২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নেইমারকে ছাপিয়ে আরেকজন

দুই ম্যাচেই ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা ফিলিপে কুতিনহো - ছবি : সংগ্রহ

নেইমার সবচেয়ে বড় তারকা এই দলের; রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে দুনিয়া তোলপাড় করেছেন কিছুদিন আগে। অনেকদিন ধরেই ব্রাজিল দলের ‘প্রাণভোমরা’ খেতাবটা জুড়ে দেয়া হচ্ছে তার নামের সাথে; কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে তাকে ছাপিয়ে গেলেন আরেকজন। অন্তত ব্রাজিলের প্রথম দুই ম্যাচ শেষে সেকথা বলাই যায়। তার নাম ফিলিপে কুতিনহো। ব্রাজিল দলের যে কারো চেয়েই পাদপ্রদীপের আলোয় এখন এই বার্সেলোনা তারকা।

দুই ম্যাচেই তার কাঁধে ভর করে বড় বাধা পার হয়েছে ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে ব্রাজিলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছেন। অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দল সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে কুতিনহোর গোলেই মানরক্ষা হয়েছে তিতের শীষ্যদের। আর দ্বিতীয় ম্যাচে শুক্রবার তো দলকে খাদের কিনার থেকেই উদ্ধার করেছেন এই বার্সেলোনা তারকা।

কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ম্যাচে শুরু থেকে দারুণ খেলেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না ব্রাজিল। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য এই ম্যাচটি ছিলো অনেকটা ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে দুই পয়েন্ট খোয়ানোর পর এই ম্যাচ জিততেই হতো তাদের। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য মরিয়া ব্রাজিল এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিলো এমন সমীকরণ নিয়ে; কিন্তু কাজের কাজটি হচ্ছিল না। নেইমার, জেসুস, উইলিয়ান, কুতিহোদের সমন্বয়ে গড়া তারকাসমৃদ্ধ আক্রমণভাগও সফলতা পাচ্ছিল না।
প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র ছিলো। এরপরই কপালে চিন্তার রেখা স্পষ্ট হয় ব্রাজিল কোচের। দর্শক, সমর্থকদেরও উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে অলআউট আক্রমণে যায় ব্রাজিল; কিন্তু সফলতার দেখা নেই। ধীরে ধীরে সময় গড়াতে থাকে। সত্তুর, আশি হয়ে ম্যাচের সময় গিয়ে দাড়ায় নব্বই মিনিটে; কিন্তু ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা হিসেবে কেউ আবির্ভূত হতে পারছিলেন না।

ছয় মিনিটের ইনজুরি টাইমের সঙ্কেত দেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিলের ছয় সাত জন খেলোয়াড় ঢুকে পড়েন কোস্টারিকার ডি-বস্কে। একানব্বইতম মিনিটে মার্সেলোর ক্রস আসে ফিরিমিনোর কাছে। তাঁর কাছ থেকে বল যায় জেসুসের পায়ে। শেষ পর্যন্ত জাদুর ছোঁয়াটা দিলেন ফিলিপে কুতিনহো। অবশেষে স্বস্তি ফিরে ব্রাজিল শিবিরে। আগের ম্যাচের মতোই আবারো দলকে উদ্ধার করলেন তিনি।
দুটো ম্যাচেই তার খেলার ধরণ নজর কেড়েছে দর্শকদের। বারবার বিপজ্জনকভাবে বল নিয়ে প্রবেশ করেছেন প্রতিপক্ষে রক্ষণভাগে। বেশ কিছু শট গেছে গোলপোস্টের আশপাশ দিয়ে। শুক্রবারের ম্যাচে অবশ্য কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস কয়েকবার নিরাস করেছেন কুতিনহোকে।

ম্যাচ রিপোর্ট : ইনজুরি টাইমের গোলে ব্রাজিলের জয়

কাগজে কলমে ব্রাজিল আর কোস্টারিকার ব্যবধান অনেক। মাঠের খেলায় ব্রাজিলের পায়ে যখন ৬৯শতাংশ সময় বল ছিল তখনও ব্যবধানটা স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু ফুটবল গোলের গেলা। মাঠে যত নৈপুন্য আর কৌশলই থাকুক গোল না হলে সবই বৃথা। আজকের খেলায় নেইমারদের ভাগ্য সে রকমই ছিল কিন্তু ইনজুরি টাইমে এসে হিসাব পাল্টে গেছে। ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানরা। এই জয়ের ফলে ‘ই’ গ্রুপে দুই খেলার পর ব্রাজিলের পয়েন্ট দাড়িয়েছে ৪। যা নকআউট পর্বের পথে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিয়েছে অনেক খানি। ব্রাজিলের জন্য আরেকটি সুখবর হলো খেলার একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে গোল পেয়েছেন নেইমারও।

খেলার শুরু থেকেই একের পর এক সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। ভাঙছিল না কোস্টা রিকার রক্ষণ আর গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের বাধা। শেষ পর্যন্ত যোগ করা সময়ে ফিলিপে কুতিনিহো আর নেইমারের গোলে জয় তুলে নিয়েছে ব্রাজিল। ত্রয়োদশ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার খুব সহজ সুযোগ নষ্ট হয় কোস্টা রিকার। ডান দিক থেকে ক্রিস্তিয়ান গামবোয়ার কাটব্যাকে ডি-বক্স থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ফাঁকায় থাকা সেলসো বোর্হেস।

ব্রাজিলের প্রথম সুযোগটা পান নেইমার ২৭তম মিনিটে। ডি-বক্সে বল পেয়ে পিএসজির এই ফরোয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই এগিয়ে এসে বাধা দেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। ৪১তম মিনিটে দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেছিলেন মার্সেলো, তবে নাভাসকে ফাঁকি দিতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের অর্ধে আরও গুটিয়ে যায় কোস্টারিকা, আরও আক্রমণাত্মক খেলে ব্রাজিল। তাতে খুব ভালো সুযোগ এসেছিল পাঁচ মিনিটের মাথাতেই। ডান দিক থেকে ফাগনারের ক্রসে গাব্রিয়েল জেসুসের হেডে বল ক্রসবারে লাগলে গোল পায়নি ব্রাজিল। পরক্ষণেই কুতিনিহোর জোরালো শট গোলের মুখে থেকে ফেরে এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে।

৫৬তম মিনিটে নেইমারের খুব কাছ থেকে নেওয়া শটে গ্লাভস লাগিয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠান নাভাস। একটু পর কুতিনিহোর জোরালো শট কোনোমতে আয়ত্তে নেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক।

৭২তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন নেইমার। নাভাসও ছিলেন গোল থেকে একটু বেরিয়ে। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার। জার্সিতে মুখ ঢাকলেন হতাশায়।

এরপর অভিনয় করে পেনাল্টি প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন নেইমার। রেফারি প্রথমে স্পটকিকের নির্দেশ দিয়েও পরে কোস্টারিকার খেলোয়াড়দের আপত্তির মুখে ভিডিও রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান। তখন নেইমার শাস্তি থেকে বেঁচে গেলেও একটি পর মেজাজ হারিয়ে ঠিকই দেখেন হলুদ কার্ড।

অবশেষে যোগ করা সময়ে আসে গোল দুটি। প্রথম মিনিটে ফিরমিনোর হেড ডি-বক্সে পা দিয়ে নামিয়েছিলেন জেসুস। এগিয়ে এসে নিচু শটে নাভাসকে ফাঁকি দেন বার্সেলোনার মিডফিল্ডার কুতিনিহো। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচেও গোল পেয়েছিলেন কুতিনিহো।

আর সপ্তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলটি পান নেইমার। প্রতি আক্রমণে দগলাস কস্তার কাছ থেকে বল পেয়ে ফাঁকা জালে পাঠান অরক্ষিত থাকা পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচ শেষ হলে আবার ঢাকেন মুখ। তবে এবার হতাশায় নয়, ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর স্বস্তির গোল পাওয়ার কান্নায়।


আরো সংবাদ



premium cement