২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘মাথায় নৌকার ব্যাজ, কিন্তু অন্তরে ধানের শীষ’

ঢাকা-৮ আসনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও রাশেদ খান মেনন - সংগৃহীত

নির্বাচনের বাকী মাত্র একদিন। এর মধ্যে প্রচারণা ও শেষ। রাজধানী ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা অবাধে নির্বাচনের বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়েছেন। সারাদেশের চিত্র মোটামুটি একই। বিরোধীদল তথা ধানের শীষের প্রার্থীরা মাঠে দাড়াঁতেই পারেননি।

ধানের শীষের প্রার্থীরা ভোটের প্রচারণায় নামলেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন। বাদ যাননি নারী প্রার্থীরাও। অনেক ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের উপর আরো বেশি হামলা করা হয়েছে। এক আফরোজা আব্বাসের উপর একাধিক বার হামলা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে ঘুরে দেখা গেছে এখানে শুধু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার। এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়াকার্স পাটির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

আর বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস। ঢাকা-৮ আসনটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনেই রয়েছে ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে আছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, ভিকারুননেসার মতো দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বহস্পতিবার ছিল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। এ দিন মানুষ আগে-ভাগেই অফিস শেষ করে বাড়ি বা গন্তব্যের দিকে ছুটছেন।

বিকেলে সিটি সেন্টারের পেছনে কথা হয় মাথায় নৌকার ব্যাজ পরিহিত এক ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীর সাথে। নির্বাচনের কথা বলায় একরাশ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমার ৪২ বছরের জীবনে এমন অবস্থা দেখি নাই। শুধু নৌকার পোস্টার। আর কোন পোস্টার চোখে পড়ে না। বিএনপি তো কোন প্রচারণাই চালাতে পারেনি। আর যেভাবে হামলা-মামলা করা হচ্ছে খোদায় সবই দেখছেন। বেশি লাফালাফি ভালো না। খোদায় সহ্য করবেন না।

কোন এলাকার ভোটার জানতে চাইলে বলেন, বাসাবোতে ভোটার। মাথায় নৌকার ব্যাজ কেন? মুচকি হেসে বলেন, ব্যবসা করে খাইতে হবে তো। নৌকার ব্যাজ না পরলে এখানে থাকা যাবে না।

ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা জানতে চাইলে খুব সাবলীল ভঙ্গিতে এই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী বলেন, কেন যাবো না? ভোট তো আমার দায়িত্ব। দেশ এভাবে চলতে পারে না।

এইচএসসি পাশ এই ব্যবসায়ী আশ-পাশ তাকিয়ে বলেন, মাথায় নৌকার ব্যাজ ঠিকই দেখছেন কিন্তু অন্তরে শহীদ জিয়ার ধানের শীষ। ভোটটা কিন্তু ঠিকই ধানের শীষে দিমু। নৌকার ব্যাজ না পরলে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দিবে না।

রাত সাড়ে ছয়টার দিকে মতিঝিল আউডিয়াল স্কুলের সামনেও দেখা গেল একই রকম দৃশ্য। এখানেও রাশেদ খান মেননের পোস্টার। মাঝে মাঝে ড. ইউনুস আলী আকন্দের লাঙ্গল প্রতীকের কয়েকটি পোস্টার দেখা যায়। আর হাত পাখার পোস্টার ও দুয়েকটি চোখে পড়ে। তবে এখানেও মির্জা আব্বাসের ধানের শীষের কোন পোস্টার দেখা যায়নি। তবে একটি রিক্সার পেছনে মির্জা আব্বাসের একটি পোস্টার দেখা গেল।

মতিঝিল আউডিয়াল স্কুলের সামনে কথা হয় অপর এক চা দোকানীর সাথে। ঠিক সে সময়ই সেখান দিয়ে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে শো শো করে চলে যান বেশ কয়েকজন যুবক। যুবকদের উদ্দেশ্যে বিরক্তি নিয়ে বলেন, এই যে দেখছেন বাবু সাবদের তারা আমার দোকান থেকে চা-সিগারেট নিয়া ঠিকমতো টেকা (টাকা) দেয় না। কিছু কইলে দোকান ভাইঙ্গা ফেলার হুমকি দেয়। ভাই ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা তেমন ভালো না।

ভোট দিতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন কিনা জানতে চাইলে না সূচক জবাব দেন। বলেন, বাড়িত গেলেও ভোট দিতে পারুম এর কোন গ্যারান্টি আছে? তয় কেন বাড়ি যামু?

এভাবেই দুই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের অভিব্যাক্তি বলছিলেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তারা দেশের এই অবস্থায় হতাশ। তারা একটা গুণগত পরিবর্তন চান বলে মনে হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement