে হবে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক উন্নয়নে। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের এই উদ্যোগ অপরিসীম ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করছি।
শিখ কোয়ালিশনের লিগ্যাল ডিরেক্টর অমৃত কাউর বলেন, আমেরিকায় বিদ্বেষমূলক হামলা প্রতিরোধে আমাদের আরো কাজ করতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। শুধু পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তাকিয়ে থাকলে চলবে না, নিজ নিজ অবস্থান থেকেও সংগঠিত হওয়া জরুরি।
নিউ ইয়র্কের আরব-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক রামা-আইসা ইব্রাহিম বলেন, সিটি মানবাধিকার কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সময়ের তাগিদ অনুযায়ী এমন একটি অপ্রিয় সত্য উচ্চারণের পথ সুগম করার জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল