২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উরুগুয়ে বনাম পর্তুগাল : নজর থাকবে যাদের ওপর

বিশ্বকাপ
কাভানি-রোনালদো-সুয়ারেজ -

সোচিতে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও বি গ্রুপ রানার্স-আপ পর্তুগাল। এই ম্যাচকে সামনে রেখে দুই দলের তারকাদের দিকেই নজর থাকবে পুরো ফুটবলবিশ্বের। তবে উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানিকে ছাড়িয়ে ম্যাচের সব দৃষ্টি থাকবে পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকে। এমনটাই বিশ্বাস করেন সিআর সেভেনের সতীর্থ পর্তুগীজ রাইট ব্যাক সেডরিক সোরেস।

ক্রোয়েশিয়ার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে শতভাগ জয় নিয়ে নক আউট পর্বে উঠেছে উরুগুয়ে। লা সেলেস্তেদের ভরসরা কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আক্রমণভাগে সুয়ারেজ ও কাভানি ও রক্ষণভাগে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ সেন্টার ব্যাক দিয়েগো গোডিন ও হোসে গিমেনেজ।

বিশ্বকাপ ও ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩৮টি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন রোনালদো, যা জার্মানীর সাবেক অধিনায়ক বাস্টিয়ান শুয়েন্সটেইগারের সমান। এই ম্যাচকে সামনে রেখে সোরেস বলেছেন, ‘উরুগুয়ে দলে আমাদের মতই বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড় আছেন। কিন্তু আমাদের দলে রয়েছে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। আমরা তাদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। তারা শক্তিশালী দল। কিন্তু আমাদের দলেও গুণসম্পন্ন খেলোয়াড় রয়েছে। জয়ের লক্ষ্যেই আমরা মাঠে নামবো।’

ফিশে স্টেডিয়ামে স্পেনের সাথে ৩-৩ গোলে ড্রয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল পর্তুগাল। ম্যাচে রোনালদো এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন। এর মধ্যে একটি গোল ছিল ফ্রি-কিক থেকে। এরপর মরক্কোর বিপক্ষে রোনালদোর গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল পর্তুগাল। ওই এক গোলেই দলের জয় নিশ্চিত হয়। ইরানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন দলটি ধীরে ধীরে যেভাবে শিরোপার দেখা পেয়েছিল অনেকটাই সেই ছায়াই লক্ষ্য করা যাচ্ছে পর্তুগালের পারফরমেন্সে।

অন্যদিকে উরুগুয়ের জন্য গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরুনো ছিল অনেকটাই সহজ। যদিও তাদের মতে, এখনও সেরাটা দিতে পারেনি পুরো দল। মিসর ও সৌদি আরবের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে গিমেনেজ ও সুয়ারেজ ছিলেন জয়ের মূল নায়ক। কিন্তু স্বাগতিক রাশিয়াকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয়ার ম্যাচটিতে সুয়ারেজের সাথে কাভানিও ছিলেন আক্রমণের অগ্রভাগে।

এবারের বিশ্বকাপে উরুগুয়ের হয়ে সবকটি ম্যাচে মূল একাদশে খেলা ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার মাটিয়াস ভেসিনো বলেছেন, আমরা একটি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে মাঠে নামবো। ম্যাচ যত গড়াবে ততই এর আবহ বোঝা যাবে। আমরা তাদের ফরোয়ার্ডদের আটকানোর চেষ্টা করবো।

পেশীর সামান্য সমস্যার কারণে পর্তুগালের লেফট-ব্যাক রাফায়েল গুয়েরেইরো, উইঙ্গার জেলসন মার্টিন ও মিডফিল্ডার উইলিয়াম কারভালহো বৃহস্পতিবার অনুশীলনে ছিলেন না। থাইয়ের ইনজুরি কাটিয়ে গিমেনেজ দলে ফিরেছেন। ইনজুরির কারণে রাশিয়ার বিপক্ষে তিনি খেলেননি।

মিসরের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বেশ হতাশ ছিলেন সুয়ারেজ। তবে একটি বিষয় স্বস্তিদায়ক যে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তিনি বিতর্কের জন্ম দেননি।

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে কোনো গোল করতে পারেননি রোনালদো। বড় কোনো টুর্নামেন্টে গত ১৭টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে পরাজিত হয়েছে পর্তুগাল। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে জার্মানির বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরেছিল পর্তুগীজরা।

 

আরো পড়ুন : সুয়ারেজ বনাম রোনালদো, দুই সৃষ্টিশীল ও পরিশ্রমীর লড়াই

দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ে গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচের তিনটিতেই জয়ী হয়ে দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুয়ারেজ তার শততম ম্যাচে খেলতে নেমে একটি গোল করলেন সৌদি আরবের বিপক্ষে। তৃতীয় ম্যাচেও উরুগুয়ের গোলের সূচনা করেন সুয়ারেজ এবং স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আমেকিার দেশটি জয় পায় ৩-০ গোলে। বিশ্বকাপ এবং উরুগুয়েকে নিয়ে বিতর্ক যেন সমার্থকই হয়ে গেছে। জর্জি কিয়ারলিনিকে কামড়ে দেয়া কিংবা ঘানার বিপক্ষে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে গোলরক্ষক হয়ে যাওয়া- এসব বাদ দিলে সুয়ারেজকে বর্তমান বিশ্বের সেরাদের একজন বললে কোনোভাবেই বাড়িয়ে বলা হবে না। জাতীয় দল এবং ক্লাব মিলিয়ে ৪০০ গোল করাতো চাট্টিখানি কথা নয়। গোল করার বেলায় কতটা ফলদায়ক সুয়ারেজ সেটি শুধু একটি তথ্য দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বার্সেলোনার হয়ে ২০১৪ থেকে এই পর্যন্ত ১৩০ ম্যাচ খেলে তার গোলসংখ্যা ১১০। সবচেয়ে কম ম্যাচে লা-লিগায় শততম গোল করার রেকর্ডটিও তার। লা-লিগায় মেসি এবং রোনালদোর পরই আসে তার নাম। উরুগুয়ের হয়ে ১০১ ম্যাচে ৫৩ গোলও তার গোল করার ক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতার দিকে নজর দিতে বাধ্য করাচ্ছে। ক্যারিয়ারে ১৬টি ট্রফি জয় তার গোল করার ক্ষমতাকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। পর্তুগাল তাদের গোলবারকে তাই একজনের নিকট থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে যার নাম লুইস আলবার্ট সুয়ারেজ ডিয়াজ।

ইউরো ২০১৬তে তার সাফল্যের ক্ষুধা সবাই দেখেছে। দেশকে শিরোপা এনে দেয়ার জন্য রোনালদো পায়ে আঘাত নিয়েও সহখেলোয়াড়দেরকে সাহস জুগিয়েছেন এবং পর্তুগালের হয়ে প্রথম শিরোপা নিশ্চিত করেছে। জাতীয় দলের হয়ে গোল করাই যেন তার মিশন। ১৫৩ ম্যাচে ৮৫ গোল করে তিনি ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় আছেন দ্বিতীয় স্থানে। এ তো গেল তার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে রোনালদো যা করছেন তাকে অবিশ্বাস্যই বলতে হবে। স্পেনের বিপক্ষে অসাধারণ হ্যাটট্রিক ও তার পরের ম্যাচ থেকে একটি গোল করে চার গোল নিয়ে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। উরুগুয়ের শুধু তার গোল করার ক্ষমতাকে আটকালেই হবে না একজন মিশনে নামা মানুষকে রুখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement