২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আল্লাহ’র অয়াস্তে এ বিষয়ে কিছু একটা করেন : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত - সংগৃহীত

উদ্যোক্তা ও ঋণ গ্রহীতাদেরকে ঋণ খেলাপি বানাতে ব্যাংকাররাই চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহ’র ওস্তে এ বিষয়ে কিছু একটা করেন।

রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে পাঁচদিনব্যাপী রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খুব ভালো কথা নয় কিন্তু আমি সে কথাটি বলতে চাই। ব্যাংকিংখাতের কতগুলো বিষয় আমার নজরে পরে। আমার দু’একটি ধারণা, যখন কোনো উদ্যেক্তা বা ব্যক্তিকে ঋণ দিবেন বলে ঠিক করলেন। কিস্তির বিষয়টিও ঠিক করে দিলেন। তারপরই আপনারা ঠিক করেন, সে যেন ডিফল্ট বা খেলাপি হতে পারে। আপনারার ব্যাংকাররা এই ব্যবস্থাটা করে দেন যাতে সে অতিস্বত্তর একটি ডিফল্টার হতে পারেন। এতে আমার মনে হয় তার ওপর একটি অস্ত্র ব্যবহার করতে চান এবং তা করেন। এই চরিত্রটা বা লক্ষ্য অত্যন্ত খারাপ লক্ষ্য। তাই আপনাদের প্রতি আমার উপদেশ হবে, একটু কষ্টকরে, জোর করে এই চিন্তা থেকে একটু বিরত থাকবেন। তাকে শুরুতে সাহায্য করবেন। হোল্ড হিজ হ্যান্ড। কিন্তু তা আপনারা করেন না,আমি এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। এটি আপনারা করেন না।

উত্তেজিতভাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউ ডোন্ট হোন্ড হিস(উদ্যোক্তা) হ্যান্ড। এখন বলবো, আল্লাহ ওস্তে এখন এই বিষয়ে কিছু একটা করেন। আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে।

এখন আমাদের দেশে ব্যক্তিমালাকানি ব্যাংকিং অনেক প্রসারিত-উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন বেশির ভাগ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমের হয়ে থাকে। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ছিল। সেই অবস্থা এখন আর নেই। এখন সেই স্থান দখল করেছে ইসলামী ব্যাংক। তার মানে এই খাতে গত কয়েক বছরে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এবং এখাত নিয়ে অনেক সমালোচনা, অনেক আলোচনা ইত্যাদি বিদ্যমান।

অনেকে বলতে চান, ব্যাংকিংখাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এবং এটা একটি দুর্বল খাত হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করেন।

তিনি বলেন,আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের সরকারি ব্যাংকসহ ৬৩টি ব্যাংক আছে। এবং সরকারি ব্যাংক প্রায় ২৫% তার মধ্যে। এটা আরেকটি সমালোচনা এই খাত সম্পর্কে। এবং তার পর তো সবচেয়ে বড় সমালোচনা রয়েছে, নন-পারফরর্মেং লোন(এনপিএল) খেলাপি ঋণ। এবং এনপিএল লোনের ক্ষেত্রে মোটামুটি দোষটা সরকারি ব্যাংকের। সেগুলোতে এনপিএল সবচেয়ে বেশি। বেসরকারিখাতে এটি তেমন নেই।

তবে প্রাইভেট খাতের ব্যাংকগুলোতে আরেক ধরণের ফাঁকিবাজি আছে। সেখানে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের থেকে ‘ব্যাক পেটিং’ আছে। এক ব্যাংকের পরিচালকরা অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেন। কিন্তু নিজের ব্যাংক থেকে কোনো লোনটন নেন না। এই যে ব্যাক পেটিং, এই ব্যাকপেটিং নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই ব্যাক পেটিং নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বের করতে হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি।

তিনি ঋণ পুন: তফসিলের কড়া সমালোচনা করে বলেন, রিসিডিইলিং, পুন:তফসিল। ব্যাংকগুলোতে অনবরত রিসিডিউলিং হয়। জানি না কতবার পুন;তফসিলের নিয়ম আছে। কিন্তু আমার মনে হয়,এটা একেবারে আনঅ্যানডিং প্রসেস। এই আজকে একটু রিসিডিউলিং হলো, আবার কিছুদিন পরে রিসিডিউলিং হলো। বোধহয় সেখানে একটু লাগাম টানার প্রয়োজন আছে। রিসিডিউলিং ক’বার হবে তার একটি সীমা নির্ধারণের বিষয়ে আমরা একটা চিন্তা করতে পারি। আর একটি বিষয়ে নজর দেয়া দরকার। অনেকক্ষেত্রে অবসায়ন হলো সবচেয়ে ভালো সমাধান। এটা সব সময় বিবেচনায় আসে না। তার মানে হচ্ছে আপনি চান সে আপনার বাধ্য থাকুক। রিসিডিউল করুক, এবং কদিন পরে আবার রিসিডিউল করবে। না, অবসায়নকে একটু বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন। একটি প্রকল্প ঠিকমত হয়নি, এটি বাচানোর চেষ্টা কম করতে পারেন। বরং এটাকে ক্লোজ বা বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন । বন্ধ করে দিয়ে একটা নতুন কিছু করতে পারেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন,আমাদের ব্যাংকে আরেকটা অসুবিধা ছিল, তা কিছু রিমুভ করা গেছে, কিন্তু তা পুরোপুরি হয়নি। এটি হচ্ছে ব্যাংকের অবসায়ন বিষয়। এই ব্যবস্থা মোটেই কার্যকরি ছিল না। স্যাভলেজিং, মার্জার বিষয়টি জ্ঞান বুদ্ধি ছিল না। এখানে আইন বেশ দুর্বল,কিন্তু চেস্টা করা হচ্ছে। তাই এই উপযুক্ত মনেই হয়না। এখানে সংস্কার করার দরকার রয়েছে। ব্যাংকারদের অনুররোধ আপনাদের যদি দেউলিয়া ও মার্জারের বিষয়ে কোনো পরামর্শ থাকে তা দিতে পারেন। আপনাদের ব্যক্তিগত উপদেশ আমাকে দিতে পারেন। এটি ১৫ দিনের মধ্যে পেলে খুব খুশি হব। ১৫দিন মানে, এই মাসের মধ্যে।

অর্থমন্ত্রী দাবি করেন ব্যাংকিংখাত মোটেও দুর্বল নয়। তিনি বলেন,বাজারে যে কথা প্রচলিত রয়েছে যে ব্যাংকিং সেক্টর দুর্বল, এটি মোটেও ঠিক নয়, অজ্ঞতার কারণে এটি বলা হয়ে থাকে। আমার মনে হয়, যেকোনো উন্নত দেশেও এ ধরণের দুর্বলতা থাকে। আমার মনে হয় এই অসুবিধাগুলো সময়মত ধরতে পারলে তা সমাধান করা যায়।

নয়া দিগন্তের সর্বশেষ খবরের আপডেট পেতে এই পেইজে লাইক দিন  

https://www.facebook.com/nayadigantadmcl


আরো সংবাদ



premium cement

সকল