২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চায় আইসিসি

-

রোহিঙ্গা বিতাড়নের অভিযোগে মামলা পরিচালনা প্রশ্নে মিয়ানমারের জবাব জানতে চেয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। রয়টার্স। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কি না তা জানতে চেয়ে হেগের ওই আদালতের কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা গত এপ্রিলে একটি আবেদন করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকেরা বৃহস্পতিবার এক আদেশে বলেছেন, এ বিষয়ে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চান তারা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ দিলেও মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আদেশে বলা হয়, মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার মতো অপরাধের যে অভিযোগ এসেছে এবং বিষয়টি বিচারের জন্য যে আবেদন একজন প্রসিকিউটর করেছেন, সে বিষয়ে মিয়ানমারের যথাযথ কর্তৃপরে বক্তব্য জানা প্রয়োজন বলে চেম্বার (আইসিসি) মনে করছে। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার সরাসরি কোনো এখতিয়ার এ আদালতের নেই।
কিন্তু রোহিঙ্গারা যেহেতু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, এভাবে তাদের বিতাড়নের বিষয়টি যেহেতু আন্তঃসীমান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য, সেহেতু আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে ফাতোও বেনসুদা আশা করছেন। তিনি এ বিষয়ে আইসিসির আদেশ চেয়ে আবেদন করার পর হেগের আদালত বাংলাদেশ সরকারের মতামত জানতে চেয়ে গত মে মাসে চিঠি দেয়।
প্রি-ট্রায়াল চেম্বার-১ এর ওই চিঠিতে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তিনটি বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দিতে বলা হয়। বিষয় তিনটি হল- ১. মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসা এবং তাদের উপস্থিতি ঘিরে সামগ্রিক পরিস্থিতি; ২. রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে আইসিসির বিচারিক মতা প্রয়োগের এখতিয়ার আছে কি না এবং ৩. প্রসিকিউটরের আবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য বিষয়ে যথাযথ বাংলাদেশী কর্তৃপরে মতামত, যা ওই আবেদন বিবেচনায় চেম্বারকে সহায়তা করতে পারে।
চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার ওই চিঠির জবাব দিলেও সেখানে মিয়ানমারের বিচারের পে মত দেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গত ৮ জুন তিনি বলেন, ‘আইসিসি যেসব তথ্য চেয়েছে, আর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা যা জানি, তার সবই আমরা তাদের জানিয়েছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য এর আগে বলেছিলেন, সুদানের দারফুরে ঘটনায় ওমর আল-বশির এবং লিবিয়ায় মোয়াম্মার গাদ্দাফির বিচার আইসিসিতে করার নজির বাংলাদেশ হয়তো চিঠিতে তুলে ধরতে পারে। সিরিয়া ও লিবিয়া আইসিসির সদস্য না হলেও জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশে হেগের আদালতে ওই দু’টি বিচার পরিচালনা করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement