২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, আমরাও দায়ী : ইসি রফিকুল

নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম - ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, অনেক জায়গাতে মানুষের ভেতরে একটা ভীতি কাজ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর জন্য আমরাও কিন্তু পরোক্ষভাবে দায়ী। বুধবার আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে উপজেলা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই যে, অনেক জায়গাতে মানুষের ভেতরে একটা ভীতি কাজ করছে। আসলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরাও(নির্বাচন কমিশনও) কিন্তু পরোক্ষভাবে দায়ী। আমরা এমন সব কাজ করেছি যেগুলো ঠিক না।

তিনি আরো বলেন,‘অনেক সময় অত্যন্ত ছোট একটা ভুলও যদি আপনারা করেন। সেটাকে কিন্তু ভুল হিসেবে মানবে না মানুষ। ওই সিচুয়েশনে কাউকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ইচ্ছাটাকে ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে এটা বলবে এবং এটা মেনে নিতে হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সচেতনতার সঙ্গে আপনাদের কাজ করতে হবে।’

ইসি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ইভিএম মেশিন শুধু যারা ভোটগ্রহণ করবেন তারাই ব্যবহার করবেন না। যারা ভোট দেবেন তারাও ব্যবহার করবেন। তাই ভোটারদেরও প্রশিক্ষিত করতে হবে, কীভাবে ভোট দিতে হয়। একই সঙ্গে তাদের সচেতন করতে হবে। একজন প্রশিক্ষককে সব ধরণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে সে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারে।’

তিনি আরো বলেন,‘মনে রাখবেন, আইনকে কোনো সময় টেকনোলজির (প্রযুক্তির) কাছে স্যারেন্ডার করাবেন না। টেকনোলজি ইজ টেকনোলজি, রুল ইজ রুল। টেকনোলজিকে রুলের উপরে স্থান দেয়ার কোনো মানে হয় না। আইনে আছে কেন্দ্রভিত্তিক রেজাল্ট ঘোষণা দিয়ে আমরা একটি ফর্মে টাঙিয়ে দেব। আপনারা যদি কেন্দ্রে না করে কক্ষ থেকে রেজাল্ট দিয়ে দেন। আপনারা বলতে পারেন, কক্ষে করলাম তাতে এমন কী হয়েছে। কক্ষে করলাম, তারপর সবকক্ষ মিলিয়ে কেন্দ্রেরটা করে দিলাম। কেন এটি একটি অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ জানেন? একটা কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ ভোটার থাকে। ওই কক্ষের রেজাল্ট যদি দেন এবং দেখা যায় যে, কোনো একটা প্রতীকে বা লোকের পক্ষে সব ভোট চলে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই লোকটা পাস করতে পারেন নাই। ওই সামান্য কয়েকটা ভোটারের কি অবস্থা হবে জানেন? এসব ক্ষেত্রে ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে ডিআইজি সবাই এসেও কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না।’

আরো পড়ুন : উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন উত্তাপ নেই কেন?
বিবিসি, (১১ মার্চ ২০১৯)

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শুরুটা হলো কোন ধরনের উত্তাপ ছাড়াই। প্রিজাইডিং অফিসার গ্রেফতারসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এই ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ একটা দেখা যায়নি।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের এই হাল কেন? রোববার নানা অনিয়মের অভিযোগে ২৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর মধ্যে একটি ছিল সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানিয়েছেন, সেখানে রাতের বেলা ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে রোববার সকালে একজন প্রিজাইডিং অফিসার ও দুইজন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।

এর বাইরে কুড়িগ্রাম ও হবিগঞ্জে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই এর অভিযোগ উঠেছে। সিলেটে একটি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।


পাঁচ ধাপের এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ১২টি জেলার ৭৮ উপজেলায় এই নির্বাচন হল। এই সবগুলি উপজেলা মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি ভোটার রয়েছেন।

সাধারণত স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে যে ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিস্থিতি থাকে, সেটা এবার অনুপস্থিত।

স্থানীয় পর্যায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের এই হাল কেন?
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুর্শিদ বলছেন, "এটা সহজেই অনুমেয়। প্রথম কথা হল সব দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে যেভাবে হতো, তখন সকলে একরকম ভাবে অংশগ্রহণ করতো। তখন বেশ একটা ব্যাপকতা ছিল। এখন যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে, দলগুলোর অংশগ্রহণ যদি না থাকে তাহলে সেই ব্যাপকতা তো আর থাকবে না স্বাভাবিকভাবেই।"

বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের কারচুপির অভিযোগ করেছে বিএনপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক জোট।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সেই প্রশ্ন তুলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি ও তার শরীক দলগুলো। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ওঠা অভিযোগগুলো এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ না থাকার ক্ষেত্রে কতটা ছাপ ফেলেছে?


শারমিন মুর্শিদ বলছেন, "আমাদের জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন নানাভাবে কনট্রোভারসিয়াল হয়েছে। বিরোধী দলগুলো যারা আছে, তাদের ভেতরে এই ধরনের আশংকা একটা হতে পারে যেহেতু অনেক অনিয়মের প্রশ্ন উঠেছিলো। সেই একই রকম হয় কিনা। সেই কারণে অনীহার যায়গাটা তৈরি হতে পারে।"

আর দলকে ভোটের মাঠে না পেয়ে সেই দলের ভোটাররাও হতাশ হতে পারেন বলে মনে করেন তিনি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব কতটা পালন করেছে?
সেই প্রশ্ন রেখেছিলাম কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের কাছে। তিনি বলছেন, "সংসদ নির্বাচনকে নানা দলকে নিয়ে আসার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দায় থাকে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কিন্তু আমাদের এত দায় থাকেনা। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হল লোকাল গভমেন্ট মিনিস্ট্রির অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা এটা করে থাকি। কে দাঁড়াবে কে দাঁড়াবে না এটার অপশন ফ্রি থাকে।"

কিন্তু সামনে এই নির্বাচনের যে ধাপগুলো রয়েছে সেখানেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আরও অনেকে। সেই ধাপ গুলোতেও ভোট কতটা আগ্রহ তৈরি করবে সেই প্রশ্ন এখনি উঠছে।


আরো সংবাদ



premium cement