১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৪ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক ভিপি নুরের

- ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে রড, লাঠি ও স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। বুধবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন নুর। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাবির জহুরুল হলের চার শিক্ষার্থীকে শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে থানায় দিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শিক্ষাঙ্গনে কি ওদের সন্ত্রাস চলবেই? বিকেল ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রতিবাদ মিছিল। ছাত্রসমাজ এক হও, সন্ত্রাস রুখে দাও।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় দেয়া হয়।

পরে শিক্ষার্থীদের রাতের বেলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রা‌তে এ ঘটনা ঘ‌টে।

মারধ‌রের শিকার চার শিক্ষার্থী হ‌লেন- মনিনুল হক চৌধুরী (ট্যুরিজম এন্ড হস‌পিটা‌লি‌টি ম্যা‌নেজ‌মেন্ট বিভাগ, ২য় বর্ষ), সানোয়ার হোসেন (রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগ, ৩য় বর্ষ), মিনহাজ উদ্দিন (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃ‌তি বিভাগ, ২য় বর্ষ) ও আফসার উদ্দিন (আরবী বিভাগ, ২য় বর্ষ)।

জানা যায়, চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী‌দের ম‌ধ্যে ছি‌লেন- সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপ‌তি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত প্রমুখ। এদের ম‌ধ্যে আনোয়ার এবং হামজা ছাত্রলী‌গের কেন্দ্রীয় সভাপ‌তি আল না‌হিয়ান খান জ‌য়ের অনুসারী। আর আব্বাসী সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচা‌র্যের অনুসারী।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, ভুক্ত‌ভোগী শিক্ষার্থী‌দের‌কে ছাত্রশি‌বি‌রের কর্মী স‌ন্দে‌হে মঙ্গলবার রাত ১১টায় সন্দেহবশত তারা দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শিবির করে কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে আসে। পরে, শিবিরের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগে তাকে মানসিক চাপ দিতে থাকে। স্বীকার না করায় তাকে মারধর করা হয়। এসময় তার মোবাইলে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে ‘যোগাযোগ তালিকায়’ নাম থাকায় তাদেরকেও ডেকে গেস্টরুমে আনা হয়।

এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা এসে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে তাদের। মারধরে গুরুতর আহত হন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত মিটিং চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।

পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে। এর একটু পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা।

পরে রাত ২টার পর তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তা‌দের অবস্থা দে‌খে পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।


আরো সংবাদ



premium cement