২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শুধু নেইমার নন, এমন নাটক আরো অনেকেই করেছেন

নেইমার, বিশ্বকাপ
সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় নেইমারের পড়ে যাওয়ার নাটক - সংগৃহীত

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। এই ম্যাচে জয়ের ফলে শেষ ১৬'র দৌড়ে এগিয়ে আছে তারা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় নেইমারের পড়ে যাওয়ার নাটক।

ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে। কোস্টারিকার ডি বক্সে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় গঞ্জালেজের সাথে কোনো সংঘর্ষ না হওয়ার পরও মাটিতে পড়ে যান নেইমার, যেন বড় ধরণের কিছু একটা হয়েছে। রেফারিও বুঝতে পারেননি যে এটি ছিল নেইমারের অভিনয় মাত্র, ফলে বাঁশিও বাজান তিনি। কিন্তু কোস্টারিকার খেলোয়াড়দের তীব্র প্রতিবাদে ভিএআরের সহায়তা নেন রেফারি। আর রিপ্লেতে দেখা গেলো রীতিমত নাটক করেই পড়ে গেছেন নেইমার। তখন বাতিল হয়ে যায় পেনাল্টির সুযোগ। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে নেট দুনিয়ায়।

তবে এই ঘটনা এবারই প্রথম নয়। একমাত্র নেইমারই এমন কাণ্ড করেননি, এই তালিকায় আছে আরো অনেকে। জানুন-

ঈশ্বরের হাত : এই তালিকায় প্রথমই আছেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তার অসাধারণ পারফরমেন্সে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। তবে কোয়াটার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেয়া ম্যারাডোনার গোলটি ছিল বিতর্কিত। পেনাল্টি এরিয়ায় বাম হাতের ছোঁয়ায় গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা! 'গোলটি পরবর্তী সময়ে ‘ঈশ্বরের হাতে গোল’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

 

সুয়ারেজের নাটক : লুইস সুয়ারেজ। গত বিশ্বকাপে কামড়ের জন্য কুখ্যাত ছিলেন তিনি। তবে তার আগের বিশ্বকাপে ভিলেন হিসেবে পরিচিত ছিলেন উরুগুয়ের এই তারকা ফুটবলার। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে প্রায় পৌঁছেই গিয়েছিল ঘানা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঘানার স্ট্রাইকার আসামোয়া গিয়ানের সাথে চ্যালেঞ্জে সুয়ারেজের হাতে আঘাত পাওয়ার নাটকে পেনাল্টি পায় উরুগুয়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করে সেমিফাইনালে পৌছে উরুগুয়ে। পরে অবশ্য সুয়ারেজকে আঘাত পাওয়া হাতে জয়োল্লাস করতে দেখা যায়।

বল লেগেছিল হাটুতে, ব্যাথা মুখে : ২০০২ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রিভাল্ডোর কাণ্ড ধরা পড়েছিল রিপ্লেতে। তুরস্কের বিপক্ষে ম্যাচে স্ট্রাইকার হাকান উনসালকে তার কারণে লাল কার্ড দেখানো হয়। কী করেছিলেন তিনি? কিছুই না। পুরো নাটক করেছিলেন রিভাল্ডো। কর্নার কিক নিতে যাচ্ছিলেন রিভাল্ডো। বলটি কিক করে তার দিকে দিচ্ছিলেন উনসাল। তার ছোড়া বলে আঘাত পাওয়ার নাটক করেন রিভাল্ডো। মুখ চেপে পড়ে যান। সাথে সাথেই তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। পরে ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি আসলে লেগেছিল রিভাল্ডোর হাঁটুতে, মুখে নয়! এই ঘটনার জন্য জরিমানার মুখে পড়তে হয় রিভাল্ডোকে।

 

ক্লিন্সম্যানের ডাইভ : সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন পশ্চিম জার্মানির জার্গেন ক্লিন্সম্যান। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নাটক করেন তিনিও। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার পেদ্রো মোনজোনের সাথে চ্যালেঞ্জে শূন্যে লাফিয়ে উঠে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েন তিনি। তার এই নাটক এতোটাই সত্যি মনে হয়েছিল যে রেফারি সাথে সাথেই মোনজোনকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেন। বিশ্বকাপে সেইবার প্রথম কোনো ফাইনাল ম্যাচে লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল। পরে পেনাল্টি থেকে পাওয়া একমাত্র গোলে শিরোপা জিতে পশ্চিম র্জামানি।

রোনালদোর চোখের ইশারা : ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচ ৬২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ছিল। তখন রেফারি হোরাসিয়া ইলজোন্দোকে পটানোর চেষ্টা করেছিলেন রোনালদো। কেন করেছিলেন? তিনি রেফারিকে ওয়েন রুনিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পটিয়েছিলেন। কারণ এই ইংলিশ স্ট্রাইকার পর্তুগালের রিকার্দো কারভোলোর সামনেই দাড়িয়ে ছিলেন। এরপর রেফারি রুনিকে সরিয়েও দিয়েছিলেন। পরে রোনালদো চোখ মেরে কোচ লুইস স্কোলারিয়াকে সেটি বুঝিয়ে দেন। ওই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করে জয়লাভ করে পর্তুগাল। কিন্তু পরে টিভি ক্যামেরায় সে ঘটনা ধরা পড়লে সমালোচনার মুখে পড়েন রোনালদো।

- আল-জাজিরা

 

আরো পড়ুন : নেইমারের কান্না নিয়ে কেন এতো কথা হচ্ছে?

প্রথম ম্যাচে ড্র করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলের দারুণ জয় পেয়েছে ব্রাজিল। কোস্টারিকার সাথে শুক্রবার রাতে খেলায় দারুণ খেলেছেন বিশ্বের দামী খেলোয়াড় নেইমার। ইনজুরি টাইমে গোলও পেয়েছেন।

কুতিনহো আর নেইমারের গোলে কোস্টারিকা তখন পরাস্ত ২-০ গোলে। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কমই। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর পরিবর্তে বরং আলোচনা হচ্ছে তার পড়ে যাওয়া, নাটক করা কিংবা শেষ বাঁশির পর কান্নার ঘটনাগুলো।

কিন্তু এটি সত্যি পছন্দ করুন বা অপছন্দ করুন, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই খেলোয়াড়টিই এখন মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু।

ইনজুরি টাইমের কৌশল

ডগলাস কোস্তার ক্রস থেকে ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার কিন্তু ম্যাচের তখন ৯৭ মিনিট।

এ নিয়ে দেশের পক্ষে ৮৭ ম্যাচে ৫৬ গোল করেছেন তিনি। এখন পেলে আর রোনালদোই রয়েছেন কেবল তার সামনে।

কিন্তু তারপরেও বিবিসি স্পোর্টস দেখেছেন যারা তাদের বিবেচনায় নেইমারই কম রেটেড খেলোয়াড়।

সম্ভবত এর কারণ আগের ঘটনাগুলো।

কি সেই ঘটনাগুলো?

ম্যাচের তখন ৭৮ মিনিট। কোস্টারিকার ডি বক্সে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় গঞ্জালেজের সাথে তার কোনো সংঘর্ষ হয়নি, কিন্তু নেইমার এমনভাবে পড়ে গেলেন যে মনে হলো বিরাট কিছু একটা হয়েছে।

রেফারিও বুঝতে পারেননি যে, এটি ছিলো নেইমারের অভিনয় মাত্র, ফলে বাঁশিও বাজালেন তিনি।

কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ আসলো কোস্টারিকার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। ফলে ভিএআরের সহায়তা নিলেন রেফারি।

আর রিপ্লেতে দেখা গেলো রীতিমত নাটক করেই পড়ে গেছেন নেইমার, বাতিল হয়ে গেলো পেনাল্টির সুযোগ।

এ নিয়ে মুহূর্তেই ইন্টারনেট দুনিয়া সরগরম হয়ে ওঠে।

আর খেলার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো ছয় মিনিট কিন্তু নেইমার তার গোল করলেন ৯৭ তম মিনিটে। কস্তার পাস থেকে বল পেয়ে কোস্টারিকার গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেন তিনি।

প্রকাশ্যে আবেগের প্রদর্শনী

খেলা শেষের বাঁশি বাজালেন রেফারি। ব্রাজিল জিতেছে ২-০ গোলে। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও সমর্থক সবাই উল্লাস করছে।

ঠিক সেই সময় নেইমারকে পাওয়া গেলো ভিন্ন দৃশ্যে। হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছেন তিনি।

অথচ এটি বিশ্বকাপের ফাইনাল নয়, ছিলো মাত্র গ্রুপ পর্যায়ের খেলা।

পরে অবশ্য ইন্সটগ্রামে ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, "কান্না ছিলো আনন্দের ও জয় পাওয়ার কারণে।"


আরো সংবাদ



premium cement

সকল