২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপদেষ্টা সরকার গঠন ও সংসদ ভেঙে নির্বাচনের ফর্মুলা নাকচ

ঐক্যফ্রন্টের সাথে দু দফা সংলাপের পরও কোন সুসংবাদ পায়নি দেশবাসি। - ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপেও কোনো সমঝোতা হয়নি। ঐক্যফ্রন্টের দেয়া নির্বাচনকালীন ১০ সদস্যের উপদেষ্টা সরকারের ফর্মুলা এবং সংসদ ভেঙে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংলাপ শেষে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী। তবে সাত দফার বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। অন্য দিকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে বল এখন সরকারের কোর্টে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। সরকার যদি দাবি না মানে তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করা হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সরকারের দ্বিতীয় দফা সংলাপ গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে গণভবনে শুরু হয়। টানা তিন ঘণ্টার এই সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোথসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুথরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

সংলাপে সরকারের পে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা: দীপু মণি, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, স ম রেজাউল করিম, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু।

জানা গেছে, সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের স্বাগত জনান। ঐক্যফ্রন্টের গত মঙ্গলবারের সমাবেশ ভালো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এরপর ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। 

ঐক্যফ্রন্টের দেয়া রূপরেখা 

১.নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া 

ঐক্যফ্রন্ট লিখিত প্রস্তাবে বলেছে, সংসদ ভেঙে দেয়া সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও বিধানগুলো সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বিবৃত আছে। এ ছাড়া আমাদের এবং বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত সাংবিধানিক প্রথায়ও মেয়াদপূর্তির পূর্বে সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রচুর নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও অধিকাংশ েেত্র মেয়াদপূর্তির পূর্বে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছিল। বিদ্যমান সাংবিধানিক বিধান ও প্রথার আলোকে এবং বিশেষত ১২৩(৩)(খ)-এর আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বর মাসে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ প্রদান করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়া সম্পূর্ণ সংবিধান সম্মত হবে। অনুচ্ছেদ ১২৩(৩)(খ) অনুযায়ী উপরে উল্লিখিত পন্থায় সংসদ ভেঙে দেয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ১১তম সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবেন। সে েেত্র সংসদ ভেঙে দেয়ার তারিখ অনুযায়ী ১১তম সংসদ নির্বাচন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিভিন্ন দেশের সাংবিধানিক রীতি অনুসারে সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৪৫ দিন ব্যবধান থাকা বাঞ্ছনীয়। উপরে উল্লিখিত মতে সংসদ ভেঙে দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য একটি বড় শর্ত পূরণ হবে।

২. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন :

বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত প্রায় ২০ মাসে অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করলেও জণগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দতা, সামর্থ্য ও নিরপেতা সম্পর্কে সমাজে তাই বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে এর দায়দায়িত্ব মূলত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। তিনি নিজেই আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে তার সংশয় ব্যক্ত করেছেন।

এমতাবস্থায় সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপে ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ল্েয বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অন্তত আংশিক পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৬) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের পদত্যাগপত্রের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে সরে যেতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন কাউকে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনে নতুন সচিবও নিয়োগ করা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সচিবপর্যায়ের গ্রহণযোগ্য কোনো কর্মকর্তাকে অথবা প্রয়োজনবোধে সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত নিরপে ও দ কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিতে উক্ত পদে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

৩. নির্বাচনের সমতল ভূমি 

এ ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকে অবিলম্বে অন্তত জামিনে মুক্তি দেয়ার কথা বলে ঐক্যফ্রন্ট। বলা হয়- অ্যাটর্নি জেনারেল, পিপি এবং অন্যান্য সহকারী আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করবে না। নতুন মামলা দায়ের না করা : সংসদ ভেঙে দেয়ার পর কম্পিউটার সিস্টেমে অনুপ্রবেশ ও হ্যাকিংজনিত তথ্যপ্রযুক্তিগত অপরাধ ব্যতীত বাক ও মত প্রকাশের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ সংক্রান্ত অপরাধগুলোর ব্যাপারে নির্বাচনকালীন সময়ে (তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল প্রকাশ) মামলা দায়ের করা যাবে না। এখন থেকে নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনের প্রার্থীদের সভা-সমিতি, আলোচনা ও সংগঠনের স্বাধীনতা প্রয়োগের অবাধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩(খ)-এর প্রদত্ত গোপনীয়তার নিশ্চয়তা অনুযায়ী চিঠিপত্র, টেলিফোন ও মোবাইলের কথাবার্তা ফাঁস করার মতো অসাংবিধানিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দোষী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে কোনো স্তরেই ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনীকে বিচারিক মতাসহ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রা সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এবং এতে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার 

ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপে সহায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এবং অন্য ১০ জন উপদেষ্টা সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার গঠিত হবে। এ জন্য (১) সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের ৪ দফার (খ) উপদফায় ‘প্রধান উপদেষ্টা’ এবং ঘ উপদফায় ‘উপদেষ্টা’ যুক্ত হবে। (২) সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের ১ দফায় ‘উপদেষ্টা’ অর্থ নির্বাচনকালীন নিরপে সহায়ক সরকারের অধীন উক্ত পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি’; এবং ‘প্রজাতন্ত্রের কর্ম’ এই অভিব্যক্তির সংজ্ঞার পর ‘প্রধান উপদেষ্টা’ অর্থ নির্বাচনকালীন নিরপে সহায়ক সরকারের অধীন উক্ত পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি’ যুক্ত হবে। 

নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্যভার গ্রহণ করেন সে তারিখে নির্বাচনকালীন নিরপে সহায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।
সংসদ ভেঙে নির্বাচন ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব নাকচ : সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেসব বক্তব্য ও দাবি জানিয়েছে সেগুলোকে সংবিধানের পরিপন্থী ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাফ জানিয়ে দেন উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে সংসদ ভেঙে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার বিষয়ে রাজি হননি তিনি। তবে ঐক্যফ্রন্টের ছোটোখাটো কিছু দাবি মেনে নেয়া হয় দ্বিতীয় দফার সংলাপে, যা প্রথম দফার সংলাপেও মেনে নেয়া হয়েছিল। 

সাত দফার বেশ কিছু দাবি মানা হয়েছে : কাদের

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার বেশ কিছু দাবি মানা হয়েছে জানিয়ে সরকারি দলের মুখপাত্র এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আলোচনা আরো হতে পারে তবে সংলাপ শেষ।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে দিতে এটা তাদের বাহানা। কিন্তু আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।’ 

কাদের বলেন, সংসদ যেদিন বসেছে সেদিন থেকে হিসাব করে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তারা সংলাপে প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন সংসদের মেয়াদ শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে করার। এটা সংবিধানের বাইরে। তাই আমরা এতে সম্মত হইনি। আর একজন প্রধান উপদেষ্টাসহ ১০ জন উপদেষ্টা রেখে নির্বাচন করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের অনুরোধ করেছেন, আপনারা নির্বাচনে আসুন, আমরা দেখিয়ে দেবো এই সরকারের অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে নির্বাচন সম্ভব। এরপর যদি আপনারা জিতেন আপনারা মতায় আসবেন, আর আমরা জিতলে আমরা আসব।

তবে তাদের সাত দফায় থাকা বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে আমরা সম্মত। সরকারি পতাকা ও সরকারি কোনো ফ্যাসিলিটি আমরা এনজয় করব না। তারা রাজবন্দীদের একটা তালিকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে বলেছেন, যদি এই তালিকায় রাজবন্দী কেউ থেকে থাকে তাহলে তাদের মুক্তি দিয়ে দিতে। তারা সভা সমাবেশ করতে পারবেন। বিদেশী পর্যবেকের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি মতা দেয়ার আহ্বান মেনে নেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি এখন কোথাও থাকে না। তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন থাকবে। তারা নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের সিনিয়র নেতাদের সাথে পারসোনালি আলোচনা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেছেন। নির্বাচন পেছানোর নামে কোনো অপশক্তি আর যেন মতায় আসতে না পারে সে বিষয়েও সবাইকে ল্য রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর ব্যাপারে কথা হয়েছে। তারা তাদের মুক্তি চাননি, জামিন চেয়েছেন। আমরা বলেছি, এই মামলটি করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ক্যালেন্ডারে দেখতে দেখতে ১১ বছর পার হয়েছে। এই মামলা নিষ্পত্তি করতে ১১ বছর পার হয়েছে। তারা এ মামলা নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী ছিলেন না। এখন আদালত যদি জামিন দেয় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। 

বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় : তোফায়েল

সংলাপ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা সংবিধানের পরিপন্থী ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু বক্তব্য নিয়ে এসেছে। তাদের এসব বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘সংলাপ এখানেই শেষ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যদি তারা কোনো বিষয় নিয়ে আবার বসতে চান, সে েেত্র আমাদের আপত্তি নেই।’

ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি : শেখ সেলিম 

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘দুই পই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় ছিল। আমরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সংলাপ শেষে ড. কামাল 

সংলাপ শেষে বিকেলে ড. কামালের বেইলি রোডের বাসায় বৈঠকে বসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় দফা সংলাপের ফলাফল জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, আমরা তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, করছি, করে যাবো। দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা, একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে সব কিছু হোক। দায়িত্বতো সরকারের। বল এখন সরকারের কোর্টে।

দুই দফা সংলাপে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, আজকের সংলাপে আমরা আমাদের ৭ দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি। বলেছি, আমরা অল্প পরিসরে আরো আলোচনা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, সংলাপে সারা দেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনো গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হবে না, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গ্রেফতার করা হবে না বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।

সরকার দাবি না মানলে আন্দোলন : মির্জা ফখরুল 

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ দফার প্রথম দফাটাই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। আমরা জোর দিয়ে বলেছি, আইনগতভাবে তিনি মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।

বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই ধরনের কোনো প্রস্তাবই আমরা দেইনি। সেই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ফ্রন্টের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন অভিমুখে আমাদের পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। আমরা তো আন্দোলনেই আছি। 

আমরা আগামীকাল শুক্রবার রাজশাহীতে জনসভা করব।
বর্তমান সঙ্কট নিরসন সংলাপে সম্ভব কি না প্রশ্ন করা হলে ফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, আমরা সবসময় সংলাপকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। পার্ট অব আওয়ার মুভমেন্ট। আমরা এখনো বিশ্বাস করি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। সরকার যদি সেই পথে না আসে, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় পৌঁছাতে না চায় এর দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে।

নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে এখনো সরকার তার অবস্থানে অনড় তাহলে আপনারা কী আশা করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখানে আশার কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা একটি নির্বাচনকালীন সরকার চাচ্ছি জনগণের দাবি হিসেবে। এটা সরকার যদি না মানে তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তা আদায় করব।

এই দুই দফা সংলাপে আপনারা কী পেলেন মূল্যায়ন জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, পাওয়ার ব্যাপারটা রিলেটিভ ব্যাপার। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে গেছি। তারা বলেছে, ভবিষ্যতে তারা আলোচনা করে দেখতে পারে, সুযোগ আছে। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এই দাবি আদায় করব।
নির্বাচন পেছানোর দাবি একটা টালবাহানা-ওবায়দুল কাদেরের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলার অর্থই হলো জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের দাবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই বলে এমন কথা তারা বলছেন। আজকে নির্বাচন পেছানোর কথা আমরা বলছি, নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য। 

সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা আছে : মান্না

সংলাপ শেষে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা বলেছিলাম, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেয়ার ৯০ দিন পরেইতো নির্বাচন হবে। সংসদ ভেঙে দেয়াটা সংবিধানের অন্তর্গত এবং এখনই এটি সংবিধানে আছে। একই সাথে দু’টি সংসদ থাকবে এটা তো কোনো নিয়মই হতে পারে না। উনারা যদি বলেন এটা নেই তাহলে উনারা ভুল বলেছেন। এটি সংবিধানের মধ্যে আছে, সাংবিধানিকভাবেই আমরা প্রস্তাব করেছি। সে েেত্র সংসদ ভেঙে দেয়ার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছি। এর মানে নির্বাচন আমরা পেছাতে চাইছি এমনটা নয়।
প্রসঙ্গত, অক্টোবরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর তাদের আহ্বানে গত ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের প্রথম দফা সংলাপে অংশ নেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রথম দফা সংলাপ শেষেও হতাশা প্রকাশ করে ঐক্যফ্রন্ট।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল