১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফাইনালে ট্র্যাজিক হিরো, দুঃস্বপ্নের রেকর্ড মান্ডজুকিচের

ফাইনালে ট্র্যাজিক হিরো, দুঃস্বপ্নের রেকর্ড মান্ডজুকিচের - সংগৃহীত

একটা ম্যাচের দূরত্বে। নায়ক থেকে রীতিমতো ভিলেন বনে গেলেন মান্ডজুকিচ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নাছোড় জেদে দলকে জিতিয়েছিলেন। গোল করেছিলেন। গোলে সাহায্য করেছিলেন। একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছিলেন। চোট পেয়েও এমন খেলা খেলছিলেন, যাতে মনে হচ্ছিল একটা গোটা জাতির স্বপ্নপূরণের জন্যই খেলছেন। সেই মান্ডজুকিচ ফাইনালে একটা ছোট্ট ভুলে ভিলেন হয়ে গেলেন। রেকর্ডও গড়লেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে এই প্রথম কোনও খেলোয়াড় আত্মঘাতী গোল করলেন। তবে এ রেকর্ড বোধহয় দুঃস্বপ্নেও মনে রাখতে চান না ক্রোট স্ট্রাইকার।

এবারের বিশ্বকাপ যেন আত্মঘাতী গোলের বোমাবর্ষণ। ব্রাজিল থেকে রাশিয়া সবার স্বপ্নভঙ্গের পিছনে থেকে গেছে এই আত্মঘাতী গোল। দেশের ডিফেন্স রক্ষা করার বাড়তি তাগিদেই এই ভুল হয়ে যায় খেলোয়াড়রদের। এদিন মান্ডজুকিচের অবশ্য তেমন কোনো দোষ ছিল না। গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিক আটকাতে লাফিয়েছিলেন। বল তার মাথায় লেগে সোজা গোলে ঢুকে যায়। লাফিয়েও হাত ছোঁয়াতে পারেননি ক্রোট কিপার সুবাসিচ। যে মান্ডজুকিচ দলকে ফাইনালে টেনে তুলেছিলেন, তার ভুলেই এদিন গোড়ায় গোল খেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। পরে ফ্রান্স কিপারের ভুলে সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেন বটে, কিন্তু ততক্ষণে ইতিহাসে তার নাম ঢুকে গিয়েছে। এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে কেউ আত্মঘাতী গোল করলেন।

সেমিফাইনালের অপর ক্রোট নায়ক পেরিসিচিও এদিন দলকে ডুবিয়েছেন। সেদিন তিনিও রাশিয়ার গোলে বল জড়িয়েছিলেন। মান্ডজুকিচের গোলও এসেছিল তার পাস থেকেই। এদিন তিনিই হ্যান্ডবল করে ফেললেন। ভার-এ নিশ্চিত হয়ে পেনাল্টি দিলেন আর্জেন্টিনার রেফারি। জালে বল জড়াতে ভুল করেননি গ্রিজম্যান। সেমির দুই নায়কই রোববার ভাগ্যের ফেরে ভিলেন হয়ে গেলেন। স্বপ্নভঙ্গ হল ক্রোয়েশিয়ার। দ্বিতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল ফ্রান্স। তবে যে লড়াইয়ের নমুনা এই বিশ্বকাপে ক্রোটরা দেখিয়ে গেলেন, তা স্বপ্ন দেখাবে বহু ছোট ছোট দেশকে। জনসংখ্যা নয়, পরিকল্পনা-আবেগ আর লড়াই থাকলে যে সোনার পরি একদিন না একদিন হাতে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাই-ই যেন দেখিয়ে দিল ক্রোয়েশিয়া।

আরো পড়ুন :

হেরেও স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে গেল ফুটবলবিশ্বের ক্রোয়েশিয়া
হেরেও যারা জিতে যায় তাদের কী বলে? তারা বীর হিসেবেই স্বীকৃতি পাবে। হ্যাঁ, ইতিহাস বলবে ২০১৮ বিশ্বকাপে ফাইনালে হেরেই গিয়েছেন মদ্রিচ, রাকিতিচরা। তবে সেটুকুই তো সব নয়। যেন এই হেরে যাওয়ার ছাই থেকেই ফিনিক্সের উত্থান সম্ভব, ছোট ছোট দেশগুলিকে আজ সে স্বপ্নই দেখিয়ে গেল ক্রোয়েশিয়া।

ফিফার পক্ষ থেকে সোনার বল যখন হাতে তুলে দেয়া হলো ক্রোয়েশিয়ার ক্যাপ্টেন মদ্রিচের হাতে, তখন ধীর পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন ক্রোট প্রেসিডেন্টের দিকে। কী বললেন? বললেন, পারলাম না স্বপ্ন সত্যি করতে। ক্রোট প্রেসিডেন্ট বললেন, কে বলেছে! বরং তোমরা স্বপ্ন দেখতে শেখালে গোটা ফুটবলবিশ্বকে। গাল ছুঁয়ে আদর করে দিলেন তার দেশের অধিনায়কের। বাইরে তখন অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে। প্রেসিডেন্টের চোখেও পানি। হ্যাঁ, এ সংলাপ কাল্পনিকই।

তবে এ কল্পনায় দোষ নেই। বস্তুত, এই বিশ্বকাপ যখন শুরু হয় তখন কেউ দূরতম স্বপ্নেও ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভাবেনি। ট্রফির দাবিদার ভাবা তো দূর কথা, গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারবে বলেও কেউ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু যেখানে ভাবনার সমাপ্তি, সেখানে স্বপ্নের শুরু। ক্রোটরা সেই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেন গোড়া থেকেই। একে একে বড় দলরা আটকাল মদ্রিচদের কাছে। এমনকী মেসির আর্জেন্টিনাকেও মাটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন তারাই। সেদিনই যেন ফুটবল বিশ্বে এক নতুন দেশের জন্ম হয়েছিল, যারা তারকা হয়ে উঠতে পারে।

একদিকে যখন খেলোয়াড়রা মাঠে নাছোড় জেদের পরিচয় দিচ্ছেন, তখন ফুটবল উন্মাদনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রোট প্রেসিডেন্ট কিত্রাভিচ। ভিভিআইপি বক্সে দেশের জার্সি পরে বসার নিয়ম নেই। স্বয়ং ম্যারাডোনাও পরেন না। পুতিনও না। কিন্তু তিনি পারেন। নিয়ম ভাঙতে হবে বলে একবার বক্স ছেড়ে দেশের সমর্থকদের সঙ্গে বসেই খেলা দেখেছিলেন। এদিন অবশ্য পুতিনদের পাশে দেশের জার্সি পরেই বসেছিলেন।

কোত্রাভিচ যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, হতে পারে মাত্র ৪২ লাখ বাসিন্দা তার দেশের, কিন্তু ফুটবল আবেগ কোনো সংখ্যায় বাঁধা থাকে না। তাই বহু ১০০ কোটির দেশকেও তারা গোল দিতে পারেন। বস্তুত দিলেনও। দিলেন পরিকাঠামো, আবেগ, লড়াই আর দক্ষতায়। বুঝিয়ে দিলেন, ছোট-বড় আসল কথা নয়, হিসেব বদলে দিতে হয় সংগ্রামের ইতিবৃত্তে। তথাকথিত বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে সে ইতিহাসই রচনা করলেন ক্রোটরা। হয়তো বিশ্বকাপ জেতেনি তারা। তবে এরপর থেকে ক্রোটদের আর কেউ হিসেবের বাইরে রাখবেন না।

তবে এ শুধু ক্রোয়েশিয়ার একার অর্জন নয়। বরং ছোট ছোট সব দেশ, যারা বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুকে লালন করে চলে, তাদেরও স্বপ্ন দেখাতে শেখাল ক্রোয়েশিয়া। যেন জানিয়ে দিল, পরাজয়ই শেষ কথা নয়। পরাজয় আর পরাভূত হওয়া এক জিনিস নয়। বরং এই হারের ধ্বংসস্তূপ থেকেই উড়ান দেয় নতুন স্বপ্ন। হয়তো সেভাবেই ফিরে আসবে ক্রোয়েশিয়া। হয়তো সেভাবেই উঠে আসবে অন্য কোনো দেশ। আজ যে তরুণী চোখের পানি ফেললেন, হয়তো অন্য কোনো দিন আনন্দাশ্রু হয়েই তা লেগে থাকবে সোনালি ট্রফির গায়ে। এই অপেক্ষাটুকুর নামই ভালোবাসা, এই ভালোবাসার নাম ফুটবল।


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল