২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
প্রতিবাদের তৃতীয় দিন

ঢাবিতে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি

ঢাবিতে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় টানা তৃতীয় দিনের প্রতিবাদ ও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্য দিকে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংস্কার দাবি করে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। গতকাল বুধবার বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে তারা এসব দাবি জানান।

ঢাবির দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন-আলোচনা-সমালোচনার মুখে ধর্ষক মজনুকে বুধবার সকালে রাজধানীর শেওড়া এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব। ধর্ষককে গ্রেফতারের পর তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বুধবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে এ দাবিতে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা এক মানববন্ধন করেন। এতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় না কেন? অথচ যে ভিকটিম সে তো ট্রমায় (মানসিক আঘাত) মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যায়। তাই ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে ধর্ষণের ঘটনায় যথাযথ বিচার না হওয়ায় বারবার এসব ঘটনা ঘটছে। এর আগে কুমিল্লায় সোহাগী জাহান তনুর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যথাযথ বিচার হয়নি। যেটি ঘটেছিল ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতরে। আর গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাটিও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। তাহলে আমাদের মেয়েরা নিরাপদ কোথায়? আমরা সব ধর্ষণের ঘটনার যথাযথ বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন ঢাবির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে তারা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে বলেন, আমরা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশে যে আইন রয়েছে তারও সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করি। সংস্কার করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক, যেন ভবিষ্যতে কেউ ধর্ষণ করার আগে নিজের জীবনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা নিয়ে ভাবে। তারা বলেন, জনসম্মুখে ধর্ষককে ফাঁসি দেয়া হোক। এ রকম শাস্তি নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশে আর ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে না।

এ ছাড়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলা ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

আইন সংস্কার চায় ঢাবি শিক্ষক সমিতি
দেশের বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংস্কার চায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ধর্ষকের শাস্তি দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা চাই এই নরপিশাচের যেন দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। আমাদের দাবি হবে, সরকারের আইনি কাঠামোতে যদি কোনো ফাঁক-ফোকর থেকে থাকে, তাহলে তা যেন দূর করা হয়। এই ঘটনা যেন ধর্ষণের শেষ ঘটনা হয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল নারী ও শিশু নির্যাতনের যে আইন বাংলাদেশে প্রচলিত আছে, তা সংস্কারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন- উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজের চেয়ারপারসন ড. সানজিদা আক্তার, সিন্ডিকেট সদস্য হুমায়ুন কবির, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শরীফ উল্লাহ ভূঁইয়া, কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ এম আমজাদ, সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম প্রমুখ।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি
ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষককে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ আট দাবি জানিয়েছেন ঢাবির ছাত্রীরা। গতকাল বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। সমাবেশে বিশ^বিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এ সময় তাদের উত্থাপিত আট দফা দাবি হলো- ধর্ষণের দ্রুত বিচারে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন; সব আদালতে নারী নিপীড়ন সেল গঠন করে দ্রুত ধর্ষণ মামলার বিচার; টিএসসি থেকে সুফিয়া কামাল হল, গণতন্ত্র তোরণ থেকে সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন; বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিজস্ব ইস্যু নিয়ে কনসাল্ট করার জন্য চার-পাঁচজন নারী শিক্ষক দিয়ে ফিমেল উপদেষ্টা নিয়োগ; বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের আইনি সহয়তার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন; ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, নেশাখোর ও পাগলদের অপসারণ; ক্যাম্পাসের বাস স্টপেজগুলোর নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা করা এবং ইমার্জেন্সিতে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে অবস্থান করার অনুমতি।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ধর্ষণের মতো এ ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য আমাদের দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব ও চলমান সংস্কৃতি সমানভাবে দায়ী। অবিলম্বে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কখনো একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, প্রভাষক মার্জিয়া রহমান, শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল