২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আইনি জটিলতায় আটকে গেছে শিক্ষক নিয়োগ

আইনি জটিলতায় আটকে গেছে শিক্ষক নিয়োগ - ছবি : সংগৃহীত

আইনি জটিলতায় আটকে গেছে দেশের ১৬ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম এমনিতেই যেখানে বিঘিœত হচ্ছে সেখানে নতুন এই জটিলতায় প্রাথমিকের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দুই দফায় দেশের ১৬ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আসার পর এই সঙ্কট আরো জটিল হচ্ছে। গত ১২ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচিত শিক্ষকদের কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। এর পর ২০ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নিয়োগপত্র প্রেরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে ২০ জানুয়ারি পটুয়াখালী, মাদারীপুর ও সিরাজগঞ্জসহ আরো ১৪ জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগকার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। অবশ্য এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি নীলফামারী ও বরগুনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে গত ২৪ ডিসেম্বরের নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই দিন নওগাঁ ও ভোলা জেলায় শিক্ষক নিয়োগকার্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

একই সাথে গত ১৪ জানুয়ারি দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে গত ২৪ ডিসেম্বর নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে নতুন জটিলতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে? এ বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরের ডিপিইর কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল উচ্চ আদালতের নির্দেশনাপ্রাপ্ত জেলাগুলো বাদ দিয়ে বাকি জেলাগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া যথাসময়েই শেষ করা হবে। আর কোর্টের নির্দেশনাপ্রাপ্ত জেলাগুলোতে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। কোর্ট যেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর সেই বিষয়গুলোর উত্তরও দেয়া হবে।

ডিপিইর সহকারী পরিচালক মো: আতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কাজটি স¤পন্ন হয়েছে। এখানে যে বা যারা শিক্ষক নিয়োগের এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রিট করেছেন তারা দু’টি ভুল করেছেন। প্রথমত নারী-পুরুষের কোটা জেলা ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না, এটা হয় উপজেলা ভিত্তিতে। বিধি মোতাবেক কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল জারি হওয়া স্মারক ও শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার বিধি ৭(১)(খ) অনুযায়ী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মেধাক্রম থেকে পূরণ করাও নিয়ম রয়েছে। এবারের নিয়োগপ্রক্রিয়াতে সবগুলো কোটা যথাযথভাবেই অনুসরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ছয় মাসের সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এই ছয় মাসে প্রাথমিকের শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ক্ষতি হবে অপূরণীয়।

প্রথম দফায় চার জেলায় শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ আসার পর ডিপিইর পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছিল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নারী শিক্ষকের চেয়ে বেশি সংখ্যক পুরুষ শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ার ব্যাখ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) ব্যাখ্যায় বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ এর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে সরকারি কোটাবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।
ডিপিইর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ এর চূড়ান্ত ফলাফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৩ বিধি ৭(ক) অনুযায়ী কোনো একটি উপজেলার মোট পদের ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য ও ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা নির্ধারিত থাকে।

আবার বিধি ৭(খ) অনুযায়ী নারী, পোষ্য ও পুরুষÑ এই তিন ধরনের কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আবার চার ধরনের কোটা অনুসরণ করা হয়। এগুলো হলোÑ এতিমখানা নিবাসী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ৩০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্য ১০ শতাংশ। নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটায় এই চার ধরনের কোটা অনুসরণের পর প্রতিটিতে অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ মেধা কোটা থেকে পূরণ করার নিয়ম রয়েছে। বিধি মোতাবেক কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল জারি হওয়া স্মারক ও শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার বিধি ৭(১)(খ) অনুযায়ী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মেধাক্রম থেকে পূরণ করাও নিয়ম রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে সারা দেশ থেকে ২৪ লাখ পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন। প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাস করেন। গত ৬ অক্টোবর থেকে নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাসব্যাপী সারা দেশের সব জেলায় মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। এ পরীক্ষায় ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। 


আরো সংবাদ



premium cement