১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেসিকে আটকাতে নাইজেরিয়ার বিশেষ পরিকল্পনা

মেসি, বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা
২০১৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিল লিওনেল মেসি - সংগৃহীত

১৩ বছর আগের হিসাব মেলাতে চান নাইজেরিয়ার অধিনায়ক জন ওবি মিকেল। ২০০৫ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। গোটা টুর্নামেন্টে ভালো খেলে দলকে ফাইনালে তোলার পর নাইজেরিয়ার মাইকেলরই নাকি গোল্ডেন বল পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল। কিন্তু ফাইনালে পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল করে হিসাব উল্টে দিয়েছিলেন মেসি। গোল্ডেন বল জিতে নিয়েছিলেন লিও। এখনও সেই আক্ষেপ মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন ওবি মিকেল।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে নাইজেরিয়ার অধিনায়ক স্মৃতিচারণা করেন, 'সবাই বলছিলেন আমিই টুর্নামেন্টের সেরা হিসাবে গোল্ডেন বল জিতব। কিন্তু ফাইনালে মেসি পেনাল্টি থেকে জোড়া করে করে। আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে আমাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। মেসি পায় গোল্ডেন বল। রুপোর বল নিয়েই আমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এবার সেটা হবে না। মেসিকে এত সহজে আমরা গোল করতে দেবো না।'

তিনি আরো বলেন, 'গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে আমাদের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সুযোগ রয়েছে। দুটি ম্যাচ খেলে আমরা পেয়েছিল ৩ পয়েন্ট। সেখানে মেসিদের ঝুলিতে মাত্র ১ পয়েন্ট। ক্রোয়েশিয়া যেরকম খেলছে তাতে আমরা আশা করছি না আইসল্যান্ড জিতবে বলে। তাই আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ড্র করলেই আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যাব। এই আর্জেন্টিনাকে হারানো জন্যই আমরা কাল (মঙ্গলবার) ঝাঁপিয়ে পড়ব।’

উল্লেখ্য, মিকেলের হাতে গুরুতর চোট রয়েছে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে তার খেলা তাই অনিশ্চিত। রেফারি যদি তাকে হাতে প্লাস্টার লাগিয়ে খেলার অনুমতি দেন, তাহলে মাইকেল ওবি মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে বিশ্বকাপে পাঁচবার মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া। কিন্তু গত চারবারের সাক্ষাতে আর্জেন্টিনাই শেষ হাসি হেসেছে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ক্লদিয়া ক্যানেজিয়ার জোড়া গোলে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে হারিয়েছিল নাইজেরিয়াকে। ২০০২ ও ২০১০ সালে নাইজেরিয়া ০-১ ব্যবধানে হেরেছিল আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। দুটি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ও গ্যাব্রিয়েল হেইনজ। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফের ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে। জোড়া গোল করেছিলেন মেসি।

সেই প্রসঙ্গ টেনে নাইজেরিয়ার অধিনায়ক ওবি মিকেল বলেছেন, ‘মেসি মেসিই। তবে ও ঈশ্বর নয়। রক্ত মাংসের মানুষ। এটা ঠিক, ও ম্যাচের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ব্রাজিলে ও একাই আমাদের বিরুদ্ধে দুটি গোল করে দলকে জিতিয়েছিল। তবে মেসি না থাকলে আর্জেন্টিনা অতিসাধারণ একটা দল। তবে মেসিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না। তাতে চাপ বাড়বে আমাদের ওপর। মেসিকে থামাতে হবে। ওর জন্য আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে ওকে কড়া মার্কিংয়ে রাখতে হবে। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা ভালো ফুটবল খেলেছি। আহমেদ মুসা জোড়া গোল করেছিল। দল ছন্দে আছে। মেসিকে আটকে ম্যাচটা জেতাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

 

আরো পড়ুন : নাইজেরিয়া সব সময়ই আর্জেন্টিনার চ্যালেঞ্জ

রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে

বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার পিছু ছাড়ছে না নাইজেরিয়া। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবারই তাদের সাথে সাক্ষাৎ ম্যারাডোনা-মেসির দেশের। আর সব সময়ই আর্জেন্টিনাকে জিততে হয়েছে ঘাম ঝরিয়ে। এবার তাদের পঞ্চম বারের মতো দেখা হচ্ছে বিশ্বকাপে। আফ্রিকান দেশটি অবশ্য কখনই জিততে পারেনি তাদের বিপক্ষে। অন্য দিকে এই প্রথম দেশ দু’টি গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়ছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য। এ খেলায় জয়ের বিকল্প নেই মেসি বাহিনীর। অন্য দিকে ড্রতেও নক আউট পর্বের ছাড়পত্র মিলতে পারে নাইজেরীয়দের। মোটকথা এই দুই দলের পরের রাউন্ডে যাওয়া নির্ভর করছে আইসল্যান্ডের ওপর। আজ অন্য খেলায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পয়েন্ট খোয়াতে হবে আইসল্যান্ডকে।

১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিশ্বকাপে দেখা আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার। স্যাসমন সিয়াসিয়ার গোলে প্রথমে লিডও নিয়ে নেয় নাইজেরিয়া। পরে ম্যারাডোনার-আলফিও বাসিলের দলের রক্ষা ক্লাওডিও ক্যানেজিয়ার জোড়া গোলে। ওই হার সত্ত্বেও নাইজেরিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল। আর্জেন্টিনার বিদায় দ্বিতীয় রাউন্ডে রুমানিয়ার কাছে হেরে। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অবশ্য তাদের মোকাবেলা হয়নি।

তবে ২০০২ সালে ফের দেখা লাতিন ও আফ্রিকান এই দুই দেশের। জাপান-কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত সে প্রতিযোগিতায় বহু কষ্টে ১-০ গোলে জিততে হয়েছিল মার্সেলো বিয়েলসার দলকে। কর্নার থেকে আসা বলে হেড নেন স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল বাতিুস্তুতা। তাতে বোকা বনে যান নাইজেরিয়ান কিপার ও ডিফেন্ডাররা। পরে নাইজেরিয়ানরা চেষ্টা করেও সমতা আনতে পারেননি। অবশ্য এ জয়ের পরও আর্জেন্টিনার পক্ষে পরের রাউন্ডে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ইংল্যান্ডের কাছে হার ও সুইডেনের সাথে ড্র করে বিদায় গ্রুপ পর্ব থেকে। একই পথে হাঁটে নাইজেরিয়াও।

২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে স্বয়ংসম্পূর্ণ আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ। লায়নেল মেসি, কার্লোস তেভেজ ও গঞ্জালো হিগুয়েন। এই তিন ফরোয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও কোচ ম্যারাডোনার দলকে জিততে হয়েছিল ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জের হেডে। তা কর্নার থেকে আসা বলে। অবশ্য মেসির বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কোনোটি রুখে দেন গোলরক্ষক। কোনোটি প্রতিহত হয় পোস্টে। অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস হওয়া শটও ছিল কয়েকটি। নাইজেরিয়া শেষ পর্যন্ত প্রথম রাউন্ড খেলে বাড়ি ফিরলেও দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল।

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে আহমেদ মুসার দাপটে তো তটস্থ ছিল আর্জেন্টিনা। ২ গোল করেন আহমেদ মুসা। আলেসান্দ্রে সাবেলার দল অবশ্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসির জোড়া ও মার্কোস রোহোর গোলে। ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে নাইজেরিয়ানদের বিপক্ষ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে। আজ কি সেই ধারা অব্যাহত থাকবে নাকি এই পুরনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পাবে মুসা-মোসেজের দল।
১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক গেমসে নাইজেরিয়া ফাইনালে এ আর্জেন্টিনাকে ৩-২ গোলে হারিয়ে স্বর্ণ নিশ্চিত করে। অবশ্য ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে ডি মারিয়ার গোলে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণ ধরে রাখে আর্জেন্টিনা।


আরো সংবাদ



premium cement