২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতেও নিয়মিত রোজা রেখেছেন তারা

ইরান ফুটবল দল - সংগৃহীত

অজুহাত দিয়ে রোজা ভঙ্গের কোন কারণ নেই। সেটাই প্রমান করলেন রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেয়া কিছু মুসলিম দেশ ও খেলোয়ারের। অবশ্য কোন দেশই তাদের খেলোয়াড়দের ওপর রোজা বাধ্যতামূলক করেনি। তারপরেও যারা রোজা পালন করেছেন তাদের  নিয়ে এই আয়োজন। 

সৌদি আরব
বিশ্বকাপের শুরুর দিনেই মাঠে নামছে সৌদি আরব। আজ তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া। সৌদি ফুটবলারদের অনেকেই রোজা রাখছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুশীলন ক্যাম্প তাদের। সেখানে দিনের আলো থাকে ১৮ ঘণ্টা। সৌদিদের এই ক্যাম্পে কয়েকজন খেলোয়াড় রোজা রেখেই প্রস্তুতি সেরেছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগই টুর্নামেন্টে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত রোজা মুলতবি রেখেছেন। সৌদি ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি আদেল ইজ্জত এর আগেই বলে দিয়েছেন, খেলোয়াড়েরা প্রয়োজন হলে রোজা মুলতবি রাখতে পারেন। কিংবা থেকে থেকে রোজা রাখতে পারেন।

ইরান
রোজা রেখে অনুশীলন করা নিয়ে ইরানের খেলোয়াড়দের খুব বেশি অভিযোগের সুযোগ নেই। দলটির ফরোয়ার্ড রেজা ঘোচেনাজাদই বলেছেন, ‘রোজা অনুশীলনে সেরকম প্রভাব ফেলে না।’ তা ছাড়া স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি খেলোয়াড়দের রোজা রেখে অনুশীলনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরান জাতীয় দল দেশ ছাড়ার আগে খেলোয়াড়দের প্রতি রুহানি বলেছিলেন, ‘রমজান মাসটা কি আসলে অনুশীলন নয়? গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার আগে তোমরা জিমে গিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করো। রমজান মাস তো আমাদের সবার জন্যই জিম (ব্যায়ামগার)। এটাই আসল অনুশীলন।’


তবে কাল ইরানের খেলোয়াড়দের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। রমজান মাসের সূচি তো একেক দেশে একেকরকম। কাল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রোজা রেখেই মরক্কোর মুখোমুখি হতে হবে ইরানের খেলোয়াড়দের। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। রাশিয়ায় তখনো ইফতারের সময় হবে না!

রমজান মাসে বিশ্বকাপ অনেক মুসলিম দেশকেই ভাবনায় ফেললেও, এটি নিয়ে সবচেয়ে নির্ভার মরক্কো। রোজা নিয়ে মরক্কোর খেলোয়াড়দের ওপর কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। আগামীকাল ইরানের বিপক্ষে তাঁরা খেলতে নামবে রোজা চলাকালীন সময়ে। দেশটির প্রশাসনিক উচ্চ পরিষদ ‘উলামা’ থেকেও এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। মরক্কোর খেলোয়াড়েরা যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে রোজা রাখতে পারেন।

রোজা রেখেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি সারতে হচ্ছে তিউনিসিয়া দলকে। কিন্তু খেলোয়াড়েরা তাতে খুশি হতে পারেনি। দলটির মিডফিল্ডার ওয়াহাবি খাজারির ভাষ্য, রমজান মাস ‘অনেক কঠিন...আমরা খেতে কিংবা পান করতে পারি না (যখন দরকার)। প্রস্তুতি নেওয়াটা তাই অনেক কঠিন।’ এর আগে পর্তুগাল ও তুরস্কের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই রোজা রেখে মাঠে নেমেছিলেন তিউনিসিয়ার খেলোয়াড়েরা। 
মজার‍ ব্যাপার হলো, পর্তুগালের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ইফতারের সময় তিউনিসিয়ার গোলরক্ষককে চোটের ভান করে মাঠে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর সতীর্থেরা। কিন্তু গোলরক্ষক ময়ুজ হাসেন তা না শোনায় সতীর্থেরা তাঁকে গালমন্দ করেন। তিউনিসিয়ার খেলোয়াড়েরা আসলে ওই চোটের সময়টুকুর সুবিধা নিয়ে পেটে কিছু দানাপানি দিতে চেয়েছিলেন। সতীর্থদের এই ইচ্ছাটুকু সেই গোলরক্ষক বাস্তবায়ন করেছেন তুরস্কের বিপক্ষে পরের ম্যাচে। ঠিক ইফতারের সময় চোটের ভান করে মাঠে শুয়ে পড়েছিলেন ময়ুজ হাসেন। এ সুযোগে রোজা ভেঙেছেন তার সতীর্থরা।


রমজান মাসের বেশির ভাগ সময় রোজা রেখেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছে মিসরের খেলোয়াড়েরা। তবে খেলোয়াড়দের শরীরে যেন রোজার প্রভাবটা কম হয় সে জন্য আলাদা করে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দিয়েছে মিসরের ফুটবল ফেডারেশন। যদিও তা খুব একটা ফলপ্রদ হয়নি। বিশ্বকাপের আগে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচই হেরেছে মিসর। মিসরের ফুটবল ফেডারেশন তারপরও খেলোয়াড়দের রোজা রাখার পক্ষে রীতিমতো বাধ্যই করেছিল। যদিও পরে দেশটির প্রধান মুফতি শাকি আলম মিসর দলের রোজা না রাখা মঞ্জুর করেন।


নাইজেরিয়া দলে নানা ধর্মের খেলোয়াড় রয়েছে। কোচ গারনত রোহরের তাই রোজা নিয়ে অতটা ভাবতে হচ্ছে না। দলটির দুই ফরোয়ার্ড আহমেদ মুসা ও সেহু আবদুল্লাহি রোজা রেখেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাইজেরিয়া বিশ্বকাপ শুরু করবে রোববার। প্রথম ম্যাচেই এই দুই খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেবেন জার্মান এই কোচ। এ নিয়ে রোহরের ব্যাখ্যা, ‘তাঁদের এত অল্প সময়ের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা ভীষণ কঠিন হবে।’

সেনেগাল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তবে দেশটির জাতীয় দল রোজা না রেখেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা সর্বসম্মত হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেনেগাল কোচ আলিউ সিসের ব্যাখ্যা, ‘সবাই জানে বিশ্বকাপের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্টে রোজা রেখে খেলা কতটা কঠিন। খেলোয়াড়দের ফিটনেস ঠিক রাখার দায়িত্বটা কিন্তু আমার।’
আরও 


আরো সংবাদ



premium cement