২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া!

বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া! - ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়া কি পরবর্তী বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে? ভূমধ্যসাগর থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলজুড়ে রাশিয়া নিজের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে তার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। দূরপ্রাচ্যের মহড়ায় তিন লাখেরও বেশি সৈন্য, এক হাজারেরও বেশি বিমান, হেলিকপ্টার ও ইউএভি এবং ৮০টি যুদ্ধজাহাজ অংশ নিচ্ছে। গত মঙ্গলবার ভোস্তক ২০১৮ (প্রাচ্য ২০১৮) নামের এই মহড়া শুরু হয়েছে। 
এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পর দেশটি প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে তাদের সামরিক মহড়া চালায়। গত ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ভোস্তক ২০১৮ মহড়ার আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে চীন ও মঙ্গোলিয়ার সেনারা অংশ নিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে তার চীনা প্রতিপক্ষ শি জিনপিংও মহড়া প্রত্যক্ষ করেন।

রাশিয়ার সামরিক পর্যবেক্ষক পাভেল ফেলজেনহাউর আনাদোলু বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, ২০২০ সালের পর সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সে সময় বসবাসের স্থান নিয়ে সঙ্ঘাত নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে আর তা-ই সঙ্ঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ মহড়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি হবে মূলত সম্পদের লড়াই এবং রাশিয়ার কাছে তা বিপুল মজুদ আছে। রুশ কর্তৃপক্ষ মনে করে, সে কারণে সব দিক থেকে তাদের ওপর হামলা হতে পারে। আর তাই সব ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যূহকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

ফেলজেনহাউর বলেন, রাশিয়াকে জড়িয়ে যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় প্রচার করা হয়েছে। ২০১৫ সালে রাশিয়ার সেনাবাহিনী আকস্মিক পরিদর্শন চালায়, যাতে তাদের যুদ্ধ ক্ষমতার নি¤œমানের বিষয় প্রকাশ পায়। এরপর রাশিয়ার সশস্ত্রবাহিনীকে নতুন করে অস্ত্র সজ্জিত করা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ভোস্তক ২০১৮ হলো ওই প্রস্তুতির চূড়ান্ত দফা। একজন জেনারেল এসব কর্মকাণ্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সিরিয়ার পরিস্থিতি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি সঙ্ঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। আর তা হলে সেখানকার অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে।

ফেলজেনহাউর বলেন, ‘আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর কথা বলছি না, তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের চেয়ে অনেক বেশি। এটি অনেকটা ‘ঠাণ্ডা’ লড়াই পরিস্থিতির মতো। তখন ইউরোপের আকাশ কেবল ‘ঠাণ্ডা’ ছিল; কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ায় সঙ্ঘাত থেমে ছিল না। সেখানে মারাত্মক লড়াই সংঘটিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘আপনি আপনার সম্ভাব্য শত্রুকে আপনার সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতি প্রদর্শন করার মাধ্যমেই কেবল যুদ্ধ রোধ করতে পারেন।’ 

সামরিক বিশ্লেষক সার্গেই ইশচেঙ্কোর মতে, আর সে কারণেই মস্কো ন্যাটোর সীমান্ত থেকে বহু দূরে এমন সব বড় সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে সম্ভাব্য সঙ্ঘাত এড়ানো। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে আমেরিকানরা আলাস্কা থেকে তাদের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে নর্দান ফিটের ইউনিটগুলো খুব ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাবে। তিনিও এ ব্যাপারে একমত যে, রাশিয়ার সামরিক মহড়াগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে, তার সামরিক শক্তির প্রদর্শন।
রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ অ্যান্টোন মারদাসোভ বলেন, তাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৯ লাখ দুই হাজার ৭৫৮। এরমধ্যে সৈন্য হলো, ১০ লাখ ১৩ হাজার ৬২৮ জন। ফলে রাশিয়ায় চাকরি করা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই সামরিক পেশায় জড়িত। 

মারদাসোভ আরো বলেন, যখন কোনো যুদ্ধব্যস্ততা থাকে না, তখন নানা ধরনের মহড়ার ব্যবস্থা করা হয়, যা তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বাড়ায়, তাদের যোগ্যতার স্তর উন্নীত করে। 


রুশ মহড়া : অস্বাভাবিক ঘটনা

তুরস্কের মিডলইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক ওকতেই তানরিসেভার বলেন, রাশিয়ার ক্ষেত্রে মহড়ার বিষয়টি একটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর রাশিয়া এই প্রথমবারের মতো এত বড় মাত্রায় কোনো মহড়ার আয়োজন করল। 
তবে গত তিন বছর ধরে রাশিয়া দেশটির প্রধান স্থানগুলোতে এবং পশ্চিমাঞ্চলে মোটামুটি বড় আকারের সামরিক মহড়ার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু এবার তারা দেশটির পূর্বাঞ্চলে এ ধরনের বড় মাপের সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। মস্কো যে বড় আকারের সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম তা বোঝাতে এ মহড়ার আয়োজন করেছে। একই সাথে তাদের হাতে যে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, তার প্রদর্শনও এ মহড়ার উদ্দেশ্য। 

তানরিসেভার বলেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার পর থেকে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। এ কারণেই গত চার বছর ধরে তারা সামরিক মহড়ার প্রদর্শন করে চলছে। তার মতে, এসব মহড়ার মাধ্যমে রাশিয়া একটি বার্তা দিতে চায়, আর তা হচ্ছে, রাশিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রতি তাদের হুঁশিয়ারি, সামরিক দিক দিয়ে মস্কো যথেষ্ট সমৃদ্ধ, শক্তিশালী এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত। 

তবে এ মুহূর্তে রাশিয়া ভূমধ্যসাগরের পূর্ব দিকে ব্রিটিশ ও মার্কিন নৌসেনা মোতায়েনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর কারণ হিসেবে মস্কো জানিয়েছে, সেখানে তারা ছোট আকারের একটি মহড়া পরিচালনা করতে চায়। তবে ছোট হলেও সে মহড়া ভোস্তক মহড়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ওই অঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সঙ্কটপূর্ণ এলাকাগুলোর অন্যতম।
তানরিসেভার বলেন, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব দিকে রায়িশার মহড়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, তার বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক অভিপ্রায় প্রদর্শন করা। শেষপর্যায়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর দ্বারা নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি উদ্দেশ্য না হওয়াটাই উচিত। বরং এটি একটি ব্যবসায়িক প্রদর্শনী। 
সূত্র : আনাদোলু


আরো সংবাদ



premium cement