২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নক আউটে চূড়ান্ত দলগুলো কে খেলবে কার বিপক্ষে

মেসি, বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপে প্রথম গোল করার পর মেসির বাধভাঙা উল্লাস - সংগৃহীত

রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষ রাউন্ডের খেলা চলছে। এখন পর্যন্ত ১১টি দল পরের পর্ব নিশ্চিত করেছে। বাকি রয়েছে আরো পাঁচটি স্থান। সমান পয়েন্ট পাওয়া, সমান গোল ব্যবধান বা সমান সংখ্যক গোল করা দলের ক্ষেত্রে ফিফা যে নিয়ম মেনে চলে :

ফিফা বিশ্বকাপে গ্রুপে র‍্যাঙ্কিংয়ের নিয়ম (ক্রমানুসারে)-

১. সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া দল পরের রাউন্ডে যাবে
২. সংশ্লিষ্ট দলগুলোর পয়েন্ট সমান হলে গ্রুপ ম্যাচের গোল ব্যবধানের ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা দল পরের রাউন্ডে যাবে
৩. পয়েন্ট এবং গোল ব্যবধান সমান হলে কোন দল বেশি গোল করেছে সেই হিসেবে বেশি গোল করা দল পরের রাউন্ডে যাবে
এই হিসাবে সব দল সমান হলে
৪. হলুদ কার্ড ও লাল কার্ডের ভিত্তিতে গ্রুপের সব ম্যাচ শেষে ফিফা ফেয়ার প্লে নীতি অনুযায়ী যে দলের পয়েন্ট বেশি হয়। কার্ডের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে প্রত্যেক দলের পয়েন্ট কাটা হয়: - প্রথম হলুদ কার্ড: -১ (মাইনাস ১) পয়েন্ট- দ্বিতীয় হলুদ কার্ড/পরোক্ষ লাল কার্ড: -৩ (মাইনাস ৩) পয়েন্ট- সরাসরি লাল কার্ড:-৪ (মাইনাস ৪) পয়েন্ট- হলুদ কার্ড ও সরাসরি লাল কার্ড: -৫ (মাইনাস ৫) পয়েন্ট
কার্ডের ভিত্তিতেও একাধিক দলের পয়েন্ট সমান হলে
৫. ফিফা ব্যবস্থাপক কমিটির পরিচালিত ড্র'য়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে পরের পর্বে কারা যাবে

গ্রুপ এ - চূড়ান্ত
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের পর্বে উঠেছে উরুগুয়ে। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে স্বাগতিক রাশিয়া।
শেষ ষোলোতে উরুগুয়ে খেলবে পর্তুগালের (গ্রুপ বি' এর রানার আপ) বিপক্ষে আর রাশিয়ার প্রতিপক্ষ স্পেন (গ্রুপ বি চ্যাম্পিয়ন)

গ্রুপ বি - চূড়ান্ত
সমান পয়েন্ট ও সমান গোল ব্যবধান থাকলেও বেশি গোল করায় গ্রুপ চ্যম্পিয়ন হিসেবে পর্তুগালকে পেছনে ফেলে পরের পর্বে উঠেছে স্পেন।
শেষ ষোলোতে স্পেন খেলবে রাশিয়ার বিপক্ষে আর পর্তুগালের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে।

গ্রুপ সি - চূড়ান্ত
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের পবে উঠেছে ফ্রান্স। এই গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন ডেনমার্ক।
নক আউট পর্বে গ্রুপ ডি'র রানার আপ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলবে ফ্রান্স। আর ডি গ্রুপের শীর্ষ দল ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ডেনমার্ক।

গ্রুপ ডি - চূড়ান্ত
আইসল্যান্ডকে হারিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে নক আউট পর্বে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।
নাটকীয়ভাবে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়েছে আর্জেন্টিনা।

গ্রুপ ই
সার্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করলেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত হবে ব্রাজিলের।
ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ড একই ব্যবধানে নিজ নিজ ম্যাচে জয় পেলে গ্রুপ সেরা নির্ধারিত হতে পারে কার্ডের হিসেবে: ব্রাজিলের হলুদ কার্ড তিনটি, সুইজারল্যান্ডের চারটি। দুই দল যদি একই ব্যবধানে হেরে যায় তাহলে দ্বিতীয় স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় আসবে কার্ডের হিসেব।

ব্রাজিল সার্বিয়াকে হারালে কোস্টারিকার সাথে ড্র করলেই পরের পর্ব নিশ্চিত হবে সুইজারল্যান্ডের। সুইজারল্যান্ডে এক গোলে হারলে এবং সার্বিয়া ড্র করলে দ্বিতীয় স্থান নির্ধারিত হবে কারা বেশি গোল করেছে সেই ভিত্তিতে। সেই হিসেবে দুই দল সমান হলে সুইজারল্যান্ড পরের পর্বে যাবে কারণ তারা সার্বিয়াকে গ্রুপ ম্যাচে হারিয়েছে।

ব্রাজিলকে হারালে পরের পর্বে যাবে সার্বিয়া। সুইজারল্যান্ড এক গোলের বেশি ব্যবধানে কোস্টারিকার কাছে হারলে ড্র করলেই নিশ্চিত হবে সার্বিয়ার পরের পর্ব।

গ্রুপ এফ
সুইডেনের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেলেই গ্রুপসেরা হয়ে পরের পর্বে যাবে মেক্সিকো। দক্ষিণ কোরিয়াকে জার্মানি হারাতে না পারলে নিজেদের ম্যাচ হারলেও নক আউট রাউন্ড নিশ্চিত হবে মেক্সিকোর।

তিন ম্যাচ শেষে জার্মানির চেয়ে সুইডেনের গোল ব্যবধান বেশি হলে সুইডেন পরের পর্বে উঠবে নিশ্চিতভাবে। অর্থাৎ জার্মানি যেই ব্যবধানে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাবে তার চেয়ে বেশী ব্যবধানে মেক্সিকোর বিপক্ষে জয় পেলে নিশ্চিত হবে সুইডেনের পরের পর্ব। দুই বা তার চেয়ে বেশি গোল ব্যবধানে জিতলে জার্মানি জার্মানির পরের পর্ব নিশ্চিত হবে।

জার্মানি আর সুইডেন নিজেদের ম্যাচে ড্র করলে বেশি গোল করা দল দ্বিতীয় হবে পরের পর্বে উঠবে। গোল করার হিসেব সমান হলে জার্মানি পরের পর্বে যাবে কারণ তারা সুইডেনকে হারিয়েছে।

সুইডেন তাদের ম্যাচে হারলে জার্মানিকে হারিয়ে পরের পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে দক্ষিণ কোরিয়ারও। তবে সেক্ষেত্রে তাদের সুইডেন ও জার্মানির চেয়ে বেশী গোল ব্যবধান নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রুপ জি
ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম এরই মধ্যে পরের পর্ব নিশ্চিত করেছে। তবে দুই দলেরই গোল ব্যবধান ও গোল করার হিসেব সমান।
ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের ম্যাচ ড্র হলে গ্রুপসেরা নির্ধারিত হবে কার্ডের হিসেবে। ইংল্যান্ডের হলুদ কার্ড দুটি ও বেলজিয়ামের তিনটি।
কার্ডের হিসেবেও দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে ড্র'য়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে গ্রুপের র‍্যাঙ্কিং।

গ্রুপ এইচ
পোল্যান্ড ও কলম্বিয়ার সাথে নিজেদের শেষ ম্যাচে ড্র করলেই পরের পর্ব নিশ্চিত হবে জাপান আর কলম্বিয়ার।
সেনেগালকে হারালে পরের পর্ব নিশ্চিত হবে কলম্বিয়ার। কলম্বিয়া জিতলে পোল্যান্ডের সাথে ম্যাচ হেরেও পরের পর্বে যেতে পারবে জাপান, তবে সেক্ষেত্রে সেনেগালের চেয়ে কম গোল ব্যবধানে হারতে হবে তাদের। আর জাপান হারলে গোল ব্যবধানের হিসেবে ড্র করেও পরের রাউন্ড নিশ্চিত করার সুযোগ থাকবে কলম্বিয়ার সামনে।

 

আরো পড়ুন : দুর্দান্ত আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে

শেষ বাঁশি বাজার পর টিভি ক্যামেরা ধরা হলো ভিআইপি গ্যালারিতে, সেখানে ডিয়াগো ম্যারাডোনা বারবার উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ছিলেন তার উত্তরসূরীদের উদ্দেশ্যে। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল-কতটা প্রত্যাশীত ছিলো এই জয়। নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে মেসিরা দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা পাবে ইউরোপীয় জায়ান্ট ফ্রান্সের।
ডু অর ডাই ম্যাচ। এমন ম্যাচে যেন ভক্তদের স্নায়ুর পরীক্ষা নেয়ার পণ করে মাঠে নেমেছিলো মেসি বাহিনী। নইলে এমন দাপুটে ম্যাচ খেলেও কেন ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা জয়সূচক গোলের। অবশেষে মার্কোস রোহ এলেন ত্রাতা হয়ে। স্বস্ত্বি নামলো আর্জেন্টাই শিবিরে।

সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘অস্তিত্ব’ রক্ষার ম্যাচটিতে যেন শতভাগ উজাড় করে দেয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে খেলতেই মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। খেলার শুরু থেকেই দেখা মিলেছে আজ অন্য এক আর্জেন্টিনার, সাথে অন্য এক মেসির। যে মেসি অপ্রতিরোধ্য, যে প্রতি মূহুর্তে হানা দিয়ে পাগলপারা করে রাখে প্রতিপক্ষকে। রাশিয়ায় আজ তেমনই রূপে আবির্ভূত হয়েছে মেসি এন্ড কোং। শুধু মেসি নয়, দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের খেলায় ছিলো শতভাগ উজাড় করে দেয়ার প্রচেষ্টা, আগের দুই ম্যাচে যে আর্জেন্টিনা ছিলো নিজেদের ছায়া হয়ে, তারাই এদিন ফিরল স্বরূপে।

নাইজেরিয়ার এক খেলোয়াড়ের সাথে ধাক্কা লেগে চোখের কোনা বেয়ে দরদর করে রক্ত ধরছে হাভিয়ের ম্যাচেরানোর; কিন্তু সেসব খেয়াল করারই যেন সময় পাননি। প্রাথমিক চিকিৎসা টুকু নেয়ার কথাও যেন মনে আসেনি এই বর্ষীয়ান মিডফিল্ডারের। ম্যাচেরানো উদাহরণ মাত্র। আজ প্রতিটি আর্জেন্টাইন যেন হয়ে গেছেন ম্যাচেরানো। ফলটাও পেয়েছে হাতেনাতে।

১৪ মিনিটে মাঝমাঠের নিচ থেকে এবার বানেগার লম্বা পাস সরাসরি নাইজেরিয়ার বক্সের মাথায়। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন লিওনেল মেসি। উড়ে আসা বল উরু দিয়ে রিসিভ করে মাটিতে পড়ার আগে পায়ের খোঁচায় সামনে ঠেলে দেন। এরপর বলের পিছন পিছন দৌড়। পেছন থেকে তার নাগাল পাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত এক নাইজেরীয় ডিফেন্ডার, কিন্তু আজকের দিনটি হয়তো মেসির। তাই তার পক্ষে সম্ভব হলো না। দুই তিন পা দৌড়ে ছোট ডি-বক্সের মধ্যে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল।

ম্যাসির এই জাদুকরী গোলে শুরুতেই এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। তবে এর আগে পরেও কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিলো আর্জেন্টিনা। বারবার মেসি, ডি মারিয়ারা হানা দিয়েছেন নাইজেরিয়ার পোস্টে। বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক সুযোগও তৈরি করেছিলো। যদিও সেগুলো কাজে লাগেনি। তবে প্রথমার্ধের বেশির ভাগ সময়ই মেসিদের ঠেকাতেই কেটেছে নাইজেরিয়া। ২৯ মিনিটে মেসির ডিফেন্স চেড়া এক পাস দৌড়ে নাগাল পাননি হিগুইন। নইলে তখনই ব্যবধানে বেড়ে যেত। ৩২ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে একা বল নিয়ে ডি মারিয়া ছুটে গোলের দিকে যাওয়ার সময় বক্সের সামান্য বাইরে ফাউল করে লিওন বালুগুন। ফ্রি-কিক পায় মেসিরা। মেসির বাম পায়ের ফ্রি-কিক সাইডবারে লেগে আরেকবার গোলবঞ্চিত আর্জেন্টিনা। এর পরের সময়টুকু শুধুই আর্জেন্টিনার।

তবে নাইজেরিয়াও দু’একবার বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলো। ১৩ মিনিটে ম্যাচেরানোর ভুলে একটি বিপজ্জনক সুযোগ তারাও তৈরি করেছিলো। কিন্তু আহমদ মুসা পোস্টে শট নেয়ার আগে ম্যাচেরানোই শেষ পর্যন্ত বল ক্লিয়ার করে বাঁচিয়েছেন দলকে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গেছে মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পাল্টে যায় খেলার সমীকরণ। নাইজেরিয়ার একটি আক্রমণের সময় ম্যাচেরানো ফাউল করেন লিওন বালুগোনকে। ৫১ মিনিটে সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন ভিক্টর মোজেস। গোল খেয়ে যেন খেলার ছন্দ হারিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা। অন্তত পরবর্তী ১০ মিনিট তারা খুব একটা বলের দখন পায়নি। তবে ৬০ মিনিটের পর থেকে আবার নিজেদের গুছিয়ে নেয় তারা। আবার শুরু হয় আক্রমণের ধারা। ৭০ মিনিটে মেসি আরেকবার বল নিয়ে বক্সে ঢুকেও শট নিতে পারেননি।৮০ মিনিটে মেজার ক্রস থেকে পাওয়া বল বারের উপর দিয়ে মারেন হিগুইন। তবে ৮৬ মিনিটে আর ভুল করেননি মার্কোস রোহো। ডান প্রান্ত থেকে মারকাদো ক্রস ফেলেন বক্সের মধ্যে। অনেকটা দৌড়ে এসে উড়ন্ত বলে ভলি শট নেন রোহ..... গোল! পরের কয়েকটা মিনিট আর লিড ধরে রাখতে সমস্যা হয়নি মেসি বাহিনীর।

তবে জয়সূচক গোল করার আগে কয়েকটি আক্রমণ করেছিলো নাইজেরিয়া। ৮২ মিনিটে খুব কাছ থেকে ইগালোর শট আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের হাঁটুতে লেগে রক্ষা। ইনজুরি সময়েও আরেটি বিপজ্জনক আক্রমণ ছিলো আফ্রিকার দলটির। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হলো প্রথম রাউন্ডেই।

আর্জেন্টিনা পৌছে গেল দ্বিতীয় রাউন্ডে। গ্রুপের অপর ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে আইসল্যান্ড ২-১ গোলে হেরে যাওয়ায় মেসিরা ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement