২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘কোচের কারণেই জার্মানির পরাজয়’

হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন থমাস মুলার - ছবি : এএফপি

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, তার ওপর আবার দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে জার্মানি। সেই জার্মানিই গতরাতে হেরে গেছে দ্বিতীয় সাড়ির দল হিসেবে পরিচিত মেক্সিকোর কাছে। তবে পরাজয়ই শুধু নয়, জার্মানির খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সাম্প্রতিক ফর্মের প্রতিফলন ছিলো না তাদের রোববারের ম্যাচে।

মেক্সিকোর কাছে তাদের চ্যাম্পিয়ন দলের পরাজয়ে ক্ষোভ, হতাশা এবং অপমান উগরে দিচ্ছে জার্মান মিডিয়া। দেশটির বিশ্বকাপে টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তারা। অনেকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর স্পেনের পরিণতির কথা। ২০১০ বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন পরের আসরের প্রথম ম্যাচেই নেদারল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ৫-১ গোলের বড় ব্যবধানে। প্রথম রাউন্ডের বাধা আর পার হতে পারেনি তারা।

‘অপমান’, ‘বিশৃঙ্খলা’ ‘লজ্জা’ - জার্মানির পত্র-পত্রিকার শিরোনামগুলোতে দল সম্পর্কে এসব বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে। ছাপা হয়েছে পরাজয়ের পর হতাশ, বিমর্ষ, উদভ্রান্ত জার্মান দলের ফুটবলারদের ছবি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জার্মানি গত ৩৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম হারলো। তাও আবার যে দলটি গতবারের শিরোপাধারী। শেষবার তারা প্রথম ম্যাচে হেরেছিল ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে। আলজেরিয়া পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল।

জার্মানির সর্বাধিক বিক্রিত সংবাদপত্র বিল্ড তাদের পাতাজোড়া শিরোনামে লিখেছে - ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশৃঙ্খল রক্ষণভাগ.. বিশ্বকাপে তাদের টিকে থাকাই এখন প্রশ্ন।’ বিল্ড আরো লিখেছে, ‘মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।’ তাদের ওয়েবসাইটে বিল্ড লিখেছে - ‘মেক্সিকোর বিরুদ্ধে বিব্রতকর পারফরমেন্সের পর বিশ্বকাপ নিয়েই আমরা এখন উদ্বিগ্ন।’

বার্লিনের দৈনিক মরগেন পোষ্ট লিখেছে -‘পথ হারিয়েছে জার্মানি।’ ফ্রাংকফুটার আলগেমাইনে পত্রিকায় কোচ জোয়াকিম লো'র কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘লো কোনোভাবেই তার পরিকল্পনা বদলাতে চান না। আর তার ফলে জার্মানি এখন চাপে।’

কেন লো দ্রুতগতির উইংগার মার্কোস রিউসকে বসিয়ে রেখে শ্লথগতির মেসুত ওজিলকে খেলালেন তা নিয়ে প্রশ্ন করছে পত্রিকাগুলো। কেন ম্যানচেস্টার সিটির তারকা লিরয় সানেকে তিনি দলেই নিলেন না তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মিউনিখ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র জুডডয়েচে সাইটুং লিখেছে, ‘অতীতের কৌশল সবসময় কাজ করেনা। গত ১২ বছর ধরে তিনি (লো) যা করছেন, তা আর চলতে পারেনা।’

 

আরো পড়ুন : মেক্সিকোতে ধরাশায়ী জার্মানি
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিলে মেক্সিকো। রোববার গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে তারা ১-০ গোলে হারিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। দারুণ গতিময় ও আর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের খেলায় ৩৫ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি জার্মানি।

গতি আর নিখুঁত পাসিংয়ের জন্য বিখ্যাত যে জার্মানি, তারাই আজ দেখলো মেক্সিকোর গতির খেল। খেলার প্রথম ২০ মিনিটে বল দখলে এগিয়ে ছিলো মেক্সিকো। এরপর জার্মানরা বলের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ালেও মেক্সিকো করেছেন বেশ কয়েকটি আচমকা আক্রমণ। বেশ কয়েকবার কাউন্টার অ্যাটক করে জার্মানির ডি-বস্কে ঢুকেও গোল পায়নি মেক্সিকো। বেশির ভাগ সময়ই বল থাকছে মেক্সিকোর অর্ধে, কিন্তু জার্মানির প্রতিটি আক্রমণ তারা ব্যর্থ করে দিয়ে বারবার কাউন্টার অ্যাটাক করেছে। ভালো ফিনিশিংয়ের কারণে নষ্ট হয়েছে কয়েকটি সম্ভাবনা। ভালো ফিনিশং হলে দলটি আরো অন্তত তিনটি গোল পেতে পারতো।

মেক্সিকোর সব কটি আক্রমণই ছিল প্রায় একই স্টাইলে। মাঝমাঠ থেকে লম্বা পাসে বক্সের কাছাকাছি ফরোয়ার্ডের পায়ে। ১৮ মিনিটে একা বল নিয়ে জার্মানির বক্সে ঢুকেও শট নিতে পারেননি মেক্সিকোর হাভিয়ের হার্নান্দেজ। ২৩ মিনিটে আক্রমণে যায় জার্মানি। টনি ক্রুসের শট আটকে দেন মেক্সিকোর গোল কিপার। ৩৪ মিনিটে জার্মানির বক্সের সামনে বল পেয়েও পা ছোঁয়াতে পারেননি মেক্সিকোর মিগেল লায়ুন।

৩৫ মিনিটে আবার একটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সফলতা পায় সবুজ জার্সিধারীরা। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে দৌড়ে জার্মানির সীমানায় প্রবেশ করেন মেক্সিকান ফরোয়ার্ড হার্নান্দেজ। বোয়েটাং ও হামেলসকে ফাঁকি দিয়ে বাম প্রান্তে পাস দেন তরুণ ফরোয়ার্ড লোজানোকে। বন নিয়ে বক্সে ঢুকে মেসুত ওজিলকে কাটিয়ে ডান পায়ের শটে লক্ষ্য ভেদ করেন(১-০)।

এরপর গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে জার্মানি। ৩৯ মিনিটে মেসতু ওজিলের ফ্রি-কিক কিপারের হাত ছুয়ে ক্রসবারে লাগে। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে আক্রমণে গিয়েছিলো মেক্সিকো। ভেলার বল সাইডবারের পাশ দিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও মেক্সিকো ছিলো অসাধারণ ছন্দে। তবে এই অর্ধে ষাট মিনিটের পর আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জার্মানি। ৬১ ও ৬৫ মিনিটে দুটি সুযোগ নষ্ট করেছেন ড্রাক্সলার ও কিমিখ। ৬৭ মিনিটে টিমো ভেরনা মিস করেছেন সহজ সুযোগ। শেষ দিকে লিড ধরে রাখতে ৮-৯ জন মেক্সিকান ডিফেন্স সামলেছেন। তাই জার্মানির ফরোয়ার্ডরা কাজে কাজ করতে পারেনি। এই ম্যাচে জার্মানির মাঝমাঠে বাস্তিয়ান শোয়েস্টাইগার কিংবা স্ট্রাইগার মিরোস্লাভ ক্লোসার বিকল্প তৈরি না হওয়ার বিষয়টি ভালোই চোখে লেগেছে। গতবার জার্মানির কাপ জয়ে দুজনের ছিলো অগ্রণী ভুমিকা। দুজনেই জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও তাদের বিকল্প খেলোয়াড় খুঁজে পায়নি জার্মানি।


আরো সংবাদ



premium cement