২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সব আলো কেড়ে নিলেন জারদান শাকিরি

শাকিরি, সুইজারল্যান্ড, বিশ্বকাপ,
জারদান শাকিরি - সংগৃহীত

রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন নজর কাড়ছেন নতুন তারকারা। জয়ের জন্য মরিয়া এই তরুণরা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর সুযোগ পেলেই সেটি কাজে লাগাচ্ছেন। শুক্রবার সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন জারদান শাকিরি। দুর্দান্ত গোলে দলকে শেষ মুহূর্তে জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন এই তরুণ। এর আগে দলের প্রথম গোলটিও অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। ফলে জয়ের নায়ক ছিলেন এসি মিলানের এই তারকা।

সার্বিয়াকে কাল ২-১ গোলে হারায় সুইজারল্যান্ড। এই জয়ে শেষ ষোলোতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখলো সুইসরা। হারলেও শেষ ষোলোতে যাওয়া পথ বন্ধ হয়ে যায়নি সার্বিয়ারও। কারণ দুই খেলায় তিন পয়েন্ট রয়েছে তাদের। সমানসংখ্যক ম্যাচে চার করে পয়েন্ট ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ডের। তাই এই গ্রুপ থেকে ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড ও সার্বিয়ার শেষ ষোলোতে যাওয়ার পথ খোলা থাকলো এখনো।

এই গ্রুপের প্রথম মাচে কোস্টা রিকাকে ১-০ গোলে হারায় সার্বিয়া। ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ডের অন্য ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। তাই সুইজারল্যান্ডকে হারালেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে যেত সার্বিয়ার। এমন লক্ষ্যে কালিনিনগ্রাদে ম্যচের শুরুটা চমৎকার করে সার্বিয়া।

ম্যাচের ৫ মিনিটেই মিডফিল্ডার দুসান টেডিচের ক্রস থেকে দুর্দান্ত এক হেডে গোল করে ১-০ ব্যবধানে সার্বিয়াকে এগিয়ে দেন স্ট্রাইকার আলেক্সান্ডার মিট্রোভিচ। ফলে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় সুইজারল্যান্ড।

চাপে পড়লেও ভেঙ্গে পড়েনি সুইজারল্যান্ড। প্রতিপক্ষের সীমানায় ঠিকই আক্রমণ চালিয়েছে তারা। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে তিনজন খেলোয়াড়কে রেখে সেখান থেকে আক্রমণ রচনা করার চেষ্টা করে সুইসরা। যেটি করেছিলো সার্বিয়াও। দুই দলই এ ম্যাচে ৪-২-৩-১ ফরম্যাটে খেলতে নামে।

৬৯ শতাংশ বল দখলে নিয়ে আক্রমণ করলেও প্রথমার্ধে সফল হতে পারেনি সুইজারল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের দেখা পায় তারা। ৫২ মিনিটে সার্বিয়ান ডি বক্সের প্রায় ২০ গজ দূর থেকে তীব্র শট গোল করেন সুইজারল্যান্ডের গ্রানিট ঝাকা। তাকে পাস দিয়েছিলেন শাকিরি।

১-১ সমতা আসার পরও গোলের জন্য মরিয়া ছিলো সুইজারল্যান্ড। লিড নিয়ে তা ধরে রাখতে না পারার আফসোস ছিল সার্বিয়ারও। এমন অবস্থায় চলতে থাকে দুই দলের আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। নিশ্চিত ড্র’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ম্যাচটি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ মিনিটে চমক দেখায় সুইজারল্যান্ড।

মধ্য মাঠে থেকে স্ট্রাইকার মারিও গাভরানোভিচের লং পাস দেন শাকিরিকে। বল পেয়ে সার্বিয়ার গোল মুখে ছুটে যান তিনি। তার শরীর ঘেষেই দৌড়াচ্ছিলেন সার্বিয়ার ডাস্কো টোসিচ। কিন্তু বলকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সার্বিয়ার গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল আদায় করে নেন শাকিরি। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবধানেই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে সুইজারল্যান্ড।

আগামী ২৭ জুন মস্কোকে সার্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। একই দিন নিজনি নভগোরোদে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে লড়বে কোস্টরিকা।

 

আরো পড়ুন : বিবর্ণ মেসি-সালাহ, মাঠ দাপাচ্ছেন নতুন তারকারা

অঘটন কড়া নাড়ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের দুয়ারে। গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে ইতোমধ্যেই বড় চমক দিয়েছে মেক্সিকো। মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। সুইজারল্যান্ডের কাছে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আটকে গেছে ব্রাজিল। তিকি-তাকার ঝাঁঝ এখনও পাওয়া যায়নি স্পেনের খেলায়। এক কথায় বিশ্বকাপের বড় দলগুলো রীতিমতো নাকানিচুবানি খাচ্ছে তথাকথিত অনামী ও প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা দলগুলোর কাছে। এই তালিকায় কিছুটা ব্যাতিক্রমী ক্রিশ্চিয়ানো রোনারদো। ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জোরে দুই ম্যাচে চার গোল করে গোল্ডেন বুট দখলের লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন সি আর সেভেন। তবে টিম হিসাবে পর্তুগালের পারফরম্যান্স মোটেই পাতে দেয়ার মতো নয়।

তারকারা সব সময় বড় মঞ্চে জ্বলে উঠতে পছন্দ করেন। লিভারপুলের হয়ে সাড়া জাগানো মোহাম্মদ সালাহকে ঘিরে মিসরবাসী স্বপ্ন দেখেছিল রাশিয়া বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে ওঠার। কিন্তু সালাহ চোটের কারণে প্রায় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে বসেছিলেন। কিন্তু সব আশঙ্কা দূরে সরিয়ে তিনি গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে দেশের জার্সি গায়ে নামেন। গোলও করেন। তবে দলকে জেতাতে পারেননি। পর পর দুটি ম্যাচ হেরে মিসর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে। আপাতত বিদায়ী ম্যাচে সালাহর পায়ের জাদু দেখার প্রত্যাশায় ফুটবলপ্রেমীরা।

স্প্যানিশ লিগের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দ্বৈরথ বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রীভূত হয়েছে মেসি-রোনালদোর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের প্রদর্শনীতে। পেন্ডুলামের মতো মেসি-নেইমারের পারফরম্যান্স মিটার ওঠা নামা করে ক্লাবের জার্সিতে। রাশিয়া বিশ্বকাপের পুরো ফোকাসটাই ছিল মেসি-রোনালদোর ওপর। সেদিক থেকে দেখলে বিশ্বকাপের মঞ্চে মেসির থেকে কয়েক আলোক বর্ষ দূরে এখন এগিয়ে গিয়েছেন রোনালদো। তবে খাদের কিনারা থেকে কীভাবে ফিরে আসতে হয় সেটা মেসি ভালোই জানেন। বিশ্বকাপে খেলাটাই যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তখন শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন লিও। তিনিই মূলত আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিলেন। তাই দুই ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা মাত্র এক পয়েন্ট পেলেও গ্রুপের শেষ লড়াইয়ে নাইজেরিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে মেসিদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে। আর সেই জাদু একমাত্র মেসিই দেখাতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন আর্জেন্তিনীয় সমর্থকরা। তবে এই আর্জেন্টিনার পক্ষে বিশ্বকাপ জেতা যে কঠিন, সেটা কিন্তু এক কথায় প্রায় সব ফুটবল পণ্ডিতই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিয়েছেন।

১৯৫৮ সালের পর থেকে ইউরোপের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি লাতিন আমেরিকার দেশ। তিতের নেতৃত্বে ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে যে দর্শনীয় ফুটবল খেলেছিল, তা দেখার পর অনেকেই বলেছিলেন, এই ব্রাজিল আবার বিশ্বকাপ জিততে পারে। কিন্তু গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সুইস-গেটে আটকে গিয়েছিলেন সেলেকাওদের সব আক্রমণ। নেইমার জুনিয়র যখনই বল ধরেছেন, তখনই তাকে কড়া ট্যাকলে ভূপতিত করেছেন সুইস ডিফেন্ডাররা। বার দশেক কড়া ট্যাকলে নেইমারের পায়ের চেটো ফুলে গিয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো কোস্টারিকার বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না। তবে নেইমার প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন কোস্টারিকার বিরুদ্ধে। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে তিনি একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন বিপক্ষ দলের বক্সে। অতিরিক্ত সময়ে একটিও গোল করেছেন। তবে ঘরের মাঠে চার বছর আগে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলে হারের লজ্জা ঘোচাতে মরিয়া নেইমাররা। সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডো বলেছেন, ‘গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে যেতে পারলে এই ব্রাজিলকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।’

শনিবারই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে জার্মানির বিশ্বকাপ ভাগ্য। সুইডেনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে যদি জোয়কিম লো’র ছেলেরা হেরে যায়, তাহলে দেশে ফেরার টিকিট কাটতে হবে মুলারদের। বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছেন, ইস্পাত কঠিন মানসিকতাই জার্মান ফুটবলারদের মূল সম্পদ। তবে জোয়াকিম লো’র কোচিংয়ে জার্মানি বিগত কয়েক বছরে যে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলেছে, তার মধ্যে অনেকেই ব্রাজিলের ‘জোগো বোনিতো’ কিংবা স্পেনের ‘তিকি-তাকা’ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে জার্মান দলে ধীরে ধীরে ট্রানজিশন পর্ব চলেছে। নয়জন পুরানো ফুটবলারের সাথে নবাগতদের নিয়ে বিশ্বকাপের দল সাজিয়েছেন লো। ম্যান সিটির লেরয় সানের মতো তারকাকে ছেঁটে ফেলা যে কতটা ভুল সেটা নিশ্চয়ই বুঝছেন জার্মান কোচ। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানি ছিটকে গেলে এক ঝটকায় জোগিলোর সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে।

বিশ্বকাপ বরাবর তারকার জন্ম দেয়। ১৫ জুলাইয়ের পর জানা যাবে রাশিয়া বিশ্বকাপের তারকা কে হলেন? তবে যারা স্টারডম স্ট্যাটাস নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

সেদিক থেকে কিছুটা ব্যাতিক্রমী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেন, স্পেনের স্ট্রাইকার ডিয়েগো কস্তা, ক্রোয়েশিয়ার মিডিও লুকা মডরিচ, জার্মানির বিরুদ্ধে মেক্সিকোর একমাত্র গোলদাতা হারভিং লোজানো আর আয়োজক দেশ রাশিয়ার তারকা ডেনিস চেরিশেভ।


আরো সংবাদ



premium cement