২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হোয়াইট নাইটের শহরে

রাশিয়া
আধুনিক এই শহরে রাতে আলো ঝলমল করে। - ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপিয়ান পর্যটকসহ বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকদের খুব প্রিয় সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর। এটাকে লেলিলনগ্রাড নামেও ডাকা হয়। বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী এই শহর রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। দুনিয়া জোড়া ভ্রমণপিপাসুদের পতঙ্গের মতো টানে এই শহরের হোয়াইট নাইট।

মে মাসের শেষ থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত এই প্রায় দেড় মাস সেন্ট পিটার্সবার্গে রাত হয় মানে অন্ধকার থাকে মাত্র দুই ঘন্টার জন্য। এই রাত আবার একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত। বাকিটা সময় অনেকটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার থাকে এই শহরের রাত। তাই এই সময়কে বলে হোয়াইট নাইট। স্থানীয়দের জন্য আদর্শ গ্রীষ্মকালও এই সময়। পর্যটকদের জন্যও তাই।

হোয়াইট নাইট উপলক্ষে ব্যাপক উৎসবের আয়োজন করা হয়। তা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেন সেন্ট পির্টাসবার্গের প্রথম মেয়র আনাতোলি সবচেক। তা ১৯৯৩ সাল থেকে। মূল আয়োজনটা প্যালেস স্কোয়ারে। এই ভেন্যু তখন বড় বড় তারকাদের মিলনস্থলে পরিণত হয়। রাশিয়ার অন্য শহরের স্কুলের ছেলে মেয়েরা তখন সেন্ট পিটার্সবার্গে আসে।

গান-বজানা, আতশবাজি সব কিছুরই ব্যবস্থা থাকে তখন। মিডিয়াও ব্যাপক প্রচারণা চালায় এই হোয়াইট নাইটের। জুনের ২০ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে হয় আসল উৎসব। এটা নির্ভর করে স্কুলের পরীক্ষা শেষ হওয়ার উপর।

আধুনিক এই শহরে রাতে আলো ঝলমল করে। সাথে রাতের বেলায় দিনের আলোর আর্বিভাব আরো মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্ম দেয়। আকাশটা ধারন করে সোনালী এবং রূপালী মিশ্রণের দারুণ এক রঙে। মনে হয় এই বুঝি পূর্ব আাকশে সূর্য উঠবে। বা এখনই তো ডুবে গেল সূর্য।

সেন্ট পিটার্সবার্গ নেভা নদী, ফিনল্যান্ড সাগর এবং বাল্টিক সাগর লাগোয়া অবস্থিত। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর এই সেন্ট পিটার্সবার্গ। ১৭০৩ সালে এই বন্দরের গোড়া পত্তন করেন পিটার দ্যা গ্রেট। ১৯১৪ সালে এর নাম বদল করে রাখা হয় পেট্রোগ্রাড। ১৯২৪ সালে ফের নাম বদল। এবার নাম দেয়া হয় লেলিনগ্রাড। ১৯৯১ সালে পুরনো সেন্ট পিটার্সবার্গ নাম ফিরিয়ে দেয়া হয় এই শহরকে।

১৭১৩ থেকে ১৭২৮ এবং ১৭৩২ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত এই শহর ছিল রাজকীয় রাশিয়ার রাজধানী ছিল। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার মস্কোমুখী হলে রাজধানীর মর্যাদা হারায় সেন্ট পিটার্সর্বাগ। রাশিয়ার অন্যতম আধুনিক শহর এটি। একই সাথে কালচারাল রাজধানীও।

হোয়াইট নাইট উৎসবের সময় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয় এই শহরে। সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দাদের মতে, পর্যটকদের বড় একটা অংশ আসে চীন থেকে। এছাড়া তিন স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দেশ- ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং ডেনমার্কের নাগরিকদেরও প্রিয় এই হোয়াইট নাইটের শহর। তবে রাজনৈতিক কারণে খুবই কম আসা মার্কিন এবং বৃটিশদের। এমনকি তিন বাল্টিক দেশ- লিথুনিয়া, লাটভিয়া এবং এস্তোনিয়ার নাগরিকদের অপছন্দের তালিকায় এই সেন্ট পিটার্সবার্গ। তাও রুশদের সাথে তাদের দ্বন্দ্বের কারণে,- জানালেন সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দা সার্গেই।

উৎসবের সময় কয়েক হাজার কিলো মিটার দূর থেকেও রুশরা আসে এই আনন্দের ভাগিদার হতে। নেভা নদীর পানির নিচ থেকে যে আলোকসজ্জ্বা করা হয় সেটাই মূল আকর্ষণ।এটা দেখতেই তাদের আসা। নদীর খুব কাছ থেকে তা দৃষ্টি এবং ক্যামেরাবন্দি করতে তাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এজন্য ছয় সাত ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতেও আপত্তি নেই তাদের।এই আয়োজনটা মূলত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। আর তাতে ভাগ বসায় বড়রা, বুড়োরাও। সার্গেই তো তার মোবাইলে ধারণ করা সেই আলোকসজ্জ্বার দৃশ্য দেখালেন প্রবল আগ্রহ নিয়ে।

এছাড়া প্রচুর পর্যটন স্পট রয়েছে এই শহরে। শহরের গোড়াপত্তনকারী পিটার গফের প্যালেস আছে বিশাল এলাকা জুড়ে। আছে গ্র্যান্ড মাকিয়েত। যা পুরো রাশিয়ারই প্রতিচ্ছবি। রাশিয়ার সব উল্লেখযোগ্য স্থানের প্রতিকৃতি আছে এখানে। যা দেখে শেষ করতে দুই-তিন ঘন্টা সময় লাগে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জাদুঘর হেরমিতাজ মিউজিয়ামের উপস্থিতি এখানে।

সেন্ট পিটার্সবার্গের সাথে অন্য দ্বীপগুলো যেমন- ভাসিলিয়েভেস্কি, ক্রিস্থসকির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে প্রচুর ব্রিজ করা হয়েছে। পুরো সেন্ট পিটার্সবার্গে ৩৪২টি ব্রিজের উপস্থিতি। সেন্ট পির্টাসবার্গ স্টেডিয়াম লাগোয়াই বিশাল এক ব্রিজ ঢেভারসোওয়ে। এটা এরমিতাস থেকে চলে গেছে ভাসিলিয়েভেস্কির দিকে। এর মধ্যে ২১টি ব্রিজের বিশেষত্ব হল রাতে এই ব্রিজগুলোর নদীর উপরের অংশ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় বড় বড় জাহাজ পারাপারের জন্য। ভোরে তা আবার জোড়া লাগানো হয়। সাধারণত এসব সেতুর নিচ দিয়ে কোনো জাহাজ যেতে পারে না।

সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে বিশাল বিশাল যাত্রীবাহী জাহাজ ছেড়ে যায় ফিনন্যান্ড, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের উদ্দেশে।

প্রচুর ঝর্ণাও আছে সেন্ট পিটার্সবার্গে, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

সংস্কৃতির সাথে খেলাধুলাতেও এগিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ। এই শহরের ক্লাব জেনিথ সেন্ট পিটার্সবার্গ ইউরোপের অন্যতম ক্লাব। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ইউরোপা কাপে তাদের সরব উপস্থিতি। সেন্ট পিটার্সবার্গ রেল স্টেশনে এই ক্লাবের স্টল আছে। যেখানে ক্লাবটির জার্সি, মাফলার ব্যাজসহ নানা সামগ্রী বিক্রি হয় স্যুভেনির হিসেবে।

সেন্ট পিটার্সবার্গে এখন দুটি স্টেডিয়াম। একটি জেনিথ সেন্টপিটার্সবার্গের নিজস্ব মাঠ। অন্যটি এবারের বিশ্বকাপের ভেন্যু। বিশ্বকাপের পর এই স্টেডিয়ামও হয়ে যাবে ক্লাবটির নিজস্ব ভেন্যু।

ফুটবল ব্যাপক জনপ্রিয় এই পর্যটর শহরে। স্থানীয় লিগের সময় এবং ইউরোপীয় লিগের সময় গ্যালারিতে জায়গা থকে না।


আরো সংবাদ



premium cement