২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কেন কথাই বললেন না সালাহ

কেন কথাই বললেন না সালাহ - ছবি : সংগৃহীত

বাল্টিক সাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম। হোয়াইট নাইটের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের এই স্টেডিয়াম দেখতে বেশ সুন্দর। এই শহর বছরের দেড় মাস রাতে মাত্র দুই ঘন্টার জন্য অন্ধকার হয়। জুনের প্রথম থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তাও সেই অন্ধকার আমাদের দেশের সূর্য ডোবার ঠিক পরপর যে আলো প্রাকৃতিক আলো থাকে সেরকমই। মোটামুটে স্পষ্ট দেখা যায় সব কিছু। এ জন্যই তখন রাতকে বলা হয় হোয়াইট নাইট।

পর্যটকদের প্রিয় এই সুন্দর শহরের অসাধারণ স্টেডিয়ামের মিক্সড জোনটা বেশ ছোট। এই মিক্সড জোনেই গত পরশু ১৯ জুন খেলা শেষে অপেক্ষা শ’ দুয়েক সাংবাদিকের। রাশিয়ান ও মিসরের সংবাদ কর্মীরাই বেশি। ২২ জুন এই মাঠে মুখোমুখে হবে ব্রাজিল ও কোস্টারিকা। সুতরাং তাদের মিডিয়াকর্মীরাও আগাম নিউজ সংগ্রহের জন্য হাজির মিক্সড জোনে। অন্য দেশের মিডিয়াও উপস্থিত। কিছুক্ষণ আগে শেষ হওয়া ম্যাচ শেষে রাশিয়ার তারকা হয়ে রগেছেন দার্নিশ চেরিশভ। দুই ম্যাচে তিন গোল দিয়ে তিনি এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে। কিন্তু তার প্রতি রাশিয়ান সংবাদকর্মী ছাড়া আর কারো আগ্রহ নেই।

বরং সবার কেন্দ্র বিন্দু একজনকে ঘিরে। তিনি মোহাম্মদ সালাহ। বিশ্বকাপের অভিষেকেই তিনি গোল পেয়েছেন। পেনাল্টিতে গোল করেছেন রাশিয়ার বিপক্ষে। শুধু এই কৃতিত্বের জন্যই নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তার পারফরম্যান্সই তাকে অন্যসব বড় স্টারের সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাই সবার একটু কথা বলা ইচ্ছে ছিল সালাহ’র সাথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হলো সকলকে। এক নিরাপত্তা কর্মীর প্রহরায় চুপচাপ হেঁটে চলে গেলেন এই মিসরীয় ফুটবল সেনসেশন। বারবার অুনরোধ সত্ত্বেও তার মুখ থেকে কথা বের করা গেল না। উল্লেখ্য একমাত্র সালাহ’র সাথেই মিক্সড জোনে ছিলেন স্যুটেডে বুটেড নিরাপত্তা রক্ষী। যা পেয়ে থাকেন মেসি, নেইমাররা।

সবার পারেই মিক্সডর জোনে এলেন মোহাম্মদ সালাহ। তবে মিসরীয় ফুটবলারা যে কারো সাথে কথা বলবেন না সেটার ইঙ্গিত মিলেছিল যখন অভিজ্ঞ এবং ৪০ পেরুনো মিসরীয় গোলরক্ষক ঈশাম এল হাদারি প্রবেশ করলেন মক্সিড জোনে। তার স্বদেশী সংবাদকর্মীরা তাকে কিছু বলার অনুরোধ করলেন ম্যাচ সম্পর্কে। তখন আরবি ভাষায় হাদারি যা বললেন তাতে বুঝতে বাকি রইল না আজ তাদের মুখে তালা। কথা বলতে নাকি টিম ম্যানেজমেন্ট বা কোচই বারণ করেছেন। তবে সবার সাথে ভাব বিনিময় করলেন তিনি। হাদারিসহ অন্য বস মিসরীয় ফুটবলারই তাদের স্বদেশী মিডিয়াকর্মীর সাথে করমর্দন বা কোলাকুলি করে তবেই মিক্সড জোন ছাড়লেন। সবাই বিশেষ নজর দিলেন সিনিয়র সাংবাদিক এশাম সালতুনের দিকে। সেন্ট পিটার্সবার্গে যিনি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় হাঁটুতে চোট পেয়েছেন। মিক্সড জোনে হুইল চেয়ারে বসেই দায়িত্ব পালন করছিলেন।

কিন্তু সালাহ সে দিকে পা বাড়ালেন না। তিনি বিষন্নমাখা চেহারা নিয়ে চলে গেলেন। এর আগে খেলা শেষ হওয়ার পর মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবক অটোগ্রাফ নিতে চাইলেন মোহাম্মদ সালাহ’র। তাকেও ফিরিয়ে দিলেন এই লিভারপুল তারকা।

কেন সালাহ’র এতো হতাশা? মিসরীয় সাংবাদিকদের মতে, সালাহ খুব হতাশ দলের পারফরম্যান্সে। সাথে অন্যরাও। সবার প্রত্যাশা ছিল মিসর অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে। সেখানে টানা দুই ম্যাচে হেরে বিদায়। সব মিসরীয়ই এতে ভীষণ মনক্ষুণ্ন।

মিশরীয় সমর্থকদের মতে, সালাহ যদি উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারতেন তাহলে ভিন্ন হতো রেজাল্ট। রাশিয়ার সাথে তো সে খেলেছে পুরো ফিট না হয়ে। তবে এখন আমরা চাই শেষ ম্যাচে যেন সৌদি আরবের বিপক্ষে গোল করেন সালাহ। এবং দলও যেন সান্ত¦নার জয় পায় ২৫ জুন ভরগোগার্ডে।

আরো পড়ুন :
সালাহ’র ফিটনেস মিসরের হারের মূল কারণ নয় : কুপার

বিশ্বকাপে মিসরের ব্যর্থতার পিছনে মোহামেদ সালাহ’র অনুপস্থিতি একটি কারন হতে পারে। কিন্তু তারকা এই ফরোয়ার্ডের ইনজুরি দলের ব্যর্থতার একমাত্র কারণ নয় বলেই মনে করেন কোচ হেক্টর কুপার।

মঙ্গলবার স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩-১ গোলে পরাজিত হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপে মিসরের বিদায় প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। ম্যাচটিতে একমাত্র গোলটি অবশ্য এসেছে সালাহ’র স্পট কিক থেকে। গত মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কাঁধের ইনজুরিতে পড়া সালাহ সুস্থ হয়ে কালই প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু জয়ের জন্য মরিয়া মিসরের সাফল্যের লক্ষ্যে কোনো অবদান রাখতে পারেননি প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা এই খেলোয়াড়।

কুপার বলেন, ‘দলে সালাহ’র গুরুত্ব নিয়ে কারো মাঝে সন্দেহ নেই। সে যখন ইনজুরিতে পড়ে তখন থেকেই আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। টুর্নামেন্টের আগে অনুশীলন ক্যাম্পে সকলের সাথে তাকে দলে পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তা হয়নি। সে নিজের ফিটনেস ফেরাতে ব্যস্ত ছিল।

শতভাগ ফিট প্রমানের আগে আমরা মেডিকেল দলের সাথে আলোচনা করেছি। সালাহ নিজেও জানিয়েছে সে খেলার জন্য প্রস্তুত। আমিও তার অনুশীলন দেখে সন্তুষ্ট হয়েছি। তার কাছ থেকে দলের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। কিন্তু আমি সবসময়ই বলি এক বা দুজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ের পিছনে অবশ্যই পুরো দলের অবদান থাকাটা জরুরি।’

কুপার আরো বলেন রাশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধটা আমরা দারুণ খেলেছি। কিন্তু মাত্র ১০-১৫ মিনিট বাজে খেলাতেই আমরা পিছিয়ে যাই। আমরা ঠিকমতো ম্যাচের আবহ ধরে রাখতে পারিনি। ৪৭ মিনিটে গোলরক্ষক মোহামেদ এল-শেনাবির অপ্রয়োজনীয় পাঞ্চে আহমেদ ফাতির আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় রাশিয়া। ৫৯ মিনিটে মিশরের রক্ষণভাগের ভুলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডেনিস চেরিশেভ। তিন মিনিট পরেই আরটেম দিজিউবা দারুন এক গোলে স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত করেন।

কুপার বলেন, আমি মনে করি না এখানে মনোযোগের অভাব ছিল। বিশ্বকাপে এই ধরনের খেলার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কখনো কখনো ভুল হয়ে যেতেই পারে।


আরো সংবাদ



premium cement