২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রেকর্ড সেট পিচের গোলের বিশ্বকাপ

ফুটবল
ফাইনাল ম্যাচে একটি কর্নার কিক - ছবি : এএফপি

ফ্রান্সের দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জয় এবং প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠা ক্রোয়েশিয়ার রানার্সআপ ট্রফির জয়ের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামলো ২০১৮ এর রাশিয়া বিশ্বকাপের। ২১তম এই আসর অনেক কিছুর জন্ম দিয়েছে। গোল্ডন বুট জয়ী হ্যারি কেন, গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী কোরতোয়া, গোল্ডন বল জয়ী লুকা মডরিচ এবং তরুন উদীয়মান ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে। সফল আয়োজনের জন্য ফিফা সভাপতি জিওভান্নি ইফান্তিনো তো এই আসরকে সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ বলে অভিহিত করলেন। তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে এই বিশ্বকাপ উপাধি পেয়েছে ‘সেট পিচের বিশ্বকাপ’। কারণ এবার রেকর্ড সংখ্যক গোল হয়েছে সেট পিচ থেকে। যেমন কর্নার, ফ্রি-কিক এবং পেনাল্টি থেকে। এবার মোট ৬৪ ম্যাচ থেকে এই সেট পিসে গোল হয়েছে ৭১টি। যা নতুন রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল ১৯৯৮ সালের। সেবার ফ্রান্স বিশ্বকাপে ৬২টি গোল এসেছিল সেট পিচ থেকে।

এবার দুই সেমি ফাইনাল এবং ফাইনালের পাঁচ গোল এই ডেড বল থেকে। সেমিতে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ফ্রান্সের গোলের উৎস ছিল কর্নার। অপর সেমিতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের লিডও ফ্রি-কিক নামের সেটপিচ থেকে। ফাইনালের ছয় গোলের তিনটিই সেট পিস থেকে। ফ্রান্সের প্রথম গোল গ্রিজম্যানের নেয়া ফ্রি-কিক প্রতিপক্ষ মানজুকিচের মাথায় লেগে জালে। এরপর ক্রোয়াট ফুটবলার পেরিসিচ যখন সমতা আনলেন সেটাও উৎস ফ্রি-কিক। ফরাসিদের দ্বিতীয় গোলও পেনাল্টি থেকে।

এবারের বিশ্বকাপে ৪২ শতাংশ গোল হয়েছে এই্ সেট পিস থেকে। অর্থাৎ ডেড বল থেকে পুরস্কার পেয়েছে দলগুলো। এই সেট পিচের বিশেষত্ব হল সহজ অনুশীলন এবং গোল ঠেকানো বেশ কঠিন। গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৫টি গোল হয়েছে কর্নার থেকে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ৩০টি গোলের উৎস কর্নার কিক। এই তথ্য দেন ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপের সদস্য অ্যান্ডি রক্সবার্গ। বিশ্ব ফুটবলের ২১তম আসর ২৯টি পেনাল্টি থেকে গোল পেয়েছে ২২টি।

এবার সেট পিস থেকে ইংল্যান্ড ৯টি গোল করেছে। যা নতুন রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতেই ১৯৬ তে। সে বছর পর্তুগালের ৮ গোল এসেছিল সেট পিস থেকে। ইংলিশ কোচ গেরেথ সাউথগেটের কন্ঠেও এই সেট পিস প্রসঙ্গ। জানান, এবারের বিশ্বকাপে সেট পিস ছিল গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।

ইংলিশ মিড ফিল্ডার রুবেন লফটুসের মতে, আমরা এই সেট পিস নিয়ে বেশি অনুশীলন করেছি। কিভাবে এটা আটকে দেয়া যায়, কিভাবে গোল করতে হবে এইসব নিয়েই।

ফিফার বিশ্লেষণ, দলগুলো পর্যাপ্ত অনুশীলনের সময় পায়নি। তাই তারা আক্রমণের চেয়ে ডিফেন্স লাইনেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এতে করে বক্সের বাইরে, ভেতরে বেশি বেশি ফাউল হয়েছে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠোকতে বাধ্য হয়ে কর্নার করেছে। আর এভাবেই গোল এসেছে সেট পিস থেকে। আর সেট পিস থেকে গোল পেতে সব দলই এখন দলে সেট পিস কোচ নিয়োগ দিচ্ছে।

আরো পড়ুন :
ফুটবলাদের উল্লাসেই বেশি খুশী দেশ্যম
যা পারেননি দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং ড্যানিয়েল প্যাসারেলা সেটাই করলেন দিদিয়ের দেশ্যম। ফ্রান্সকে এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করিয়ে তিনি চলে গেলেন ব্রাজিলের মারিও জাগালো, জার্মানীর ফ্রেঞ্চ বেকেন বাওয়ারের সমপর্যায়ে। এরা সবাই খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে জয় করেছেন বিশ্বকাপ। জাগালো ফুটবলার হিসেবে দুই বার এবং হেড কোচ ও সহকারী কোচ হিসেবে দুই বার দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। এই কৃতিত্ব অবশ্য নেই কারো। দেশ্যম এবার ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে পাশে চলে গেলেন বেকেনবাওয়ারের।

বেকেনবাওয়ার ১৯৭৪ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে এবং ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে জার্মানীকে বিশ্বকাপ এনে দেন। এবার সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন দেশ্যম। ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এবার তার কোচিংয়ে ট্রফি জয় ফরাসীদের। গত পরশু ফাইনাল শেষে এই কৃতিত্ব প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দেশ্যমের জবাব, আমি আমার এই প্রাপ্তি নিয়ে যতোটা না খুশী এরচেয়ে বেশি উৎফুল্ল দলের ২৩ ফুটবলারের শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাস দেখে। তার মতে, এই অর্জনের ফলে আমি লিজেন্ট অব ফুটবলের পর্যায়ে চলে গেছি সত্য। অবশ্যই এটা বড় প্রাপ্তি। তবে দারুণ উপভোগ করছি ফুটবলারদের বাঁধভাঙা উল্লাসটা।

ফ্রান্সের ফুটবল পার করেছে মিশেল প্লাতিনির প্রজন্ম। এরপর অতিক্রম করেছে জিনেদিন জিদানের প্রজন্ম। আর এখন চলছে গ্রিজম্যান জেনারেশন। অবশ্য একা কোনো ফুটবলারের কৃতিত্ব দিলেন না দেশ্যম। ফাইনালের ট্রফি জয় অনুষ্ঠন শেষে বৃষ্টিতে ভেজা মাথা আর মুখ মুছতে মুছতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আমার দলে গ্রিজম্যান, পগবা, উমতিতি, এমবাপেরা আছেন।এমন ফুটবল দলই থাকা দরকার। পগবা, এমবাপের সামনে আরো বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ। এমবাপের বয়স এখন মাত্র ১৭। অবশ্য এই সুযোগ পরে আর কাজে লাগাতে পারেননি ’৯৮-এর চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য থিয়েরি অঁরি ও ডেভিড ত্রেজেগেরা। তখন তাদের বয়স ছিল খুব কম।

দেশ্যম উল্লেখ করলেন, তার দলের টিম ওয়ার্কই সাফল্যের নেপথ্য। ‘আমরা ৫৫ দিন একত্রে ছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। যতোই টাফ ম্যাচের মোকাবেলা করেছি ততোই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যোগ করেন, দেখুন আর্জেন্টিনার মতো গ্রেট ফুটবল নেশনের বিপক্ষে আমরা ২-১ এ পিছিয়ে থেকেও ৪-৩ এ জিতেছি। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার স্কোর লাইন ১-১ করার পরও আমরা মোট চার গোল দিয়েছি। কোয়ার্টারে উরুগুয়েকে হারিয়েছি। এরপর সেমিতে বেলজিয়াম। সবই আত্মবিশ্বাসের ফল।

তার মতে, এবার খুব টাফ একটা বিশ্বকাপ হয়েছে। প্রতিটি দলের প্রস্তুতি ছিল ভালো। ডিফেন্সলাইনকে শক্তিশালী রেখেছে সবাই।

এই বিশ্বকাপে প্রয়োগকৃত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্স রেফারি বা ভারের প্রশংসা করেন তিনি। সেই সাথে আয়োজক রাশিয়ারও। তবে দুই বছর আগে ইউরোর ফাইনালে হারের কষ্টটা ভুলতে পারলেন না বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্তেও। জানান, সেই বেদনা এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ভিন্ন একটা বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement