২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ম্যারাডোনা জিতেছে বিশ্বকাপ আমিতো কিছুই পাইনি : লুকাকু

রোমেলু লুকাকু - ছবি : সংগ্রহ

কার সাথে তুলনা চলবে রোমেলু লুকাকুর? বেলজিয়ামের এই তারকা টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল করে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে। তার মতোই এবারের বিশ্বকাপে চার গোল পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। এই অর্জনের চেয়েও এখন আরো বড় কৃতিত্বের মালিক লুকাকু। আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনার পরই তিনি বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে দু’টি করে গোল করেছেন।

ম্যারাডোনার ওই অর্জন ছিল ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ও সেমিফাইনলে লুকাকুরই দেশ বেলজিয়ামের বিপক্ষে। এবার লকাকু সেই কৃতিত্বে ভাগ বসালেন প্রথম ম্যাচে পানামা ও তিউনিসিয়ার বিপক্ষে মোটি চার গোল করে।। রোনালদোর সাথে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড় প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন লুকাকু। তবে ম্যারাডোনা পরই টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল প্রসঙ্গে বললেন, ম্যারাডোনা সর্বকালের সেরা একজন ফুটবলার। তিনি তো বিশ্বকাপ জিতেছেন; কিন্তু আমিতো কিছুই পাইনি।

ম্যাচ শেষে এই ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ডের প্রতি মিক্সড জোনে বেশী আগ্রহ বেলজিয়ামের সাংবাদিকদের মতো ইংলিশ মিডিয়া কর্মীদেরই। কারণ তিনি যে ম্যানইউ তারকা। আর পরের ম্যাচেই দেখা হবে ইংল্যান্ডের সাথে বেলজিয়ামের। যেখানে ফয়সালা হবে ‘জি’ গ্রুপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের। তবে ২৮ জুন কালিনিনগ্রাদের ওই ম্যাচে লুকাকুর খেলা নিয়ে সংশয় আছে। ম্যাচ শেষে জানান, ‘আমি আমার পায়ের ইনজুরি নিয়ে বেশ চিন্তিত। জানি না সে ম্যাচে খেলা হবে কিনা। তবে সে খেলায় দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি।’ একই সাথে নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।

ম্যারাডোনার মতোই গোল করা নিয়ে আরো জানান, আমি এখন রেকর্ড নিয়ে ভাবছি না। আমার মাথায় শুধুই বর্তমান দল। আমাদের আরো উন্নতি করতে হবে। তবে প্রথম ম্যাচের তুলানায় ভালো করেছি তিউনিসিয়ার বিপক্ষে। দুই জয়ে আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হলো। ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা এখন চাপ মুক্ত হয়ে খেলতে পারবো। অবশ্য গ্রুপের শেষ ম্যাচটা হবে অন্য যে কোনো ম্যাচের মতোই। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকতে জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’

বেলজিয়ামকে কেউই শিরোপার জন্য ফেবারিট ভাবেনি। কিন্তু দুই ম্যাচে ৭ গোল দিয়ে তারা এখন ৭০ শতাংশ বিশ্ব জয়ের দাবীদার।এই বিষয়ে দলের ডিফেন্ডার আলদের উইরেল্ডের বক্তব্য, আমরা বেশ ভালো দল । ক্রমশ উন্নতি করছে টিম। সবাই সেরাটা দেয়ার চেষ্ট করছে। তবে আরো উন্নতি বাকী রয়েছে।

লকাকু ২০১০ সাল থেকে বেলজিয়াম জাতীয় দলে খেলেছেন। ৭১ ম্যাচে তার গোল ৪০টি। বেলজিয়াম জাতীয় দলে তার মতো এতো বেশী গোল কেউ করতে পারেনি। ইংরিশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি সেই পাঁচ ফুটবলারের একজন যারা ২৩ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই ৫০ গোল আদায় করেছেন। ম্যানইউ’র আগে তিনি চেলসি, এভারটন, এবং ওয়েস্টব্রমউইচের জার্সি গায়ে তোলেন। গত বিশ্বকাপে তার গোল ছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ২-১ এ জয় ছিল বেলজিয়ামের। কোর্য়টারে অবশ্য আর্জেন্টিনার কাছে হারে বিদায় নিয়েছিলো তারা।

আরো পড়ুন : সালাহকে নিয়ে রাজনীতি
ফুটবল মাঠে ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স ও বিনীত আচরণ মোহাম্মদ সালাহকে মুসলমানদের গর্বে পরিণত করেছে। এদিকে সালাহ’র ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নিজের যত কুকর্ম ও অপরাধ আছে তাতে স্বচ্ছতার প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করছেন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ। তিনি শুরু করেছেন সালাহকে নিয়ে রাজনীতি।
প্রথমে এই চেচনিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মিসর দলের অনুশীলনে গিয়ে সালাহকে সাথে নিয়ে আখমদ স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন। এরপর সালাহ’র হাত তুলে ধরে তার সাথে ছবি তুলেছেন। এখন এই ফুটবল স্টারকে দিয়েছেন চেচনিয়ার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব। গত শুক্রবারের ঘটনা এটি।

চলমান বিশ্বকাপে মিসর দলের বেস ক্যাম্প ছিল রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য চেচনিয়ার রজাধানী গ্রোজনিতে। আর এই সুযোগেই সালাহ’র ইমেজকে কাজে লাগিয়ে চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ বর্হিবিশ্বে নিজের অবস্থান উন্নত করার চেষ্ট করছেন। রমজান কাদিরভের বিপক্ষে তার দেশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তার মতাদর্শ বিরোদীদের কঠোর হস্তে দমন করা, গুম করে ফেলার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বহুবিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড তার নির্দেশে হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ। 
তাই এই লৌহ মানব বর্হিবিশ্বে ব্যাপক সমালোচিত এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য।

এদিকে চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে ছবি তুলে মোহাম্মদ সালাহও অনেকের অপ্রিয় হয়ে গেছেন। অনেকেই সালাহর সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে কাদিরভের সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য। আসলে সালাহ’র কী দোষ? একজন প্রেসিডেন্ট যদি তার সাথে দেখা করেন ও ছবি তুলতে চান তা হলে এড়িয়ে যাওয়ার তো উপায় থাকে না। তাছাড়া এই চেচনিয়ায় তো মিসর দল আতিথ্য গ্রহণ করেছে। গত শুক্রবার মিসর দলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট। তখনই সালাহকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণ দেন রমজান কাদিরভ। সাথে চেচনিয়ার ক্লাব এফসি আখমদ গ্রোজনি দলের জার্সী উপহার দেয়া হয় সালাহকে। রমজানের বাবার নামেই এই ক্লাব।

এবারের বিশ্বকাপে মেসি, রোনালদো, নেইমারের চেয়ে কম আলোচনায় ছিলেন না সালাহ। বিশেষ করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের স্প্যানিশ ফুটবলার সার্জিও রামোস কর্তৃক ফাউলের শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হওয়া ও পরবর্তীতে সালাহ’র বিশ্বকাপে খেলার অনিশ্চয়তা আরো ব্যাপক মাত্রায় আলোচনায় নিয়ে আসে তাকে। এই লিভারপুল তারকা শেষ পর্যন্ত সকল শঙ্কা কাটিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছেন মোহাম্মদ সালাহ। উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সাইডলাইনে বসে থাকলেও রাশিয়ার বিপক্ষে পুরোপুরি ফিট না হওয়া সত্ত্বেও খেলেছেন। গোলও করেছেন পেনাল্টি থেকে। এই একটি বিষয়ে তিনি লিওনেল মেসির চেয়ে এগিয়ে। এবারের বিশ্বকাপে মেসি এখনও গোলশূন্য। মিস করেছেন পেনাল্টি। অন্যদিকে সালাহ’র ভাণ্ডারে এক গোল। সোমবার সালাহর মিসরের শেষ ম্যাচ সৌদি আরবেব বিপক্ষে। ভলগোগ্রাদে অনুষ্ঠিতব্য এই্ ম্যাচটি দুই দলেরই নিয়ম রক্ষার। তবে সালাহ’র শেষ সুযোগ গোল করে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করা এবং দলকে জেতানো।

রাশিয়ার বিপক্ষে দুই দফা স্বাধীনতা যুদ্ধ করে চেচনিয়া। ১৯৯৩ সালে চেচনিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষনা করে রাশিয়া থেকে। এর ক্ষুদ্ধ রুশ বাহিনী চেচনিয়া আক্রমণ করলে ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। তাতে জয় হয় চেচেন মুসলিমদের । এরপর রুশবাহিনী ফের চেচনিয়া আক্রমণ করে ১৯৯৯ সালে। তখন এই রমজান কাদিরভের বাবা আখমদ কাদিরভ তার বাহিনী নিয়ে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়ে হাত মেলায় রুশদের সাথে। ফলে ২০০০ সালে পরাজয় হয় চেচনিয়ার যোদ্ধাদের। আখমাদ কাদিরভ হন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট। পরে স্বাধীনতাকামীদের স্টেডিয়ামে পেতে রাখা বোমায় নিহত হন আখমাদ। এরপর দেশের প্রেসিডেন্ট হন ছেলে রমজান। তখনই তিনি বিরোধীদের দমনে লঙ্ঘন করতে থাকেন মানবাধিকার। তাই সারা বিশ্বেই রয়েছে তার সমালোচনা। উল্লেখ্য ১৯১৭ সালে চেচনিয়া দখল করে সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তখন চেচেনদের শুরু করা স্বাধীনতা যুদ্ধ হারের মাধ্যমে শেষ হয় ১৯২১ সালে।


আরো সংবাদ



premium cement