১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু করার ঘোষণা জার্মান চ্যান্সেলরের

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু করার ঘোষণা জার্মান চ্যান্সেলরের - সংগৃহীত

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় বলেছেন, জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে টুইটার বার্তা দিয়েছেন তা ঠাণ্ডা মাথার বক্তব্য এবং কিছুটা উদ্বেগজনক। এটা কঠিন বক্তব্য এবং বর্তমান সময়ের জন্য উদ্বেগজনক তবে জি-সেভেনের জন্য এখানেই সবকিছু শেষ নয়।

জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, সম্প্রতি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন সরকারের শূল্ক বসানোর বিরুদ্ধে কানাডা যেমন ব্যবস্থা নিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোও একই রকমের পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। আমরা বার বার আমাদের সাথে প্রতারণার সুযোগ দেব না; এবার আমরা কিছু করব। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ঐক্যবদ্ধভাবে এবার মার্কিন শূল্ক বসানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো ম্যাস ট্রাম্পের টুইটার বার্তার সমালোচনা করে বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যকার আস্থা নষ্ট করবে।

কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডা ছেড়ে চলে যান এবং তিনি টুইটার বার্তায় বলেছেন, এ সম্মেলনের চেয়ে তার কাছে উত্তর কোরিয়ার নেতার সাথে বৈঠকটা এ মুহুর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাও তিনি মানবেন না বলে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন।

 

তুরস্ক-জার্মান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, এরদোগানকে মার্কেলের আমন্ত্রণ
আনাদলু এজেন্সি ও বিবিসি

তুরস্কের নির্বাচনের পর জার্মানের বার্লিনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২৪ জুন তুরস্কের নির্বাচনের পর জার্মানের বার্লিনে এরদোগানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

উত্তর জার্মানির ডসেলডর্ফের সলিংগেন শহরে বর্ণবাদী অগ্নিসংযোগের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ডাসেলডর্ফ সফরকালে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে তার ভাষণে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানান।
২০১৭ সালে তুরস্ক জার্মান নাগরিকদের গ্রেফতার করেছে, বার্লিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে, আঙ্কারার রাজনীতিকরা কথায় কথায় নাৎসিদের তুলনা দিয়েছেন৷ জার্মানি ও তুরস্কের সম্পর্ক নীচে নামে৷ ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর পারস্পরিক সন্দেহ ও সংঘাত নিত্যনতুন সংঘাতের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়৷

ফেব্রুয়ারি মাসে তুর্কি-জার্মান সাংবাদিক ডেনিজ ইউচেল তুরস্কে গ্রেফতার হন৷ এরদোগান ডি ভেল্ট পত্রিকার সংবাদদাতা ইউচেলকে সন্ত্রাসবাদী ও গুপ্তচর বলে অভিহিত করেন৷ ইউচেলের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তা সত্ত্বেও তিনি গত ১০ মাস ধরে কারারুদ্ধ৷ বার্লিন ইউচেলের গ্রেপ্তারি ও আটককে রাজনৈতিক পণবন্দি গ্রহণের সাথে তুলনা করেছে৷

পরবর্তী সঙ্কট দেখা দেয় এপ্রিলে তুরস্কের সাংবিধানিক গণভোটের ঠিক আগে, যে গণভোটের লক্ষ্য ছিল, প্রেসিডেন্টকে নতুন ও ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান৷ একাধিক জার্মান পৌর প্রশাসন ঐ গণভোটের ব্যাপারে জার্মানিতে তুর্কি রাজনীতিকদের প্রচারণা নিষিদ্ধ করে৷ জরিপে তখন বলছে যে, গণভোটের ফলাফল যে কী হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷

এরপর কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির বানানো লিওপার্ড ট্যাঙ্ক ব্যবহার করছে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আঙ্কারায় অস্ত্র রফতানি বন্ধে চাপের মুখে পড়েছে জার্মান সরকার। জার্মান রাজনীতিকরা তুরস্কের কাছে থাকা ট্যাঙ্কগুলো আপগ্রেড করার চুক্তি অনুমোদন বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানায়। জার্মানির অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাইনমেটালকে আঙ্কারা তাদের লিওপার্ড টু ট্যাঙ্কগুলোর আপগ্রেডের জন্য অনুরোধ করেছে বলে সেসময় প্রতিবেদনে জানানো হয়। ওই আপগ্রেডের মাধ্যমে বিস্ফোরক দ্রব্যের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্কগুলোর ঝুঁকি কমিয়ে আনার কথা বলা হয়।

জার্মান পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নরবার্ট রটজেন তখন বলেছিলেন, জার্মানির যে এই আপগ্রেড সুবিধা দেওয়া উচিত নয় তা পুরোপুরি পরিস্কার। সিরিয়ায় তুর্কি বাহিনীর হস্তক্ষেপ অবৈধ, আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন; এটি আইএসবিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রেও বিপরীতমুখী কাজ করবে। আফরিনে অভিযানের ক্ষেত্রে তুরস্ক আত্মরক্ষার অজুহাত দিতে পারবে না। কেননা সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী তুরস্কে কোনো ধরণের হামলা চালায়নি। ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে একমাত্র আমেরিকানরাই সেখানে কি হচ্ছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট। আমরা প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করি, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা অন্যদের তুলনায় অনেকখানি স্পষ্ট এবং সাহসী, আমাদের উচিত তাদের অনুসরণ করা।

২০১৭ সালেই তুরস্কের ইনচিরলিক বিমান ঘাঁটি থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল জার্মানি৷ তুরস্ক জার্মান এমপিদের সেখানে অবস্থানরত জার্মান সেনাদের সাথে নিয়মিত সাক্ষাতের অনুমতি না দেয়ায় এই ব্যবস্থা নিয়েছিল দেশটি৷ জার্মান সেনাদের কোথায় মোতায়েন করা হবে তা নির্ধারণ করে দেশটির সংসদ৷ জুনে পার্লামেন্টে তুরস্ক থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন পায়, কেননা, গতবছর তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোগানকে সরিয়ে দেয়ার এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সেদেশে বিদেশিদের উপর বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়৷ জার্মানির এমপিরা ইনচিরলিকে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করতে চাইলেও সরাসরি অনুমতি দেয়নি তুরস্ক সরকার৷ এই নিয়ে পানিঘোলা হয়েছে অনেক৷ গত সেপ্টেম্বরে বিশেষ ব্যবস্থায় সাত এমপি সেখানে যেতে পারলেও জার্মানির কাছে তা ইতিবাচক মনে হয়নি৷ ফলে দেশটি থেকে সেনাদের পুরোপুরি সরিয়ে নেয়া হয়৷

মূলত সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিমান হামলা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল জার্মানির সেনারা৷ এখন সেই দায়িত্ব জর্ডান থেকে পালন করা হবে৷ সেখানে ২৬০ জন জার্মান সেনার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই তুরস্ক থেকে নেয়া হয়৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন এই বিষয়ে বলেছিলেন, জার্মান সেনা ইউনিটটিকে তুরস্কের এমন এক ঘাঁটিতে নেয়া হয়েছে, যেটি বেশ কয়েকটি ন্যাটোভুক্ত দেশ ব্যবহার করছে৷

তুরস্ক ও জার্মানির মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। জার্মানিতে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সমর্থনে জনসভা করতে না দেয়ায় আঙ্কারায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল তুরস্ক সরকার। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এক জার্মান সাংবাদিককে আটক করার প্রতিবাদে বার্লিনে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত তলব করা হয়েছিল। এ ঘটনার জেরে জার্মান সফর বাতিল করেছিল তুরস্কের এক মন্ত্রী।

জার্মানিতে তুরস্কের প্রায় ৩০ লাখ লোক বসবাস করে। এদের বেশির ভাগই ৬০ থেকে ৭০ এর দশকে অতিথি শ্রমিক কর্মসূচির আওতায় জার্মানিতে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement