২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তার জন্য শিল্পীদের শোকগাথা

-

সাবিনা ইয়াসমিন
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হঠাৎ চলে যাওয়ায় অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে তার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল গত বছরের শুরুতে একটি সিনেমার গান রেকর্ডিংয়ের সময়। এরপর আর দেখা হয়নি তার সঙ্গে। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘খুব কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে আমরা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। এত কম বয়সে বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারপর বুলবুল এ দেশের একজন প্রথিতযশা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু এমন একজন সঙ্গীত পরিচালকের সঠিক মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এটাই আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। বুলবুলের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ বিটিভির জন্য একটি অনুষ্ঠানে। ১৯৭৮ সালের কথা। সেই অনুষ্ঠানে মাঝি নাও ছাইড়া দেরে মাঝি পাল উড়াইয়া দে, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নাই’সহ আরো দুটি গান গেয়েছিলাম বুলবুলেরই সুর সঙ্গীতে। কিন্তু দুঃখ হলো বিটিভি সেসব অনুষ্ঠান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে না। যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করত তাহলে নিশ্চয়ই এই প্রজন্মের শ্রোতারা, শিল্পীরা সেসব গান শুনে কাজে লাগাতে পারত। যা হোক সে কথা আজ বলে কোনো লাভ নেই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল চলে গেল, যেন আমাদের সবই শেষ হয়ে গেল। আর কিছুই রইল না আমাদের। তার সুর সঙ্গীতে আমি সব ক’টা জানালা খুলে দাওনা গানটি গেয়েছি। বুলবুল এই গান দিয়েই বেঁচে থাকবে যুগের পর যুগ। বুলবুলের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমি কিছু বলার আগেই বুঝে ফেলত বুলবুল আমি কী বলতে চাচ্ছি। আবার বুলবুল আর হারমোনিয়ামে হাত দিলেই আমি বুঝে ফেলতাম বুলবুল কী বুঝাতে চাইছে। এতটাই বোঝাপড়া ছিল আমাদের মধ্যে।
রুনা লায়লা
মঙ্গলবার ভোরবেলায় পরপারে পাড়ি জমান উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা বলেন, ‘বুলবুলের সুর সঙ্গীতে আমার প্রথম গান ছিল ও বন্ধুরে প্রাণও বন্ধুরে, কবে যাব তোমার বাড়ি পিন্দিয়া গোলাপি শাড়ি গানটি। প্রথম গানটিই সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এরপর আরো অনেক গান গেয়েছি বুলবুলের সুর সঙ্গীতে। যেহেতু বুলবুল নিজেই গান লিখত। তাই তার প্রতিটি গানের সুর সঙ্গীতায়োজন একটু অন্যরকমই হতো। যা শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যেত। বুলবুুল তার নিজের সুরে আমার একটি অ্যালবামও করেছিল। একজন শিল্পীকে স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

অ্যান্ড্রু কিশোর..
গেল ডিসেম্বরেই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল প্লে-ব্যাক সম্রাট অ্যান্ড্র্রু কিশোরের। বেশ কিছু নতুন কাজের পরিকল্পনা ছিল দু’জনের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর সফল হলো না। আবার আজ সকালেই তার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই শুনলেন বুলবুল আর নেই। অ্যান্ড্রু কিশোর বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য যে বুলবুল ভাইকে শেষ দেখাটা দেখতে পেরেছি। কারণ তার সঙ্গে আমি এত কাজ করেছি, এত সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল তার সঙ্গে যে আমি ভাবতেই পারছি না যে তিনি নেই। যতদূর মনেপড়ে বুলবুল ভাইয়ের সুর সঙ্গীতে আমি প্রথম একটি ফোক সিনেমায় গান গেয়েছিলাম। তবে তার সুর সঙ্গীতে আমার প্রথম হিট গান ছিল মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘আঁখি মিলন’ সিনেমার আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে গানটি। এরপর আমি তার সুর সঙ্গীতে বেলাল আহমেদ পরিচালিত আমার সারা দেহ খেওগো মাটি গানটি গেয়েছিলাম।

কনকচাঁপা
কনকচাঁপার এখন পর্যন্ত যতো জনপ্রিয় গান আছে তার অধিকাংশ গানেরই সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সিনেমার গানে কনকচাঁপা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তার গান দিয়েই। তাই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হঠাৎ প্রয়াণে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন কনকচাঁপা। কনকচাঁপা বলেন, ‘আমরা এমন গুণী মানুষের প্রয়াণের পর সাধারণত বলে থাকিÑ অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। বুলবুল ভাইয়ের হঠাৎ চলে যাওয়াটা সত্যি সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতিই হয়ে গেল। আমরা খুব জাতি হিসেবে খুব দুর্ভাগা। কারণ বুলবুল ভাইয়ের মতো এমন একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছ থেকে অনেক কিছুই নিংড়ে নেয়ার সুযোগ ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা দুর্ভাগা বলেই তা পারিনি। বুলবুল ভাইয়ের সুর সঙ্গীতে আমি অসংখ্য প্লে-ব্যাক করেছি। আমার কণ্ঠে গাওয়া জনপ্রিয় গান যেমন তুমি মোর জীবনের ভাবনা, কত মানুষ ভবের বাজারে, প্রেমের তাজমহল, ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানেন, তুমি আমার এমনই একজন, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, সাগরের তোই গভীর আকাশের মতোই অসীম’সহ আরো অনেক গান গেয়েছি তার লেখা এবং সুর করা।


আরো সংবাদ



premium cement