২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেভাবে হারের বদলা নিয়েছিলেন রোনালদো

স্পেনের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে গোল করার পর - ছবি : সংগ্রহ

ফুটবল মাঠে তিনি চ্যাম্পিয়ন। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি জিতেছেন একের পর এক শিরোপা আর ব্যক্তিগত সম্মান; কিন্তু রোনালদোর এই সাফল্যের নেপথ্যে কী? সেটাই জানালেন তার সাবেক এক টিমমেট।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক হ্যাটট্রিক করে দলকে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। স্পেনের সাথে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটি ড্র করেছে পর্তুগাল। রোনালদের সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে একসাথে খেলেছেন প্যাট্রিক এভরা। দুজনের সম্পর্কটাও ছিলো দারুণ। সেই এবার প্রকাশ করেছেন সিআর সেভেনের না জানা অনেক কথা। তার পরিশ্রম, সাফল্যের ক্ষুধা আর জেদের কথা।

আইটিভি চ্যানেলকে এভরা বলেন, ‘একবার রিও ফার্ডিনান্ডের সাথে টেবিল টেনিস খেলছিলো। খেলায় রিওর সাথে হেরে যায় রোনালদো। এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি সিআরসেভেন। পরপর সে তার এক কাজিনকে পাঠিয়ে টেবিল টেনিসের সেট কিনে আনে বাসায়। দুই সপ্তাহ মনোযোগ দিয়ে প্র্যাকটিস করে আবার রিও ফার্ডিন্যান্ডের সাথে খেলতে নামেন রোনালদো। এবার সবার সামনে রিওকে পরাজিত করেন রোনালদো।’

এভরা বলেন, ‘কাজেই আমি অবাক হবো না যদি এই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও ট্রফি জেতার জেদ নিয়ে রোনালদো মাঠে নামে। কারণ সে খুবই জেদি’। রোনালদোর এই দৃঢ়চেতা মানসিকতার কথা অবশ্য অনেকেরই জানা। মেসির সাথে তার দশ বছরের প্রতিযোগীতায় অনেকবারই মেসির চেয়ে পিছিয়ে পড়ে আবার ফিরে এসেছেন। গত বছর পঞ্চমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জেতার পর পুরস্কারটির আয়োজক ‘ফ্রান্স ফুটবল’ সাময়িকীকে বলেছিলেন, ‘আমি মেসির আগে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলাম, এরপর সে আমাকে টপকে টানা চার বছর জিতেছে। আমি লুকাব না, সে সময় আমি দুঃখী ও রাগান্বিত ছিলাম...হতাশ হয়ে পড়েছিলাম...শুধু ছবি তোলার জন্য সেখানে যাওয়ার আগ্রহ আমার ছিল না; কিন্তু ধীরে ধীরে আমি নিজেকে বলেছিলাম, জীবনে যা কিছুর শুরু হয়, তার শেষও রয়েছে। আর ফুটবলে শেষটাই গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য ধরেছি এবং আমি আরও চারটি ব্যালন ডি’অর জিতেছি।’

৩৩ বছর বয়সী রোনালদো এখনো প্রতিনিয়ত তার খেলার দক্ষতা বাড়িয়েই চলছেন। সাফল্যের ঝুড়িতে নিত্য যোগ হচ্ছে নতুন পালক। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪৪ ম্যাচে ৪৪ গোল করে দলটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন। এভরা মনে করেন তার সাবেক সতীর্থ প্রতিনিয়ত নিজেকে আরে উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন।

আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে এভরা বলেন, ‘আমি সবাইকে বলি রোনালদো মধ্যাহ্ন ভোজের দাওয়াত দিলে তোমরা যাবে না(হাসি)। সে আমাকে একদিন প্র্যাকটিসের পর তার বাড়িতে যেতে বলেছিলো। প্র্যাকটিসের পর আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু তার খাবার টেবিলে ছিলো শুধু সালাদ, মুরগির গোশত আর পানি। এমনকি কোন জুসও ছিলো না। খাওয়ার সময় আমি ভাবলাম এগুলো খাওয়ার পর হয়তো দুপুরের আসল খাবার আসবে; কিন্তু আর কিছু এলো না।’
এভরা বলেন, ‘ও এই খাবার খেয়েই বল নিয়ে কসরত করতে শুরু করলো রোনালদো। কয়েক মিনিট পর আমাকেও বলল তার সাথে নেমে পড়তে। আমি বললাম, মাত্রই তো খেলাম! কিন্তু তার জেদে খেলতে বাধ্য হলাম। কতক্ষণ খেলার পর সুইমিং পুলে নিয়ে গেল সাঁতার কাটতে। আমি ওকে বললাম, আমরা এখানে কেন এসেছিলাম? কাল কি আমাদের খেলা আছে? নাকি দাওয়াতে এসেছিলাম তোমার বাসায়? এরপর মজা করে এভারা বলেন, ও কাউকে খাওয়ার দাওয়াত দিলে আমি যেতে নিষেধ করি’।

আরো পড়ুন : এমন মেসিভক্ত আর কে আছেন
সিএনএন
সড়কের পাশে তিন তলা বাড়ি। পুরো বাড়িটি আকাশী আর সাদা রঙে রাঙানো। বাড়ির দেয়ালে বিভিন্ন জায়গায় লিওনেল মেসি ও আর্জেন্টিনা টিমের অন্যান্য তারকাদের ছবি টাঙানো। বাড়ির নিচ চলার এক পাশে একটি চায়ের দোকান। দোকানের চা বিক্রেতার গায়ে সারাক্ষণই থাকে আর্জেন্টিনার জার্সি। দোকানের প্রতিটি সরঞ্চামও আকাশী সাদায় রাঙানো। দোকান ও বাড়ির মালিক একজনই। নাম তার শিবশঙ্কর পাত্র।

পৈত্রিক বাড়ির নিচেই চায়ের দোকান করেন ৫২ বছর বয়সী শিবশঙ্কর। পেশায় তিনি একজন চা বিক্রেতা; কিন্তু তার সেই পরিচয় ছাপিয়ে এখন আলোচিত হয়ে উঠেছে আর্জেন্টিনাভক্ত হিসেবে। ভারতের কলকাতা নগরীর বাসিন্দা তিনি। আর্জেন্টিনা ও মেসির এমন পাগল ভক্ত আর কে আছেন?

এবারের বিশ্বকাপের আগে তিন তলা বাড়িটি আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে সাজিয়েছেন শিবশঙ্কর। জানা যায়, ১৯৮৬ সালে ডিয়াগো ম্যারাডোনার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে আর্জেন্টিনা দলের ভক্ত হয়ে যান শিবশঙ্কর। সেই থেকে আর্জেন্টিনা প্রেম চলছেই তার। এরপর মেসি দখল করেছেন তার হৃদয়ে ম্যারাডোনার অবস্থানটি। ২০০৯ সালে লিওনেল মেসির কলকাতা সফরের সময় প্রথম বাড়িটি পতাকার রঙে রাঙান তিনি। এরপর প্রতিটি বিশ্বকাপেই চলছে এই প্রবণতা।

গত ৩০ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন শিবশঙ্কর। তার বাড়ি ও দোকানটিই এখন আশপাশ অঞ্চলের মানুষের কাছে আর্জেন্টিনা সমর্থনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দোকানটির আসল নাম বাদ দিয়ে সেটি এখন ‘আর্জেন্টিনা দোকান’ নামে খ্যাতি পেয়েছে। দোকানের টিভিতে সারাক্ষণ চলে খেলাধুলার চ্যানেল। ক্রেতারা চা-বিস্কুট খেতে খেলা দেখে, নয়তো খেলা নিয়ে আড্ডা দেয়।

এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষে শিবশঙ্কর পরিকল্পনা করেছিলেন রাশিয়ায় গিয়ে মেসিদের খেলা দেখার। সে জন্য তিনি ৭০ হাজার রুপি জমিয়েছিলেন; কিন্তু রাশিয়া গিয়ে অন্তত একটি ম্যাচ দেখতে হলেও কমপক্ষে দেড় লাখ রুপি লাগবে জানার পর তিনি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। রাশিয়া যেতে পারেননি তো কী হয়েছে, সেই জমানো টাকায় বাড়িটাকে ‘আর্জেন্টিনা বান্ধব’ করে তোলার কাজ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, আগামী ২৪ জুন মেসির জন্মদিনে বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

শিবশঙ্করের মেয়ে নেহা পত্র সিএনএনকে বলেন, আমার বাবা চা কিংবা ধূমপান করেন না। তার কাছে মেসিই একমাত্র নেশা।


আরো সংবাদ



premium cement