ফ্রান্স এখনো উত্তাল : জরুরি অবস্থা জারির চিন্তা
- রয়টার্স
- ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৩৪
দাঙ্গা রুখতে জরুরি অবস্থা জারির কথা ভাবছে ফ্রান্সের সরকার। এক দশকেরও বেশি সময় পর দেখা দেয়া সবচেয়ে বড় নাগরিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা ভাবছে দেশটির সরকার। সরকারের একজন মুখপাত্র এ কথা জানান।
রোববার গণমাধ্যমকে দেয়া এক মন্তব্যে মুখপাত্র বেনজামিন গ্রিভয় সঙ্কট সমাধানে আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে বসারও আহ্বান জানিয়েছেন। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সজুড়ে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট(হলুদ জ্যাকেট) পরে অংশ নিচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। এ কারণে এ প্রতিবাদটি ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রতিবাদকারীরা ঢুকে পড়ায় শনিবার পশ্চিম ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দরও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এ দিন পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে রাজধানী প্যারিস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সংঘর্ষে অন্তত ১১০ জন আহত হয়েছে। ২৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চরম ডান ও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি সহিংস দুর্বৃত্তরাও এই ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে দাঙ্গা সৃষ্টি করছে বলে ধারণা পুলিশের। শনিবারও মুখোশ পরিহিত একদল তরুণকে হাতে ধাতব লাঠি ও কুড়াল নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। প্যারিসের রাস্তায় এ দিনের সহিংসতায় বেশ কয়েকটি যানবাহন ও ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইউরোপ ওয়ান রেডিওকে গ্রিভয় বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছি, যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনা শুরু ও দাঙ্গা মোকাবেলায় কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা নিয়ে রোববার ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে। সেখানেই জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, বলেন এ সরকারি মুখপাত্র। গ্রিভয় বলেন, ‘সহিংসতার জন্য প্রতি সপ্তাহান্তেই বৈঠক করতে হবে, এটি ভাবা যাচ্ছে না।’
দেশটিতে ১৭ নভেম্বর প্রথম জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। দ্রুতই এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সংগঠিত আন্দোলনকারীরা এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক আটকে দেয়; বাধা দেয় শপিংমল, কারখানা ও জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্রে প্রবেশেও।
শনিবারের বিক্ষোভ থেকে পুলিশ দেড় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করে। এদের বেশির ভাগই উগ্রপন্থীদের দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভে এসেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রেঞ্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্টানার। জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ‘ভুল হয়েছে’ বলেও স্বীকার করে নেন ম্যাক্রোঁ মন্ত্রিসভার এ সদস্য। সরকারি ওই পদক্ষেপের কারণেই নাগরিকদের ওপর করের মাত্রা বেড়ে যায়।
যদিও বিক্ষোভকারীরা দুই সপ্তাহ ধরে চলা এ বিক্ষোভ ও সহিংসতার জন্য সরকারকেই দায় দিচ্ছেন। মার্শেইর ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের কর্মী পল মারা বলেন, ‘যা ঘটেছে তার জন্য তারাই (সরকার) দায়ী, যদিও এটি প্রত্যাশিতই ছিল। ওপর থেকেই এ সহিংসতা শুরু হয়েছে। নিষ্ক্রিয়তার ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র নিজেই সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তে পরিণত হয়েছে।’
শনিবার প্যারিসের বিখ্যাত বুলেভার শঁজে এলিজেতে মাথা ও মুখ ঢাকা প্রতিবাদকারীরা সংঘর্ষের সময় রাস্তার বেড়া ও অন্যান্য বস্তু পুলিশের দিকে ছুড়ে মারে। এভিনিউটির মাথায় ‘আর্ক দ্য থিঁয়ুফ’ তোরণের নিচে অজানা সৈন্যদের সমাধি ঘিরে কয়েক শ’ ইয়েলো ভেস্ট প্রতিবাদকারী বসে পড়ে। ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা ‘ম্যাক্রোঁ পদত্যাগ করো!’ বলে স্লোগান দেয়।
তোরণটির সামনে প্রতিবাদকারীরা বড় কালো অক্ষরে ‘ইয়েলো ভেস্টের জয় হবে’ লেখাও তুলে ধরে। বিক্ষোভকারীরা ‘ম্যাক্রোঁ, আমাদের সাথে নির্বোধের মতো আচরণ বন্ধ করো’ লেখা স্লোগানও দেন। দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যসহ মোট ৬৫ জন আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়া ফিলিপ জানিয়েছেন, এ দিন ফ্রান্সজুড়ে ৩৬ হাজার প্রতিবাদকারী ও প্যারিসে পাঁচ হাজার ৫০০ প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমেছিল। পুলিশ ইউনিয়ন দেশজুড়ে ৫৮২টি সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল বলে জানায়। প্রতিবাদকারীরা ঢুকে পড়ায় শনিবার পশ্চিম ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দরও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।