১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেক্সিট ভাগ্য নিয়ে পার্লামেন্টে থেরেসা মে

-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ২০১৬ সালের জুন মাসে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গণভোটে ইইউ ত্যাগের পক্ষে রায় দেয় দেশটির ভোটাররা। আগামী ২৯ মার্চ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ইইউ ত্যাগের শর্ত হিসেবে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে ইইউ ত্যাগের জন্য যে চুক্তি করতে যাচ্ছে তা ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তি নামে পরিচিত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের নেতৃত্বে চুক্তিটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তিটি কার্যকর করতে হলে তা পাস করাতে হবে পার্লামেন্টে।

কিন্তু চুক্তির কিছু শর্ত নিয়ে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই রয়েছে প্রবল দ্বিমত। যার জেরে ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রীসহ আরো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এমনকি খোদ নিজের দলের পার্লামেন্ট সদস্যরা থেরেসার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাদের অনাস্থাপত্রের জেরে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। আস্থা ভোটে বেশির ভাগ এমপি থেরেসার নেতৃত্বের পক্ষে ভোট দিলেও তাদের অবস্থান ব্রেক্সিট চুক্তির বেশ কিছু শর্তের বিরুদ্ধে।

পার্লামেন্টে চুক্তিটি পাস না হলে ব্রিটেনের জন্য বিষয়টি সুখকর হবে না। ডেইলি মেইলের এক কলামে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা বলেন, কট্টর ব্রেক্সিট সমর্থক ও ব্রেক্সিট-বিরোধী উভয় দলই চেকার্সের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ব্রিটিশ গণতন্ত্রকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি এমপিদের চেকার্সের প্রস্তাবে সমর্থন দিতে বলেন। থেরেসা বলেন, গণভোটের ফলাফলের প্রতি সম্মান দেখান, ব্রিটেনের নিরাপত্তা রক্ষা ও মানুষের চাকরি বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন দেয়া। আর এটাই এখন মূল বিষয়।

পার্লামেন্টে চুক্তিটি পাস না হলে তার পরিণতি কী হবে তা বোঝানোর জন্য ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স বলেছেন, এমপিরা যদি ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের খসড়া চুক্তিতে সমর্থন না দেন তাহলে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট বাতিল হয়ে যাওয়ার দিকেই এগোবে পরিস্থিতি। ফক্সের ভাষ্য, ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন তখনই শতভাগ নিশ্চিত হবে, যখন এমপিরা নির্ধারিত খসড়া চুক্তিটির পক্ষে ভোট দেবেন। যদি চুক্তিটি পাস না হয়, তাহলে ভোটার ও পার্লামেন্টের মধ্যে থাকা আস্থার বন্ধন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ভোটাররা ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে আবার গণভোটের দাবি তোলেন দেশটির ভোটাররা। বিচ্ছেদ নয় বরং যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ মানুষ এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থেকে যাওয়ার পক্ষে। এমনকি এখন ভোটাররা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে দ্বিতীয়বার গণভোট আয়োজনও চাইছে বলে জরিপে দেখা গেছে। পোলিং ফার্ম ইউগভ পরিচালিত ওই মতামত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, যদি এখনই দ্বিতীয় গণভোট হয় তবে ৪৬ শতাংশ ভোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার পক্ষে পড়বে, আর ৩৯ শতাংশ ভোটার এখনো বিচ্ছেদই চাইবে।

আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এখনো তার খসড়া ব্রেক্সিট পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে পারেননি। যে কারণে ব্রেক্সিট নিয়ে কোনো চুক্তি হবে কি না, নাকি কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হবে অথবা যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আদৌ বের হবে কি না তা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।

এসব অনিশ্চয়তার মুখে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোট করবেন। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এ ভোট পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন থেরেসা। ভোটাভুটিতে ব্রেক্সিট চুক্তিটি পাস না হওয়ার আশঙ্কার কারণেই ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।

এবার আর তারিখ পেছান হবে না বলেই জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এমপিদের ভোটে ব্রেক্সিট চুক্তিটি পাস হোক বা না হোক, আগামী ২৯ মার্চই হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) শেষ সময়সীমা।

তবে বিরোধিতা যত তীব্রই হোক পার্লামেন্টে ১৫ জানুয়ারির ভোটেই নির্ধারিত হবে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট ভাগ্য। একই সাথে থেরেসা মের ভাগ্যে কী আছে সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement