১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফজরের পরই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান খালেদা জিয়ার

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো) - ছবি : সংগৃহীত

ফজরের নামাজ পড়েই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবান্দী বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে সাধারণ ভোটার, ধানের শীষের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোববার আপনাদের সুযোগ আসবে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তিলাভের। দেশকে মুক্ত করার। সব হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের এক একটি ভোট নিশ্চিত করতে পারে জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ফলাফল না নিয়ে আপনারা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। আপনারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন। আজ বিকেল থেকেই পালাক্রমে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিবেন। ফজরের নামাজ পড়েই ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি।

খালেদা জিয়ার উদ্বৃতি দিয়ে রিজভী আরো বলেন, ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করবেন। ভোট দিয়ে কেন্দ্রের আশপাশে থাকবেন। আপনারা শুধু সাধারণ ভোটারই নন, ভোটারদের অতন্দ্র প্রহরী। ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেলো তা নিশ্চিত না হয়ে সাদা কাগজে সই করবেন না। কোনো অবস্থাতেই প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না। ফলাফল নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সাথে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের দশ বছরের দুঃশাসনে জনগণ অতীষ্ঠ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, রাত পোহালেই নির্বাচন। অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি বরখেলাপ করে জনগণের সাথে প্রতিমুহূর্তে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতাসীনরা জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। এজন্য তাদের সামনের বাধাগুলো সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। প্রথমে তারা সবচেয়ে বড় বাধা মনে করেছে ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তাকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়েছে। এখন নানাভাবে জুলুম করা হচ্ছে। আমরা তখনই বলেছিলাম-নির্দোষ বেগম জিয়াকে কারান্তরীণ করা ছিল একতরফা নির্বাচনের পূর্বাভাস। বেগম জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তাকেই ভয় পেয়েছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সেই জন্যই নির্বাচনী মাঠে মোকাবিলা করার সাহস না পেয়ে তাকে বন্দী করা হয়েছে। বন্দী করার পর তিনি জনগণের কাছে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন। আর এতেই সরকার আরো হিংস্র হয়ে উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িকের ধারাবাহিকতায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এর মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে চরম মাত্রায়। তফসিলের পর মামলা-হামলা-গ্রেফতারের স্পিড লিমিট নাই। যেন এই নির্বাচনের চূড়ান্তক্ষণে সারা বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী করেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। ২০০৯ সালের পর থেকে শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার আহাজারী নয়, শুধুই ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, জাকিরদের সন্তান-ভাইবোন-বাপ মায়ের গুমরে ওঠা কান্নাই নয়-এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গোটা দেশটাকেই অনাচার-অবিচার-লুণ্ঠনের অভয়ারণ্য করে তুলেছে।

রিজভী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর খুনী কে? এর উত্তর দিতে পারেনি সরকার। পোশাক কারখানায় শুধুই সারি সারি লাশ। হলমার্ক, ডেসটিনি, সরকারী ব্যাংক হরিলুট, পদ্মা সেতুসহ দুর্নীতি কেলেঙ্কারীতে ভরা আওয়ামী আমল। সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল কাহিনী সবার মুখে মুখে। আওয়ামী নৃশংসতার মঞ্চে রক্তাক্ত কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎ, নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবু, ঢাকার ছাত্রদল নেতা জনি, চাঁদপুরে ছাত্রদলের লিমন, রতন, বিএনপি নেতা আবুল ছৈয়ালসহ হাজার হাজার বিরোধী দলীয় লোকজনদের লাশ। এদের আমলে সবচেয়ে আলোচিত অপরাধ ছিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছ থেকে পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবি চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করে র‌্যাব-১১ এর কতিপয় সদস্য। এর সাত দিন পর সাতজনেরই লাশ শীতলক্ষায় পাওয়া যায়। সরকারের এলিট বাহিনী বলে পরিচিত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর কয়েকজন সদস্য সরাসরি এই খুনের সাথে জড়িত ছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ হলেও মামলা নিয়ে ধীরে চলার নীতির নির্দেশ রয়েছে উপরের মহলের। এই আমলে ছয় বছরের শিশু পরাগ মণ্ডল অপহৃত হয়, সেই অপহরণের কাহিনী মর্মস্পর্শী ও বেদনাবিধুর। দুস্কৃত্কিারিরা পরাগ মণ্ডলকে ছিনিয়ে নিতে তার মা লিপি মণ্ডলের বুকে গুলি করে এবং বড় বোন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী পিনাকি মণ্ডলের পায়ে গুলি করে। এরকম হাজার হাজার অপহরণ ঘটেছে। এদের আমলে সুন্দরবন, পদ্মা, মেঘনা, কুশিয়ারা, সুরমাসহ অসংখ্য নদী-নালা সব শুস্ক ও বিপন্ন।

তিনি বলেন, গত দশ বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলে দেখা যাবে শুধু আতঙ্ক, ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, রক্তপাত আর বিরোধী দলসহ ভিন্ন মত ও বিশ্বাসের ব্যক্তিদের দমনের দশক। গণতন্ত্রের অস্থিমজ্জাকে নিংড়িয়ে নিয়ে গোরস্থানে পাঠানের দশক। বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ফাঁসির মঞ্চে তোলার দশক।

রিজভী আরো বলেন, আগামীকালের নির্বাচন নিয়ে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী নানা কায়দা-কানুন ও পরিকল্পনা করছে। তারা ময়ুরের সিংহাসন থেকে ছিটকে পড়ার ভয়ে এই কয়েকদিন রক্তাক্ত হামলায় সারাদেশকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। বিএনপির মিছিল ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানোসহ সহিংস আক্রমণে তাদের রক্ত ঝরাচ্ছে। শারীরিকভাবে ধানের শীষের প্রার্থীদের আক্রমণ করাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আগের রাতে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সীল মেরে রাখার পরিকল্পনাসহ নানামূখী নীলনকশা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। গতকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকলেও আওয়ামী ক্যাডাররা বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। আর চলছে বিরামহীন পুলিশী হয়রানী, মামলা দায়ের ও গ্রেফতার। তবুও ভোটার, ধানের শীষের সমর্থকদের দলের পক্ষ থেকে আহবান জানাবো-আগামীকাল আলো আসবেই।

তিনি ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনগণ অগণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রতিরোধ করা শুরু করেছে। জনগণের শক্তির কাছে দুর্বৃত্তরা পরাজিত হবেই, এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। সুতরাং ধানের শীষ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক। নিপীড়িত মানুষের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীক, আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতীক, শান্তি-উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক, দুঃশাসন থেকে মুক্তির প্রতীক। সবশেষে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই- ‘এদেশ কাড়তে যেই আসুক/আমরা সাহসে বেঁধেছি বুক/আমরা নইকো ভীরুর জাত/দেবো নাকো হতে দেশ বেহাত।

এছাড়া গতকালও গ্রেফতার, হামলা, মামলার চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ফেনী, নোয়াখালী, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, শেরপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট জেলা বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার ও হামলার শিকার হয়েছে। সেইসাথে গত ৮ নভেম্বর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১১ হাজার ৫০৬ জন নেতাকর্মী। গায়েবী ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯৫৭টি। শুধু গতকালই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ১১৭৭ জন নেতাকর্মীকে।


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল