২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মনোনয়ন পেতে শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা

-

গত শুক্রবার শেষ দিনে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে দলের মনোনয়পত্র বিক্রি ও জমাদান প্রক্রিয়া শেষ করেছে বিএনপি। এখন চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পালা। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে শুরু হচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। জানা গেছে, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এমপি হতে আগ্রহী নেতাদের যেন ঘুম হারাম। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। যে যার মতো করে সিনিয়র নেতাদের বাসাবাড়িতে ছুটে চলেছেন মনোনয়নের আশায়।

নেতাকর্মীদের মতে, ফরম কেনা ও জমাদান প্রক্রিয়া শেষ হলেও মনোনয়ন তো আর চূড়ান্ত হয়নি। লবিং-তদবির আর মাঠ জরিপে যিনিই এগিয়ে থাকবেন শেষ পর্যন্ত তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তবে এবারের নির্বাচনে জোটের শরিকদের সাথে আসন বণ্টনের জটিলতা থাকায় বিএনপির হাইকমান্ডকে সতর্কভাবে এগোতে হচ্ছে। যদিও বেশ কিছু আসনে বিএনপির তরুণ সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোটের প্রার্থী থাকার কারণে দোটানার মধ্যে রয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে অনেকটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

৪৫৮০টি ফর্ম বিক্রি

এ দিকে, পাঁচ দিনে দলের ৪৫৮০টি মনোয়নপত্র বিক্রি করেছে বিএনপি। যার মূল্য দুই কোটি ২৯ লাখ টাকা। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির পাঁচ দিনে চার হাজার ৫৮০টি ফরম বিক্রি হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর দলটি গত ১২ নভেম্বর থেকে ধানের শীষ প্রতীক পেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি শুরু করে। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়।। জমা দেয়ার সময় ফরমের সাথে ২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে দিতে হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। প্রথম দিনে সোমবার আট বিভাগ মিলিয়ে মোট এক হাজার ৩২৬, দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার এক হাজার ৮৯৬, তৃতীয় দিনে ৪৮৮, চতুর্থ দিনে ৪০২ ও শেষ দিনে ৪৬৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, চার হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে বিএনপির আয় হয়েছে দুই কোটি ২৯ লাখ টাকা।

গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, আমাদের দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে মোট চার হাজার ৫৮০টি। জমা এখনো চলছে। অনেকে ফরম নিলেও তা এখনো সম্পন্ন করতে পারেননি। আজকে (গতকাল) সারা দিনই ফরম জমা নিচ্ছি। জমার পরিমাণটা পরে আমরা আপনাদের জানাব। দলের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ১২ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ নভেম্বর। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনুরোধে শনিবারও ফরম জমা নেয়া হয় বলে জানান রিজভী।

আজ থেকে শুরু সাক্ষাৎকার

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই এই বোর্ডের সদস্য। বিভাগওয়ারি সাক্ষাৎকারের সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের সমর্থকদের সাথে করে আনলে তা অসাদচরণ বলে গণ্য হবে বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময়সূচি মোতাবেক প্রথম দিন রংপুর বিভাগ সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং রাজশাহী বিভাগ বেলা আড়াইটা থেকে। আগামীকাল সোমবার বরিশাল বিভাগ, সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা, খুলনা বিভাগ বেলা আড়াইটা থেকে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগ সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগ বেলা আড়াইটা থেকে। সর্বশেষ বুধবার ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা এবং ঢাকা বিভাগ বেলা আড়াইটা থেকে।

প্রার্থীদের প্রত্যাশা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে টাঙ্গাইল-৩ আসনে এবার সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট সমাজসেবক শিল্পপতি মো: মাইনুল ইসলাম। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নির্বাচনী আসনে ধানের শীষের প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। মনোনয়নপত্র কেনার পর প্রতিক্রিয়ায় মাইনুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইল-৩ আসনটি বিএনপির দুর্গ। স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার প্রার্থীর পরিবর্তন চায়। আশা করি, বিগত ১০ বছরে যে ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছি, দল তার মূল্যায়ন করবে। আমাকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে ধানের শীষের বিজয় শতভাগ নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ।

পটুয়াখালী-২ আসনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বিএনপির সহদফতর সম্পাদক মো: মুনির হোসেন। তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংবাদিক শফিক রেহমানের ভাগ্নে তরুণ নেতা রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু বলেন, এলাকার তৃণমূলকে নিয়ে দলের সব ধরনের কর্মসূচি পালন করেছি। কেন্দ্রের কর্মসূচিতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। চেষ্টা করেছি মানুষকে সংগঠিত করার। আশা করি সার্বিক বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়ানোর পর থেকেই এলাকায় আমি দলের হয়ে কাজ শুরু করি। আজ প্রায় দেড়যুগ ধরে এলাকায় আমার যোগাযোগ। তৃণমূলের মতামত নিলেই জানা যাবে আসল চিত্র। বিশ্বাস করি, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারব। এ ধরনের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তাদের প্রত্যাশার কথা জানান।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement