২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘পড়াশোনার খরচ জোগাতে মাদক ব্যবসা করি’

যুক্তরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি জোগাড় করতে মাদক ব্যবসা করে থাকেন অনেকেই। ( ফাইল ছবি) - ছবি: সংগৃহীত

কাগজে কলমে হ্যারি অন্য দশজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মতই সাধারণ শিক্ষার্থী। যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অনেক শিক্ষার্থীর মতই তিনি স্টুডেন্ট লোন নিয়েছেন এবং তা পরিশোধের লক্ষ্যে তার নানা পরিকল্পনাও আছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, তার তোষকের নিচে সাধারনত হাজার হাজার পাউন্ড নগদ অর্থ থাকে আর প্রতিদিন সন্ধ্যায় গড়ে ২০ জনের মত গ্রাহককে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করেন তিনি।

‘অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যাপকভাবে মাদকের চল রয়েছে’, বলেন হ্যারি।

‘কারো না কারো কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের মাদকের চালান পেয়েই যায়, তাই সেই কেউ না কেউ আমি হলে ক্ষতি কি!’

গতবছরের ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের অপরাধ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ১২ লাখ মানুষ বেআইনি মাদক গ্রহণ করেছে।

হ্যারি জানান, ‘আপনি যখন শিক্ষার্থী, তখন আপনার আশেপাশের প্রায় সবাইকেই দেখবেন কোনো না কোনো মাদক গ্রহণ করছে। তাই এই বাজারটা ধরতে পারা সহজ।’

হ্যারি'র এই পার্ট টাইম ব্যবসার প্রধান সমস্যা - এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।

বেআইনিভাবে কোকেন, এমডিএমএ বা ম্যাজিক মাশরুমের মত ক্লাস এ মাদক সরবরাহ করার অপরাধে যুক্তরাজ্যে বিশাল অঙ্কের অর্থ জরিমানা বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তি হতে পারে আপনার। কেটামিনের মত ক্লাস বি মাদকের ব্যবসার জন্য শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড।

এই ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত হ্যারি এবং তার ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ফেলার পাশাপাশি এই কাজও থামিয়ে দেয়া।

‘আমার মনে হয় বয়সের সাথে সাথে মাদককে দূরে সরিয়ে জীবন গঠনের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত,’ জানান হ্যারি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে মাদক বিক্রি করলেও এর বাইরে কোথাও মাদক সরবরাহের পরিকল্পনা নেই হ্যারি'র। তিনি জানান নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তার কাছ থেকে মাদক কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে লেনদেন করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যে ধরণের ঝুঁকি বোধ করে, তার ক্ষেত্রে তেমনটা মনে করে না তারা।

‘মেয়েরা আমার কাছ থেকে মাদক কিনতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অন্য বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে গেলে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হওয়ার ভয় থাকে।’

শুরুতে অবশ্য হ্যারি মাদক বিক্রেতা নয়, সেবনকারী ছিল। নিজের ব্যবহারের মাদক বন্ধুদের কাছে মাঝেমধ্যে বিক্রি করতেন তিনি। বেশীদিন মাদক বিক্রেতা হিসেবে থাকতেও চান না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বহন করার জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।

ছাত্রজীবনে পরীক্ষামূলকভাবে মাদক ব্যবহারের বিষয়টি অনেকটাই স্বীকৃত। বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে বরিস জনসন পর্যন্ত অনেক রাজনীতিবিদও ছাত্রজীবনে মাদক ব্যবহারের কথা খোলামেলাভাবে স্বীকার করেছেন।

কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীরা কীভাবে ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট ঋণ বা স্টুডেন্ট লোন আদায় করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসেও জায়গা করে নিচ্ছে, সেই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

২০০৯ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে উঠে আসে স্টুডেন্ট লোনের অর্থ হাতে পাওয়ার জন্য কীভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং ছাত্রাবাসে জায়গা করে নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদার এসব মাদক ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে হ্যারি'র মত মাদক ব্যবসায়ীদের, যারা পড়াশোনার খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে মাদক ব্যবসা করে, সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ বা অন্যান্য ব্যবসায়ী দলের নজর পড়ার সম্ভাবনা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা করা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিল হ্যারি'র কাছে। কিন্তু কয়েকদিন আগের এক অভিজ্ঞতায় তার এই ধারণা পাল্টে যায়।

কিছুদিন আগে একজন গ্রাহকের কাছে মাদক সরবরাহ করার সময় হ্যারি'র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র হ্যারিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হ্যারিকে তারা প্রস্তাব দেয় যেন তাদের চক্রের হয়ে হ্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক বিক্রি করে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বন্ধুভাবাপন্ন ও নিরাপদ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে হ্যারি'র পরিচিতি আছে।

তারপর থেকে মাদক সরবরাহের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে হ্যারি।

‘এসব মাদক ব্যবসায়ী চক্র এতটাই শক্তিশালী যে তাদের স্বার্থে আঘাত করলে তারা আমাকে খুন করতেও পিছপা হবে না।’

এসব ঝুঁকির কারণে যত দ্রুত সম্ভব মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিতে চায় হ্যারি।

হ্যারি জানায়, তার পরিবার অর্থনৈথিকভাবে স্বচ্ছল নয়। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে করা উপার্জনের একটা অংশ সে সঞ্চয় করে যেন ভবিষ্যতে তার স্টুডেন্ট লোন পরিশোধ করতে পারে।

তবে তার আয়ের অধিকাংশই ব্যয় হয়ে যায় তার দৈনন্দিন খরচ চালাতে।

হ্যারি মনে করে মাদক ব্যবসা তাকে যতটা সাহায্য করছে, তার চেয়ে অনেক বেশী ঝুঁকির সাথে জড়িয়ে ফেলছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পেশা ত্যাগ করতে চান তিনি।

‘আমি অবশ্যই আমার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির ওপর ভিত্তি করে ক্যারিয়ার গঠন করতে চাই। ঐ ডিগ্রিটা অর্জন করার জন্যই তো এতকিছু।’

 

আরো পড়ুন: য়ের প্যাকেটে আসে মাদক, সেবন করা হয় পানিতে মিশিয়ে

নয়া দিগন্ত অনলাইন, ৩১ আগস্ট ২০১৮

ইয়াবা, গাজা, হেরোইন নয়। দেশে এই মাদক একেবারেই নতুন। সেবনের পর এটি মানবদেহে ইয়াবার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে ফেনসিডিল-ইয়াবার মতো সীমান্ত পথে নয়, আকাশপথে এসেছে নতুন এই মাদক।

শুক্রবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় চার শ কেজি নতুন এই মাদকের চালান জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল।

বেলা তিনটার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদারের নেতৃত্বে এক অভিযানে বিমানবন্দরের কার্গো গুদাম এলাকা থেকে মাদকের এই চালান জব্দ করা হয়।

বিষয়টির সার্বিক তত্ত্বাবধানের ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী। এনপিএসের চালানটি কয়েক দিন আগে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া থেকে ঢাকায় বিমানবন্দরে এসেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, গোপন সূত্রে বিপুল পরিমাণ নতুন মাদক নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) আসার খবর কয়েক দিন আগে পাওয়া যায়। এই তথ্য পেয়ে আজ দুপুরে বিমানবন্দরে অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, এনপিএস অনেকটা চায়ের পাতার গুঁড়োর মতো দেখতে। পানির সাথে মিশিয়ে তরল করে এটি সেবন করা হয়। সেবনের পর মানবদেহে এক ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি করে। অনেকটা ইয়াবার মতো প্রতিক্রিয়া হয়। এক ধরনের গাছ থেকে এনপিএস তৈরি হয়ে থাকে। এটি ‘খ’ ক্যাটাগরির মাদক। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবার জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফ এনপিএসের চালানটি এ দেশে পাঠিয়েছেন। এ দেশে নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে চালানটি পাঠানো হয়।

নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, এই মাদক ইয়াবার মতো কাজ করলেও গ্রিন টির মতো প্যাকেটে আনা হয়। বাংলাদেশে আবার নতুন করে প্যাকেট করে বাইরে চোরাচালান করে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে বিক্রির পাশাপাশি পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জব্দ হওয়া এনপিএস সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement