২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

হঠাৎই তারকা বনে গেলেন জালাটকো ডালিচ

বিশ্বকাপ
ক্রোয়েশিয়ার কোচ জালাটকো ডালিচ - সংগৃহীত

বিশ্বকাপের আগে কয়জনই বা চিনতো জালাটকো ডালিচকে। ছিলেন ছোট মানের কোচ। তেমন কোনো বড় ক্লাবেও কাজ করার সুযোগ হয়নি। অথচ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ তাকে এনে দিয়েছে তারকা কোচের খ্যাতি। নিশ্চিত এই আসরের পর বিশাল অর্থের পারিশ্রমিকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব পাবেন অন্য দেশ কিম্বা নামী দামী ক্লাব থেকে। আজ ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ জিতলে ডালিচ চলে যাবেন আরো উচ্চতায়। বিশ্বের সব নামী-দামী কোচের তালিকায় ঠাঁই হবে তার। অবশ্য এখনই সে পর্যায়ে চলে গেছেন। বিপরীতে ফ্রান্সের দেশ্যামকে চেনে সবাই, ১৯৯৮ থেকে।

৫১ বছর বয়সী ডালিচের কখনও সুযোগ হয়নি ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলে খেলার। এমনকি বড় কোনো দলের জার্সিও গায়ে তোলা হয়নি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে তার খেলোয়াড়ী জীবন ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া এবং বসনিয়া­হার্জেগোভিনার ক্লাবে। ২০০০ সালে অবসর নেয়ার পর তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। বসনিয়ায় জন্ম নেয়া ডেলিচ তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই পার করেছেন ক্রোয়েশিয়ায়। ২০০৩ থেকে ২০০৫ ছিলেন ক্রোয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-২১ দলের সহকারী কোচ। এরপর ক্রোয়েশিয়া এবং আলবেনিয়ার ক্লাব দলের কোচ হন। এরপর ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন এশিয়ার তিন ক্লাব দলের কোচ। সৌদি আরবের আল ফয়সালি, আল হিলাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।

এই ক্রোয়েটের জীবনের চাকা ঘুরে যায় ২০১০ এ আল ফয়সালির দায়িত্ব নেয়ার পর। সেবার তার ক্লাব কোয়ালিফাই করে সৌদি কিংস কাপে। আর্জেন্টিনার গ্যাব্রিয়েল কালডেরন, ইতালির ওয়াল্টার জেংগাকে পেছনে ফেলে ২০১১-১২ মৌসুমে সৌদি লিগের সেরা কোচের খেতাব অর্জন করেন। ২০১২তে আল হিলালের কোচ হয়েই দলকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন করান। এটা ডেলিচের কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বড় সাফল্য। ২০১৪তে তিনি যোগ দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন ক্লাবে। সে বছরই ইউএই প্রেসিডেন্স কাপ জয় করে আল আইন। ২০১৫ তে আমিরাত পেশাদার লিগের সেরা কোচ মনোনীত হন তিনি।

গত বছর ১৭ অক্টোবর তাকে ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়। দল তখন ধুকছিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। তাই আন্তে কাচিচকে বাদ দিয়ে তাকে কোচ করে ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। এরপরইে বদলে যাওয়া ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের।
নভেম্বরে ইউক্রেনকে ২-০তে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করে। সুযোগ মেলে প্লে-অপ খেলার। প্লে-অফে গ্রিসের সাথে প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র এবং পরে ৪-১ এ জিতে টিকিট পায় রাশিয়া। সেই ক্রোয়েশিয়া এখন বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট, তা এই ডালিচের কল্যানে। তার কৌশলের কাছে মার খেয়েছে আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডর কোচরা।

জালাটকোর মতে, আমি তেমন কোনো বড় ক্লাবে কাজ কাজ করিনি। নিচু সারের একটি দলের কোচ হিসেবে আমার ক্যারিয়ার শুরু। এরপর এশিয়ার দুই বড় দলে কাজ করেছি। একবছরের মধ্যেই সেরা কোচের মর্যাদা। পরবর্তীতে যখন আমাকে ক্রোয়েশিয়ার কোচ হতে বলা হলো আমি কোনো দ্বিধা করিনি সেই দায়িত্ব গ্রহণে। জানান, আমার জীবন এবং ক্যারিয়ার এমনই কঠিন সময় পার করেছে।। এখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে।

ডালিচ এই প্রসঙ্গে টেনে আনলেন ২০০৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন গ্রিসের উদহারণকে। জানান, তখন কেউ ভাবেনি গ্রিস ইউরো জয় করবে। দেখুন সেই গ্রিসের সাথে এবারের ক্রোয়েশিয়ার কি মিল।

আজকের ফাইনাল সম্পর্কে বলেন, বিশ্বের দুই সেরা দল ফাইনালে খেলছে। ফ্রান্স কাউন্টার অ্যাটাকে খুবই বিপদজনক। আজ এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ম্যাচ এবং তা কঠিন প্রতিপক্ষের সাথে। তবে আমরা প্রস্তুত।

 

আরো পড়ুন : হারানো বন্ধুর জন্য বিশ্বকাপ চাই সুবাসিচের

রাশিয়া বিশ্বকাপ জিততে পারলে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে জয় উৎসর্গ করবেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ড্যানিয়েল সুবাসিচ। পরপারে চলে যাওয়া বন্ধু কাস্টিচের জন্যই শিরোপা জিততে চান তিনি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে দু’বার টাইব্রেকারের বাধা পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে ক্রোয়েশিয়া। যার পুরো কৃতিত্বই দিতে হয় ড্যানিয়েল সুবাসিচের। প্রত্যেকবার বিপক্ষের ফুটবলার শট নিতে আসার আগে দুই হাত ও মুখটা আকাশের দিকে তুলে কি যেন প্রার্থনা করেন সুবাসিচ। কার জন্য, কেন এই প্রার্থনা?

ক্রোয়েট গোলরক্ষকের এ ঘটনার পেছনে রয়েছে মর্মস্পর্শী কাহিনী। ১০ বছর আগে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম বিভাগ লিগে জাদারের হয়ে খেলতেন সুবাসিচ। সেই দলে তার সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলেন সতীর্থ কাস্টিচ। দু’জনের সখ্যও ছিল ঈর্ষণীয়। একসঙ্গে থাকতেন, খেলতেন, ঘুরে বেড়াতেন। এক দিন এইচ এনকে সিবালিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের চার মিনিটে একটা ব্যাকপাস পেয়ে বাঁদিকে থাকা কাস্টিচকে দেন সুবাসিচ। আচমকা লাফিয়ে ওঠা বলটা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন কাস্টিচ। ততক্ষণে সিবালিয়ার এক ফুটবলার চলে এসেছেন কাস্টিচের কাছে। কিন্তু কাস্টিচ টাল সামলাতে না পেরে তিনফুট দূরে থাকা কংক্রিটের দেয়ালে সজোরে মাথা ঠুকে পড়ে যান। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর পাঁচ দিন কোমায় থাকার পর না ফেরার দেশে চলে যান কাস্টিচ। প্রিয় বন্ধুর এ ভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি সুবাসিচ। বন্ধুকে হারিয়ে ক্রমে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। কয়েক দিনের জন্য চলে যান আমেরিকায়। সেখানেও দুঃস্বপ্ন তাড়া করত।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ডেনমার্কের বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে টাইব্রেকারে তিনটে সেভ করে সংবাদ সম্মেলনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সুবাসিচ। বলেছিলেন, ‘সেদিন যদি বলটা ওকে না দিতাম, তাহলে আজ ও বেঁচে থাকত। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন সে দিন ওকে পাস দিলাম?’

১০ বছর কেটে গেলেও, সেই ট্রমা থেকে বের হতে পারেননি সুবাসিচ। ডেনমার্ক ম্যাচে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার পর জার্সি খুলে ফেলেছিলেন। জার্র্র্সির নিচে থাকা টি-শার্টে কাস্টিচের ছবি তুলে ধরেন সবার সামনে। সুবাসিচ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ঠিক করেছিলাম, যতদিন খেলব, যেখানে খেলব, ক্যারিয়ারের বাকি সব ম্যাচে কাস্টিচের জার্সি পরে খেলব। ক্লাব হোক বা জাতীয় দলের ম্যাচ হোক আমার জার্সির নিচে থাকে কাস্টিচের ছবি।’

ফুটবল বিশ্বের বড় সব দলগুলোকে বিদায় ঘটিয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা হাকান সুকেরের দল যা পারেনি এবার সেটাই করে দেখিয়েছে লুকা মডরিচের দল। আর মাত্র একটা ম্যাচ বাকি। ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই ইতিহাসে ঢুকে যাবেন মডরিচ, পেরিসিচ, র্যাকিটিচ আর সুবাসিচরা। ক্রোয়েশিয়া ফুটবলকে স্বর্ণযুগে নিয়ে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ক্রোয়েটরা।


আরো সংবাদ



premium cement