১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মতপার্থক্য থাকলেও নির্বাচনে সমস্যা হবে না : সিইসি

কে এম নুরুল হুদা - ছবি : সংগ্রহ

নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তুলে কমিশানে বৈঠক বজর্ন করেছেন এবং এ বিষয়ে নিজের অভিযোগ জানিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন। এই ব্যাপারে জানতে চাইলেও সিইসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

‘তাহলে মাহবুব তালুকদার যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য বলে ধরে নিব কি না’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সিইসি।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক ও জেলার সিনিয়র নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি।

মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তন হয়। মাঠপর্যায়ে আপনারা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন তা বলবেন এবং এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করবেন।’

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সত্তা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কাজেই সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে কেউ কখনও বিচ্যুত হবেন না। আইনানুগ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় ব্রতী হবেন।’

পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আগামী নির্বাচনে আচরণবিধির কিছু পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান সিইসি। তবে তিনি বলেন, ‘কী কী পরিবর্তন আনা হবে তা এখন মনে নেই। আগামী কমিশন সভায় এসব নিয়ে আলোচনা হবে।’

মাঠপর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তারা সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে বেশ ভালো সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন সিইসি।

আরো পড়ুন:

যে দাবিতে অনড় ইসি মাহবুব
বাকস্বাধীনতা ‘কেড়ে নেয়ার’ অভিযোগ তুলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আবারো কমিশন সভা বর্জন করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সোমবার কমিশনের ৩৬তম সভা শুরুর পর ১০ মিনিটের মাথায় তিনি সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়েন। 

এর আগে গত ৩০ অগাস্ট কমিশনের যে সভায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সে সভা থেকেও মাহবুব তালুকদার আপত্তি জানিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে সভায় বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন এই নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। গত ৮ অক্টোবর কমিশনে দেয়া এক আনঅফিশিয়াল নোটে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন তিনি।


নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জনের বিষয়ে ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, গত বছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস নির্বাচন কমিশন অংশীজনের সাথে সংলাপের আয়োজন করে। ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুশীল সমাজ, মিডিয়া, পর্যবেক্ষণকারী, নারী নেত্রী প্রমুখ সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

নোট অব ডিসেন্টে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার অধিকার খর্ব করতে পারে না, বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা আমার সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদস্বরূপ কমিশন সভা বর্জন করছি।

মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, কমিশন সভায় তাকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়ার বিষয়ে কমিশনারদের ‘অভিন্ন অবস্থান’ তাকে ‘বিস্মিত ও মর্মাহত’ করেছে। ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

কমিশন সভায় আলোচনার জন্য কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে দফাগুলো প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন, তাতে রয়েছে :
ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন : ইসির সংলাপে ২৬টি দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে ও তিনটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সব নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে; তবে তা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। ভোটে সেনা মোতায়েন হলেও তারা কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনী বাদ দেয়ার পর তাদের কার্যপরিধি কেমন হবে তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এ নির্বাচনটি একটি দল বর্জনও করেছে। তবে বর্তমান বিরোধী দল সরকারের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে একটি দল সরকারে ও বিরোধী দলে থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কঠিন সমস্যারও সমাধান হতে পারে।

নির্বাচনে নিরপেক্ষতা : ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নির্বাচনের পূর্বশর্ত। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ক্ষমতাসীন দল যে সুবিধা ভোগ করে বিরোধী দল তা ভোগ করতে পারে না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের কমিটি ধরে ধরে মামলা দায়ের ও গায়েবি মামলা দায়েরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার আগে ইসি সম আচরণ নিশ্চিতে বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।

ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি : নির্বাচনকালে সার্বিকভাবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করতে বলেছেন অনেকে। এ দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ইসির কাছে অর্পিত হলে জন আস্থা বেড়ে যাবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তা সহায়ক হবে।
সরকারের সাথে সংলাপ : এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলে তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের সাথে তা নিয়ে ইসির সংলাপ করা উচিত।

গত ৩০ আগস্ট কমিশনের যে সভায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেখান থেকেও মাহবুব তালুকদার আপত্তি জানিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি মনে করি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না।


আরো সংবাদ



premium cement