২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এলো খুশির ঈদ

-

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।/ তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশির বার্তা নিয়ে ঈদুল ফিতর সমাগত। দিকে দিকে তাই উৎসবের আমেজ। নতুন কাপড় কেনার ধুম পড়েছে নগর থেকে গ্রামে। সেমাই-চিনি কিনতে ব্যস্ত মানুষ। সর্বত্রই চলছে সাজ সাজ রব।
আজ শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদ হবে আরো এক দিন পরে রোববার।
ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকেল থেকেই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। এ লক্ষ্যে সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেন, চাঁদের মাস ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায় তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।
ঈদুল ফিতর আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে উৎসব, আনন্দ, খুশি। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের অবসানে নতুন চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। চার দিকে ধ্বনিত হয় ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।
আজ চাঁদ দেখা গেলেই ঘরে ঘরে উপাদেয় খাবার রান্নার তোড়জোড় শুরু হবে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এ ঈদে সেমাইয়ের সাথে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য এক সাথে নামাজ আদায় করতে ছেলে-বৃদ্ধ সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সাথে। দোয়া ও মুনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারেরা শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যান।
আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা প্রাক-ইসলামি যুগেও আরবে ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দু’টি বার্ষিক উৎসব ছিল অধিক জনপ্রিয়। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান, এ দু’টি জাতীয় উৎসবে মদিনার আবালবৃদ্ধবনিতা নানা প্রকার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: তাদের তাৎপর্যহীন আনন্দ উৎসবের পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমণ্ডিত এবং বহুবিধ কল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনাÑ অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির বার্ষিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। ঈদের দিন হচ্ছে আমাদের জন্য সেই আনন্দ-উৎসবের দিন। এভাবেই হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে প্রবর্তিত হলো ঈদ। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় : ‘আজি আরাফাত ময়দান পাতা গায়ে গায়ে/কোলাকুলি করে বাদশাহ ফকিরে, ভায়ে ভায়ে’। এক মাস রোজার শেষে ঈদের আনন্দ প্রতিটি মানুষের মনে খুশির দ্যোতনা ছড়ালেও দরিদ্ররা কি সেই আনন্দ ভেলায় ভাসতে পারছে? কবির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে : ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিঁদ/মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?’
বিত্তবানেরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফেতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা হয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। এ দিকে ঈদের জন্য আজ থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। অবশ্য শুক্র ও শনিবার এমনিতেই সরকারি অফিসগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দীদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে থাকবে উন্নত মানের খাবার এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। তবে এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কাপড়ের মার্কেট থেকে শুরু করে মসলাপাতির বাজারও জমে উঠেছে। চলছে কেনাকাটার ধুম। নাড়ির টানে গ্রামের পানে ছুটছে মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। ঈদ মানুষকে কাছে টানে। দৃঢ় করে সামাজিক ও সম্প্রীতির বন্ধন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement