১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রিয় সঙ্গীতজ্ঞের বিদায়

প্রিয় সঙ্গীতজ্ঞের বিদায় - সংগৃহীত

বাংলা গান পছন্দ করেন এমন যে কাউকে প্রিয় ১০টি গানের তালিকা করতে বললে, অবশ্যই সেখানে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা গান থাকবে। গানের ভাষায় তার মতো করে সমসাময়িক ও প্রাণবন্ত করে মানবজীবনের ভালো, মন্দ, উচ্ছ্বাসকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন এমন গীতিকার বাংলাদেশে খুব কম আছেন।

আমাদের প্রিয় স্বাধীনতাকে উদযাপন করতে গেলে তার সুর করা গান ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’। খুব মন খারাপের সময়, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখার সময় ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’ গানগুলো সামনে চলে আসে অবধারিতভাবেই। গান লেখার এই জাদুকর সঙ্গীত পরিচালনা এবং সুর করার ক্ষেত্রেও ছিলেন সমানভাবে জনপ্রিয়। বাংলা গানের এই সুর স্রষ্টা গতকাল ২২ জানুয়ারি চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে।

মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে নিজ বাসায় হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

এর আগে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি বুলবুলের হার্টে আটটি ক্লক ধরা পড়ে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলি বাদল ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। উপহার দিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় গান। সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপাসহ বাংলাদেশী প্রায় সব জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। অসংখ্য গানে সুর করেছেন বুলবুল যার অধিকাংশ গানই তার নিজের রচিত। তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

তার জনপ্রিয় কিছু গান
‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না’, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘ও আমার মন কান্দে ও আমার প্রাণ কান্দে’, ‘আইলো দারুণ ফাগুনরে’, ‘আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা’, ‘আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকব’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়’, ‘ওই চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ’, ‘কত মানুষ ভবের বাজারে’, ‘তুই ছাড়া কে আছে আমার জগৎ সংসারে’, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি’, ‘আমার জানের জান আমার আব্বাজান’, ‘ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানে’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘সাগরের মতোই গভীর, আকাশের মতোই অসীম’, ‘আমি জীবন্ত একটা লাশ’, ‘প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনা বিধুর’, ‘আমার সুখেরও কলসি ভাইঙ্গা গেসে লাগবে না আর জোড়া’, ‘পৃথিবীর জন্ম যেদিন থেকে, তোমার আমার প্রেম সেদিন থেকে’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘কী আমার পরিচয়, ঠিকানা কী জানি না’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ’, ‘জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন’, ‘ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী’, ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’, ‘বিধি তুমি বলে দাও আমি কার’, ‘এই তুমি সেই তুমি যাকে আমি চাই’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন, যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন’, ‘উত্তরে ভয়ঙ্কর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়াই মঙ্গল’, ‘কোন ডালে পাখিরে তুই বাঁধবি আবার বাসা’, ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’, ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়’, ‘আমায় অনেক বড় ডিগ্রি দিসে’, ‘এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন’, ‘জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালোবাসা ফুরাবে না জীবনে’, ‘পৃথিবীতো দু’দিনেরই বাসা, দু’দিনেই ভাঙে খেলাঘর’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘ওগো সাথি আমার তুমি কেন চলে যাও’, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল নাকি তোমার মন’, ‘একদিন দুই দিন তিন দিন পর, তোমারি ঘর হবে আমারি ঘর’, ‘গানে গানে চেনা হলো’, ‘কী কথা যে লিখি, কি নামে যে ডাকি’, ‘নদী চায় চলতে, তারা যায় জ্বলতে’, ‘চতুর্দোলায় ঘুমিয়ে আমি ঘুমন্ত এক শিশু’, ‘চোখের ভেতর কল বসাইছে’, ‘আমার জীবন নায়ে বন্ধু তুমি প্রাণের মাঝি’, ‘নদী চায় চলতে, তারা যায় জ্বলতে’, ‘খেলা হলো শুরু ভাই, খেলছেন গুরুভাই’, ‘আকাশটা নীল মেঘগুলো সাদা সাদা’, ‘ও ডাক্তার, ও ডাক্তার’, ‘আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই আর’, ‘তুমি কত লিটার দুধ করেছ পান’, ‘আপামর জনতার ধারণা’, ‘যোজন যোজন দূর’, ‘শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে আবার কেন পিছু ডাকো’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’, ‘আট আনার জীবন’, ‘বুকটা আমার ভাঙ্গা বাড়ি’, ‘আম্মা ভিক্ষা দেন নইলে ভিক্ষা নেন’, ‘মাগো আর নয় চুপি চুপি আসা’, ‘সালাম বাংলাদেশ’, ‘জাগো বাংলাদেশ জাগো’, ‘জীর্ণ দেহের এক বৃদ্ধা নারী’, আই অ্যাম এ ওয়ার চাইল্ড, ‘পঙ্গু মক্তিযোদ্ধা’, ‘আমার দুই চোখে দুই নদী’, ‘আমি জায়গা কিনব।’


আরো সংবাদ



premium cement