২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যে কারণে সিলেটে বিএনপির পাল্টা প্রার্থী দিল জামায়াত

যে কারণে সিলেটে বিএনপির পাল্টা প্রার্থী দিল জামায়াত - সংগৃহীত

সিলেট, রাজশাহী এবং বরিশাল - এই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর মঙ্গলবার প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে সিলেটে বিএনপি'র রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী পাল্টা প্রার্থী দেয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

কারণ, বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রার্থিতা নিয়ে এতটা শক্ত অবস্থান নেয়নি বিএনপির-নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। এবারের এই অবস্থানের কারণ কি? এর ব্যাখ্যা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিবন্ধন-বাতিল-হওয়া দল জামায়াত সিলেটে পাল্টা প্রার্থী দেয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে।

সিলেটে জামায়াতের এই অনড় অবস্থান জোটের রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলবে, সেই প্রশ্ন এখন উঠছে তাদের জোটেই। নির্বাচন কমিশন অনেক আগেই জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। তারা দলীয়ভাবে কোনো নির্বাচন করতে পারবে না।

সে কারণেই সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের একজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে ‘টেবিল ঘড়ি’ মার্কা নিয়ে সেখানে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

তিনি যেন এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান - সে জন্য বিএনপি অনেক চেষ্টা করলেও, তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াত নেতা  জুবায়ের জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তাদের দলের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তিনি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ‘আমরা অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের যাতে এখানে জোটের প্রার্থিতা দেয়া হয়। সেটা হলে আমরা জোট থেকেই নির্বাচন করতাম।’

‘কিন্তু জোট আমাদের প্রার্থিতা না দেয়ায় আমরা এখানে আলাদাভাবে নির্বাচন করছি’ - বলেন তিনি।


দলটি বেশ কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারছে না। জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, শীর্ষ নেতাদের বিচারকে কেন্দ্র করে তাদের দল একটা বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পড়েছে। গোপনে নেতা কর্মীদের সংগঠিত রেখে তারা এগুচ্ছে। আর এ প্রেক্ষাপটেই এখন তারা চাইছেন, তাদের দলের রাজনৈতিক শক্তিটা দেখাতে।

দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবরও জামায়াতের অবস্থানকে একইভাবে ব্যাখ্যা করছেন। ‘জামায়াত তাদের ফোর্সটাকে তুলে ধরছে। তারা যে রাজনীতিতে আছে, সেটা তুলে ধরার জন্যই তারা সিলেটে জোটের বাইরে নির্বাচন করছে।’

জামায়াতকে জোটের শরিক হিসেবে সাথে রাখার ব্যাপারে বিএনপিকে বিভিন্ন সময় দেশের ভিতরে এবং বাইরে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি জামায়াতের ভোটকে হাতছাড়া করতে চায় না, বা তাদের জোটের ভোটকে ভাগও হতে দিতে চায় না।

সেজন্যই সিলেটে জোটের একক প্রার্থী রাখার ব্যাপারে বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিলেটে জোটের একক প্রার্থী দেয়া সম্ভব হলো না। কারণ সেখানে জামায়াত এ বিষয়ে একেবারেই অনড় রয়েছে যে, ওখানে তাদের প্রার্থী থাকবেই। সেটা নিয়ে সেজন্য আর আমরা কিছু বলছি না।’ জোটের রাজনীতিতেও এটা ‘কিছুটা নেতিবাচক' প্রভাব ফেলবে বলে বিএনপি নেতা  আলমগীর মনে করেন।

‘প্রভাব তো কিছুটা হলেও সাময়িকভাবে তো পড়লো। বিশেষ করে সিলেটের রাজনীতিতে পড়লো’ - স্বীকার করেন তিনি।

আলমগীর বলেন, এর আগেও গাজীপুর এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত মেয়র প্রার্থী দিয়ে জোটে দরকষাকষি করেছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে সেখানে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু এবার জামায়াত সিলেটে কোনভাবেই তাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেবে না বলে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে।


গত কয়েক বছরে নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে জামায়াত যে কোনভাবেই হোক বিএনপির সাথে জোটে থাকতে চেয়েছে। সে কারণেই এখন সিলেটে পাল্টা প্রার্থী দেয়ায় জামায়াতের অবস্থান নিয়ে বিএনপিতেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দুই দলের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, জামায়াত রাজনৈতিকভাবে অবস্থান তৈরির কৌশল হিসেবে সিলেটে বিএনপির পাল্টা প্রার্থী দিয়ে সরকারের আস্থা পেতে চাইছে কিনা, তা নিয়ে জোটে সন্দেহ থেকে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে বেশি আসনে জোট থেকে প্রার্থী পাওয়ার দরকষাকষির জন্যও তারা এখন এমন অবস্থান নিয়ে থাকতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সিলেটে মেয়র প্রার্থী, জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর বক্তব্যেও এটা বোঝা যায় যে, জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত আসন নিয়ে তাদের জোটে বড় দর কষাকষিতে যাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরিদা আখতার জামায়াতের এখনকার অবস্থানকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

‘আলাদা প্রার্থী দেয়াটা একটা কৌশল হতে পারে। আবার তারা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান বোঝার জন্যও এমন অবস্থান নিতে পারে।’ যদিও সিলেট নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

কিন্তু এখনও এই দুই দলের নেতাদের অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগের সরকারের বিরোধিতা থেকে তাদের স্ব স্ব দলের প্রয়োজনেই শেষপর্যন্ত তারা তাদের জোট টিকিয়ে রাখবেন।


আরো সংবাদ



premium cement