২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইউরোপ!

এবার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইউরোপ! - সংগৃহীত

ইউরোপের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন তেহরানকে অবহিত করেছে যে তারা ইরানের সাথে সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন শুরু করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। ২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সাথে সই হওয়া ইরানের পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য এটি ইউরোপের পক্ষ থেকে প্রথম বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

একাধিক ইউরোপীয়ান কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং জার্মান সরকার ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আইসিবি'র সঙ্গে একাউন্ট খোলার বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং তেহরান ও তাদের জাতীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরাসরি লেনদেন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে করণীয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ত্রি দেশীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরান, ফ্রান্স জার্মানি এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে তেহরানের কাছে এসব পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে। এসব প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বের করতে এখনো আলোচনা চলছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

ইউরোপের এসব প্রচেষ্টা যদি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হয় তা হবে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের পক্ষ থেকে নেয়া প্রথম বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এর ফলে মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ইউরোপের কোম্পানিগুলো ইরানের  কাছে সরাসরি অর্থ স্থানান্তর করার সুযোগ পাবে। এছাড়া,  অস্ট্রিয়া এবং সুইডেনও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  তেহরান এবং ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।

ইউরোপের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নয় বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি: জারিফ

পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ইউরোপের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ।

তিনি বলেন, আমরা ইউরোপের কাছ থেকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয় বরং তাদের কাছ থেকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, ইউরোপকে কেবল মুখের কথায় কিংবা বিবৃতি প্রকাশ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। বরং ইরানের ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে ইউরোপকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউরো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে জাওয়াদ জারিফ এসব কথা বলেন।

আমেরিকা ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলো এই চুক্তি টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইউরোপকে হুমকি দিয়েছে, তারা যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে তাদেরকেও মার্কিন শাস্তি ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে। এই হুমকির কারণে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য ইউরোপ তাদের প্রতিশ্রুতিতে আদৌ অটল থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

ইরান জানিয়ে দিয়েছে,পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে হলে ইউরোপকে অবশ্যই ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন চালু করা, ইরানে উপস্থিত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পুঁজি বিনিয়োগ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ইউরোপীয় সরকারগুলোর সরাসরি অর্থ লেনদেনের পদক্ষেপ নিতে হবে। পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প পথ ইউরোপের নেই। আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন চুক্তি টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তা ইউরোপকেই দিতে হবে। আর যদি ইউরোপ সে নিশ্চয়তা দিতে না পারে তাহলে পরমাণু সমঝোতারও আর কোনো অর্থ থাকে না।

ইরানের স্ট্র্যাটেজিক ফরেন রিলেশনস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল খাররাজি বলেছেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য দেশগুলোর উচিত ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। এর অন্যথায় পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের কর্মকর্তাদের এসব বক্তব্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে হলে ইউরোপকে কেবল মুখে নয় বরং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ ইরানের দাবিগুলো মেনে নিয়ে আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ইউরোপকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট মেকায়েরি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকে কেবল মুখে প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না বরং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়াঁ বলেছেন, ইরান যাতে নির্বিঘ্নে তেল বিক্রি করতে পারে তার জন্য সুযোগ করে দেয়া উচিত।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই ইরানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মতে, আমেরিকাকে পাশ কাটিয়েই পরমাণু সমঝোতার আওতায় ইরান ও ইউরোপের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা উচিত যা কিনা সবার জন্যই কল্যাণকর। 


আরো সংবাদ



premium cement