২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মেসির বিদায়ে গ্যালারিতে হাজার হাজার দর্শক হারালো বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার বিদায়ে গ্যালারিতে ভক্তদের কান্না - নয়া দিগন্ত

আর্জেন্টিনার বিদায়ে বিশ্বকাপ যেমস হারালো লিওনেল মেসিকে, তেমনি রাশিয়ার স্টেডিয়ামের গ্যালারি হারালো হাজার হাজার আর্জেন্টাইন দর্শককে। ইউরোপের দেশ রাশিয়ায় এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ায়, এই অঞ্চলের দর্শকই বেশি আসার কথা। অথচ স্টেডিয়াম ভরছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, কলম্বিয়া এবং অন্য ল্যাতিন দেশের দর্শক দিয়ে।

কাজানের আর্জেন্টিনা- ফ্রান্স ম্যাচের দর্শকের উদাহারণই টানা যাক। মাঠে উপস্থিত ৪৪ হাজার দর্শকের মধ্যে ফ্রান্সের বড় জোর পাঁচ থেকে ছয় হাজার। বাকি সবই আর্জেন্টাইন।

এর আগে গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া, ব্রাজিল-সার্বিয়া, ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচেও একই চিত্র ছিল।

কলম্বিয়ার খেলার দিনও তাদের সমর্থকদের ভীড়। জার্মানি-মেক্সিকো ম্যাচেও মেক্সিকানদের আধিক্য।

কেন কাছের দেশ রাশিয়ায় আসছে না অন্য ইউরোপিয়ানরা। আসলে ল্যাতিনদের মতো সেই ক্রেজটা নেই ইউরোপিয়ানদের। তাই তাদের উপস্থিতি কম।

 

আরো পড়ুন : এমন পরাজয় প্রাপ্য ছিল আর্জেন্টিনার

এরা দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ম্যারাডোনা, মেসিদের মতো বিশ্বখ্যাত ফুটবলার জন্ম দিয়েছে তারা। ইউরোপের সব বড় বড় লিগ মাতাচ্ছেন তাদের ফরোয়ার্ডরা। অথচ তাদের দেশে নেই কোনো মানসম্পন্ন মিডফিল্ডার। রক্ষণভাগে অগোছালো। গোল পোস্টের নিচে আস্থার সঙ্কট। রাশিয়া বিশ্বকাপে এই আর্জেন্টিনা চার ম্যাচে ৯ গোল হজম করে বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। মেসি, হিগুয়েন, অ্যাগুয়েরো, দিবালার মতো ফরোয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয়েছে ৬ গোল। পরপর দুই খেলায় তারা প্রতিপক্ষকে উপহার দিয়েছে দু’টি পেনাল্টি। একটি দলের অবস্থা কতটা বাজে হলে এই পরিস্থিতির জন্ম হতে পারে। অথচ ফুটবল জাতি তারা। দুনিয়া জোড়া শত কোটি দর্শকের এই দেশের ফুটবলের বর্তমান দশার জন্য দায়ী সে দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। এমনই জানালেন রাশিয়ায় আসা এই ল্যাতিন দেশের সাংবাদিকেরা। আর এই ক্ষতিটা করে গেছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুলিও গ্রোন্ডানো।

এই দেশের মিডিয়া কর্মীদের মতে, হোসে লুইস পেকারম্যান আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের সাথে চুক্তি শেষ করার পর চলে যান কলম্বিয়ায়। তিনি যে অসংখ্য তরুণ ফুটবলার রেখে গেছেন পরে নতুন ফুটবলার তৈরির তেমন কাজ করেনি এএফএ। ফলে যে আর্জেন্টিনা পাঁচবারের যুব ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা এখন যুব ফুটবলে বহু কষ্টে কোয়ালিফাই করে এবং বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই।
পেকারম্যান চলে যাওয়ার পর যুবদলের কোচের দায়িত্ব পান গ্রোন্ডানোর ছেলে। অযোগ্য এই কোচ নতুন ফুটবলার তৈরিতে তেমন কাজ করেননি। যেমনটা সারা দেশ ঘুরে খেলোয়াড় বাছাই করেছিলেন পেকারম্যান। ফলে গত ৮-১০ বছরে এই যে নতুন ফুটবলারের সঙ্কট সেটারই ফল ভোগ করছে এখন আর্জেন্টিনা। কী কষ্ট করেই না তাদের রাশিয়ার টিকিট পেতে হয়েছিল। এরপর বিশ্বকাপের চার ম্যাচে মাত্র একটি জয় নিয়ে শেষ ১৬ তে সম্পন্ন করল তাদের বিশ্বকাপ মিশন। ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-১ গোলে লিড নেয়া দল ৫৭ থেকে ৬৮ এই ১২ মিনিটে তিন গোল হজম করে তা মূলত ডিফেন্ডার এবং মূলত মিডফিল্ডারদের কারণে। মাঝমাঠে বলের দখল রাখতে পারছিল না। সাথে ছিল ভুল পাস।

স্থানীয় লিগেরও বারোটা বাজিয়েছেন গ্রোন্ডানো। ২০ দলের বদলে ৩০ দল নিয়ে চালু করেন লিগ। এতে দুর্বল দ্বিতীয় বিভাগ থেকে আসা দলগুলোর সাথে বিস্তর গ্যাপ দেখা দেয় প্রিমিয়ারের দলগুলোর। গ্রোন্ডানোর মৃত্যুর পর যারা নতুন করে এএফএর দায়িত্ব নেন তাদের মধ্যে কাজের চেয়ে ক্ষমতা আর অর্থের লোভই ছিল বেশি। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতা নিয়ে উঠে পড়ে লাগে এখনকার এএফএ সভাপতি কাউডিও তাপিয়ার বিপক্ষে। এই সব সমস্যারই জের টানতে হচ্ছে তাদের জাতীয় ফুটবল দলকে। এই আর্জেন্টিনা ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর তিনজন কোচকে দায়িত্ব দিয়েছে। জেরার্ড মার্টিনো, এডগার্ডো বাউজার পর জর্জ সাম্পাওলি। আলেসান্দ্রো সাবেলা গত বিশ্বকাপে এই দলকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ প্রথম দু'জনের সময় অনিশ্চিত ছিল দলের বিশ্বকাপ। দুইবার হাতছাড়া কোপা আমেরিকা। শেষ পর্যন্ত সাম্পাওলিতে পার।

গত পরশু কাজানে আর্জেন্টিনার হারের পরও অবশ্য তাদের সমর্থকেরা আনন্দ করেছেন। সারা রাত কাজানে গান গেয়েছেন আর নানানাচি করেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপ এখন এই প্রবল ফুটবলপ্রেমী দর্শকদের হারাবে।

 

আরো পড়ুন : এই কষ্ট ভুলতে পারবেন না মাসচেরানো

তাকে বলা হতো আর্জেন্টিনা দলের লিটল চিফ। সাবেক এই অধিনায়ক তার আকাশী নীল জার্সি আর গায়ে দেবেন না। গত পরশু ফ্রান্সের কাছে হেরে দলের যেমন বিদায় হয়েছে, তেমনি জাতীয় দলকেও বিদায় বলে দিলেন হাভিয়ার মাসচেরানো। ফলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সাথে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্কের আবসান হলো। তবে এই গ্রেট ফুটবলারের এমন বিদায় কেউ আশা করেনি। সবার প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপ জিতেই বুট জোড়া তুলে রাখবেন তিনি। পরশু কাজান এরিনার মিক্সড জোনে এসে বিদায় ঘোষণা দিয়েই কেঁদে ফেললেন মাসচেরানো।

আসফোস করে বললেন, 'খুবই দুঃখজনক বিদায় হলো আর্জেন্টিনার। দলের হয়ে সব মিলিয়ে পাঁচটি ফাইনাল খেলেছি। কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ না জেতার কষ্ট আমি ভুলতে পারবো না।'

এমনিতেই এটি ছিল মাসচেরানো শেষ বিশ্বকাপ। সেই ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন তিনি। এই নিয়ে চার বিশ্বকাপে উপস্থিত ছিলেন। তার অবসরে আর্জেন্টিনা যেমন একজন নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার হারালো তেমনি মিডিয়া হারালো একজন বন্ধুকে। দলের বাজে পরিস্থিতিতে সবাই যখন মিডিয়াকে এড়িয়ে গা বাচাতেন, তখন সাহস নিয়ে দায়িত্বের সাথে সাংবাদিকদের সময় দিতেন এই রিভারপ্লেটের ফুটবলার। কাউকেই নিরাশ করতেন না।

২০১০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন মাসচেরানো। ২০১১ তে নিজ মাঠে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় ব্যর্থতার পর অধিনায়কত্ব হারান তিনি। এরপরও দলের অঘোষিত নেতা ছিলেন। ২০০৪ এথেন্স এবং ২০০৮ এর বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী আর্জেন্টিনা দলের সদস্য ছিলেন মাসচেরানো।


আরো সংবাদ



premium cement