শোকাহত সাংস্কৃতিক অঙ্গন
- ২৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত শিল্পী ও সহকর্মীরা বেদনাভরা মন নিয়ে জানিয়েছেন তাদের স্মৃতিগাঁথা। লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন
শবনম : আমার স্বামী রবিন ঘোষ একজন সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। তার সুর-সঙ্গীতে শাহনাজ অনেক সিনেমায় গান গেয়েছে। রবিন যখন চলে যায়, তখন শাহনাজই আমাকে বেশি সান্ত¡না দিয়েছিল। সেই শাহনাজই এখন আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি কতটা যে কষ্ট পেয়েছি তা বলে বুঝাতে পারব না। আমার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না শাহনাজ নেই। শাহনাজকে নিয়ে রবিন একটি কথা প্রায়ই বলত, শাহনাজের মতো সঙ্গীতশিল্পী এ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি জন্মাবে না। আমার তাই মনে হয়, একজন শাহনাজ রহমতুল্লাহর যে অসাধারণ কণ্ঠ তা যেমন কোনোভাবে কান থেকে দূরে থাকার মতো নয়। তার গান, গানের মধ্যে আবেগও দূরে রাখার মতো নয়। শাহনাজ চলে গেছে সত্যি, কিন্তু সে আমার হৃদয়ের মধ্যে বেঁচে থাকবে। কারণ, আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। এখনো বাসি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার : মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা হয়েছিল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটির মধ্য দিয়ে। এই গানের গীতিকার আমি, প্রথম সুরকার ছিলেন আনোয়ার পারভেজ, শাহনাজের বড় ভাই। মূল শিল্পী ছিলেন আবদুল জব্বার ও শাহনাজ। পরবর্তীকালে সুরকার হিসেবে আনোয়ার পারভেজের উদ্যোগে আলতাফ মাহমুদ, আলাউদ্দিন আলীও সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। সেই ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানের শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ চলে গেলেন। কষ্ট আমার বুকেও রয়ে গেল। কষ্ট বুকে নিয়েই তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তার আত্মাকে শান্তি দেন। তাকে বেহেশতবাসী করেন।
রুনা লায়লা : শাহনাজের হঠাৎ চলে যাওয়ার খবর শুনে আমি ভীষণ আফসেট হয়ে পড়েছি। কত বছর ধরে শাহনাজকে চিনি ও জানি। তার সাথে কত যে স্মৃতি, এর কোনো হিসেব নেই। খবর শুনে আমি কোনোভাবেই বিশ^াস করতে পারছিলাম না। গত বছর একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে শাহনাজের সাথে আমার শেষ দেখা। আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে একের পর এক এভাবে এমন দুঃখজনক ঘটনা চলছেই। শাহনাজের চলে যাওয়ায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো; তাতে সত্যিই আমি ভাষাহীন হয়ে পড়েছি। আমাদের মাটির নক্ষত্ররা সব আকাশের নক্ষত্র হয়ে যাচ্ছে। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।
ববিতা : শাহনাজ আপার খবর সুদূর আমেরিকায় বসে শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। গতকাল এখানকার দিনের বেলায় একজন সাংবাদিক ফোন করে যখন আমাকে খবরটি দিলেন, তখন আমি বিশ^াসই করতে পারছিলাম না। কিন্তু মৃত্যুই চরম সত্যি, একদিন না একদিন সবাইকে চলে যেতেই হবে। কাউকে আগে যেতে হবে, কাউকে পরে যেতে হবে। আমাকেও একদিন এমনি করেই হঠাৎ চলে যেতে হবে। শাহনাজ আপা চলে গেছেন, আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও তিনি তার গানের মধ্য দিয়ে যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন। বিশেষত আমাকে বলতেই হয়, তিনি দেশের গানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন যত দিন বাংলাদেশ থাকবে। শাহনাজ আপার গাওয়া আমার লিপে তিনটি গান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। গান তিনটি হচ্ছেÑ ফুলের কানে ভ্রমর এসে, এক নদী রক্ত পেরিয়ে এবং পারি না ভুলে যেতে। শাহনাজ আপা বাংলাদেশের এমনই একজন কণ্ঠশিল্পী, যার মতো এক্সপ্রেশন দিয়ে বাংলাদেশের আর কোনো নারী সঙ্গীতশিল্পী গাইতে পারতেন না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন শাহনাজ আপাকে বেহেশত নসিব করেন।
আলম খান : শাহনাজের বড় ভাই সঙ্গীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যে কারণে তাদের বাসায় নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল। কিন্তু আমার সুর-সঙ্গীতে শাহনাজ কোনো গানে কণ্ঠ দেয়নি। এটা যখন আজ বসে বসে ভাবছিলাম, তখন নিজেই অবাক হলাম। কী অপূর্ব কণ্ঠ ছিল তার। দেশের গান, আধুনিক গান, গজলে তার অসাধারণ গায়কীতে মুগ্ধ হয়েছে এ দেশের গানপ্রেমী মানুষ। একজন সত্যিকারের সঙ্গীতশিল্পীর যেমন ভদ্র হওয়া উচিত, শাহনাজ ঠিক তেমনি ছিল। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে শাহনাজ শতভাগ সফল একজন শিল্পী ছিলেন। তার মধ্যে কোনো অহঙ্কার ছিল না, এটাই ছিল তার বড় গুণ। দোয়া করি, মহান আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।
কুমার বিশ^জিৎ : আদর, শাসন ও দুঃখ-কষ্টে মানসিক শক্তির আশ্রয়টুকু হারালাম আমি। আমি দোয়া করি, মা শাহনাজ রহমতুল্লাহকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন। এটা খুবই দুঃখজনক, আমাদের দেশের এমন অনেক কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আছেন, যাদের নানাভাবে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আমরা তাদের মূল্যায়ন করতে জানি না, তাদেরকে কিছু দিতেও পারি না, তাদের কাছ থেকে কিছু নিতেও পারি না। এটা খুবই বেদনার বিষয়। মা শাহনাজ এমনই একজন শিল্পী ছিলেন, যার কণ্ঠের মডিউলেশন, ব্রেথ কন্ট্রোল, থ্রোয়িং, এক্সপ্রেশন বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পীর মধ্যে নেই। তার এসব বিষয় এবং তার আদর্শকে ফলো করলেই শিল্পী হওয়া যেতে পারে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের সব শিল্পীর প্রিয় শিল্পী মা শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
তারিন : শ্রদ্ধেয় শাহনাজ রহমতুল্লাহর হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই অনেক কষ্ট ও বেদনার। শাহনাজ আপার ছেলে ফয়সালের সাথে ছোটবেলায় আমি বাদল রহমানের ‘কাঁঠাল বুড়ি’ শর্টফিল্মে অভিনয় করেছিলাম। তিনি সে সময় শুটিংয়ে আসতেন না। কয়েক বছর আগে একটি গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার দেখা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন পর তার সাথে কুশলাদি বিনিময় করি। তারপর ২০১৭ সালে একদিন তিনি আমাকে তার সাথে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করলেন। আমি গেলাম। তিনি আমাকে তার পাশে বসিয়ে তার গান শোনালেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার গান শুনলাম। আমি নিজ হাতে তাকে খাইয়ে দিলাম। সবশেষে তিনি আমাকে পার্লের একটি মালা উপহার দিলেন। আমি বুঝতে পারিনি তিনি কেন আমাকে এতটা মায়া করেছিলেন, ভালোবেসেছিলেন। সারা জীবন সুখের স্মৃতির চাদরে জড়িয়ে রাখবেন বলেই কি কাছে ডেকেছিলেন? জানি না আমি। তবে যত দিন বেঁচে থাকবো তত দিন তার স্নেহ ও মায়া-মমতার কথা ভুলব না। আল্লাহ যেন শাহনাজ আপাকে বেহেশত নসিব করেনÑ এই দোয়া করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা