২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রাথমিকে উপবৃত্তির ৪০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

প্রাথমিকে উপবৃত্তির ৪০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ - ছবি : সংগৃহীত

দেশের প্রাথমিকপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানে শিউর ক্যাশের মাধ্যমে বছরে ৪০ কোটি টাকার বেশি লোপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রূপালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শিউর ক্যাশ থেকে একজন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির এক কিস্তির ৩০০ টাকা তুলতে অঞ্চলভেদে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমিশন কেটে রাখছে শিউর ক্যাশের এজেন্টরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে শতকরা হিসেবে এক কিস্তির ৩০০ টাকায় কমিশন ৩০ টাকা কেটে রাখারও অভিযোগ এসেছে। সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি বছর উপবৃত্তির বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় হলেও মাঠপর্যায়ে সুবিধাভোগীরা এর শতভাগ সুবিধা পাচ্ছে না। টাকা উত্তোলনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমিশন বাবদই শিউর ক্যাশ বছরে ৪০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইল নম্বর ভুল কিংবা মা অথবা শিক্ষার্থীর নামের ভুলের কারণেও একজনের টাকা চলে যাচ্ছে আরেকজনের হাতে।

উপজেলাপর্যায়ে উপবৃত্তির সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনেক মায়ের অভিযোগ- তাদের সন্তানের নামের বানানে কিংবা মায়ের নিজের নাম ভুল হলে উপবৃত্তির টাকা তারা তুলতে পারছে না। আবার মোবাইল নম্বর ভুল হলেও একজনের টাকা চলে যাচ্ছে অন্যজনের একাউন্টে। আবার অনেক সময় একই নামে একাধিক মায়ের নামের মিল থাকলেও টাকা প্রাপ্তিতে গরমিল হচ্ছে। এ অবস্থায় ২০২০ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করে তারপরেই নতুন বছরের উপবৃত্তির টাকা ছাড় করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা, অভিভাবক ও বিদ্যালয় প্রধানরা।

গত কয়েক বছর ধরেই উপবৃত্তি টাকা প্রদানের প্রথা চালু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অর্থ বরাদ্দে েেযসব ভুল বা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে সেগুলোর সমাধান করেই নতুন বছরের টাকা ছাড়ের দাবি জানিয়েছে অনেক অভিভাবক। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের নাম কিংবা মোবাইল নম্বরে কোনো ভুল না থাকলেও তারা উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্কুল কিংবা উপজেলাপর্যায়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থী কিংবা মায়েদের নামের ভুল সংশোধন এবং মোবাইল নম্বর ভুল হলে তা সংশোধনের সুযোগ দেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।
উপজেলাপর্যায়ে উপবৃত্তির সুবিধাবঞ্চিত অনেক মা অভিযোগ করেছে, তারা নিজেরা সন্তানের উপবৃত্তির টাকা তুলতে না পারলেও অনেকের মোবাইল একাউন্টে অজান্তেই অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের টাকা চলে আসছে। আবার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক মায়ের একাউন্টে টাকা আসছে না। আবার কারো দুই সন্তান একই স্কুলে পড়লেও অনেক মা উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে একজনের। কোনো স্কুলের উপবৃত্তির চাহিদার বিপরীতে কত টাকা বিতরণ হয়েছে তারও কোনো স্টেটমেন্ট বা বিবরণী দেয় না শিউর ক্যাশ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে অনেক স্কুল এবং অভিভাবকও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

প্রাথমিক স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে নানা সমস্যা ও অসঙ্গতি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে ‘লাল সবুজ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৯টি উপজেলাপর্যায়ের স্কুলে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করছে। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের উপবৃত্তির টাকা প্রদানে যেসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি সংগঠনটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সেগুলোর একটি তালিকা তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বলেও জানিয়েছেন লাল সবুজের প্রধান নির্বাহী মো: আবু সাঈদ। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, শিউর ক্যাশে উপবৃত্তির টাকা দেয়ার বিরোধিতা আমরা করছি না। তবে আমরা শুধু লাল সবুজের পক্ষ থেকে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের ত্রুটি ও অসঙ্গতিগুলো দূর করার দাবি জানিয়েছি। আগামী সপ্তাহেই আমরা আমাদের অনুসন্ধানের ফলাফল লিখিত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে জমা দেবো। আমরা দাবি জানাব যাতে চলতি ২০২০ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত সমস্যা ও অসঙ্গতিগুলো দূর করে তার পরেই উপবৃত্তির টাকা ছাড় করা হয়।

কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার নয়াকান্দি পাড়াতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে একই গ্রামের হালিমা খাতুনের তিন সন্তান। তার এক মেয়ে জেসমিন আক্তার পড়ছে ক্লাস ওয়ানে। কিন্তু গত এক বছরে এই মা জেসমিনের উপবৃত্তির টাকার একটি কিস্তিও পাননি। গতকাল বুধবার মোবাইলে এই প্রতিবেদককে হালিমা বলেন, মেয়ের উপবৃত্তির টাকার জন্য আমি স্কুলে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা করতে পারিনি। হেড স্যার বলেছেন, তারা তালিকা তৈরি করে উপজেলাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। টাকা না পেলে তাদের (স্কুলের)কিছুই করার নেই।

কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার খাদিজা আক্তার গতকাল মোবাইল ফোনে নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতি বছর আমরা প্রাইমারি স্কুলগুলোর তালিকা এবং তাদের উপবৃত্তির চাহিদা নিয়ে শিউর ক্যাশকে টাকা ছাড় করে দেই। তবে বছর শেষে শিউর ক্যাশ কতজন শিক্ষার্থীর অনুকূলে মোট কত টাকা দিলো তার কোনো স্টেটমেন্ট আমরা পাই না। এর আগে বেশ কয়েকবার উপবৃত্তির টাকা প্রদানের স্টেটমেন্ট চেয়েও আমরা পাইনি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা টাকা পেল আর কারা বাদ পড়ল তার কোনো নথি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না।

এদিকে রূপালি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা ‘শিউর ক্যাশ’ এর সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের পরিচালক মো: মুজিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বছর আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপবৃত্তি শাখা থেকে যে পরিমাণ অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা পাই, নানা কারণে তার শতভাগ অর্থ উপবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের তুলে দেয়া যায় না। তবে কত টাকা তুলে নেয়া হলো আর কত টাকা শিউর ক্যাশ-এর ফান্ডে অব্যবহৃত থাকে তার একটি হিসাব রূপালী ব্যাংক, শিউর ক্যাশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি দেখভাল করে। বছর শেষে একটি হিসাব বিবরণী মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ২০১৯ সালের হিসাব বিবরণী তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। উপবৃত্তির টাকা বিতরণের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক সোহেল আহমেদের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement
রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য বেনাপোল সীমান্তে ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক ৪ বিভাগে হতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি!

সকল