১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

 প্রতীক বরাদ্দ আজ, শঙ্কা নিয়ে শুরু হচ্ছে ভোটযুদ্ধ

-

প্রতীক হাতে নির্বাচনী মাঠে ভোটাদের কাছে আজ থেকে ছুটে যাবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপিসহ বিরোধী জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে। এমনকি বিরোধী জোটের কর্মীরাও ডজনকে ডজন মামলা নিয়ে দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতে সাহস পাচ্ছেন না।

তফসিলের পরও গ্রেফতার কার্যক্রম থেমে নেই। ফলে বিরোধী জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচারণায় নামতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার মুঠোফোনেও যোগাযোগ করবেন, সেটিরও ভরসা পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যারা বৈধ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে তাদের গ্রেফতার আতঙ্ক থেকে মুক্ত রাখা। প্রচারণা ভালোভাবে করার সুযোগ দেয়া। সেটি তারা করতে না পারলে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে। এমনিতেই সংসদ বহাল থাকায় এমপিরা সুযোগটা বেশি পাচ্ছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা অনেক আগে থেকেই মাঠে বিভিন্নভাবে প্রচারণায় রয়েছে। দলীয় চূড়ান্ত প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে এখন তারা মাঠে সরগরম থাকবেন। কারণ আজ থেকে তারা আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সুযোগ পেলেন। যা চলবে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। আর গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন ধানের শীষের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা। নতুন-পুরনোর মামলার খড়গ ঝুলছে তাদের ওপর। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপি ও তার শরিকদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার বন্ধ হয়নি। উল্টো বেড়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের।

বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট আলাদা অভিযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। এখন গ্রেফতার করা হচ্ছে প্রার্থীদেরও। উল্টো ইসি বলছে পুরনো মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকার এক প্রার্থীকে সম্প্রতি তুলে নেয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তফসিল ঘোষণার পর কমপক্ষে ১৩ প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়নপত্র কিনতে আসা এক প্রার্থীর লাশ মিলেছে বুড়িগঙ্গায়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্প্রতি ইসিতে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, গায়েবি মামলা ও গ্রেফতারের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশন গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাদের নির্দেশ মাঠে কার্যকর হচ্ছে না।

বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানান, নির্বাচনে এখনো সমতল মাঠ তৈরি হয়নি। ইসির কার্যক্রমে সে রকম কোনো আলামতও তারা দেখছেন না। স্বাভাবিকভাবেই ইসি ও প্রশাসনের ভূমিকায় দলটির নেতাদের উদ্বেগ বাড়ছে। আমরা প্রতীক বরাদ্দের পর আবারো ইসিকে জানাবো যদি সঠিকভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে না পারেন আমাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। ইসি যদি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমূখর পরিবেশে নির্বাচন চায় তাহলে তাদের উচিত হবে সব প্রার্থীকে গ্রেফতার আতঙ্ক মুক্ত রাখা। ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত সকল গ্রেফতার বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া।

নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, আজ থেকে সব প্রার্থী মাঠে নামবে তা দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। আর সেটির মূল দায়িত্বে আছে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, পুলিশের গ্রেফতারি আতঙ্ক যদি বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এই নির্বাচন হবে প্রশ্নবিদ্ধ। আর ভোটারদের কাছে যদি তারা যেতে না পারেন তাহলে সেটি হবে প্রহসনের নির্বাচন। তিনি বলেন, এখনো কিছু স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন।

আপিলে মনোনয়পত্র বৈধ ২৪৩ বাতিল ৩০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা ২৪৩টি আপিল আবেদন গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রার্থিতা বৈধ করে। তিন দিনের টানা শুনানি শেষে ইসি থেকে এই তথ্য জানানো হয়। রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল আবেদন পড়ে ৫৪৩টি। আপিল শুনানির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ৮০ জন, দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ৭৮জন এবং তৃতীয় দিন শনিবার ৮৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার তিন দিনে ইসি এই ৫৪৩টি আপিল আবেদনের শুনানি করে। এর মধ্যে, ২৪৩টি আবেদন গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। অন্য দিকে, ৩০০ জনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫২২। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ১৮৫ জন।

ইসি সচিবালয়ে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে আপিল আবেদনগুলোর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শেষ দিন শনিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আপিল আবেদনের শুনানি চলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো: রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আপিল শুনানি করেন। ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও উপস্থিত ছিলেন। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত তিন হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মোট দুই হাজার ৫৬৭টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৪৯৮টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।

দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৬৪টি আসনে ২৮১ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২৯৫টি আসনে ৬৯৬ জন ও জাতীয় পার্টি ২১০টি আসনে ২৩৩ প্রার্থী দিয়েছিল।
২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে দুই হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি বাতিল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারেরা। এরমধ্যে ৫৪৩টি আপিল আবেদন জমা পড়ে।

গত ৬ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা রুহুল আমীন হাওলাদার, বিএনপি নেতা মীর নাছির, মীর হেলাল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ৩০০ প্রার্থীর আবেদন নামঞ্জুর করেছে নির্বাচন কমিশন।

অন্য দিকে, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যরিস্টার নাজমুল হুদা, বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি, আফরোজা আব্বাস, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী আব্দুল মান্নান, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি প্রার্থী ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপির চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, ইলিয়াছ আলীর স্ত্রী বিএনপি প্রার্থী তাহমিনা রুশদী লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাসহ দুই শতাধিক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তিন দিনে বিএনপির ৭৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প পেনাল্টিতে সাফল্য রিয়ালের জয়ের মানসিকতার প্রমাণ কিমিচের একমাত্র গোলে আর্সেনালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন বিরোধী দলকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার : ড. মঈন খান মোস্তাফিজের বিকল্প ভাবছে চেন্নাই, দলে ভিড়িয়েছে এক ইংলিশ পেসার বিদেশ যাওয়া হলো না আশরাফুলের, বাসচাপায় মামাসহ নিহত ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য : সেনাপ্রধান ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

সকল