২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জাবি শিক্ষার্থীদের দিনযাপন : পালা করে ঘুম,খাবারেও ভাগ

-

পালা করে ঘুম আর ভাগাভাগি করে খাবার খেয়ে দিন যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর। গত ৫ নভেম্বর ভিসির দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ার পর আকম্মিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের ভেতরের খাবার দোকান বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে থাকতে না পেরে  আশপাশের এলাকায় অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার সাথে জড়িত তারা পরেছেন ভোগান্তিতে। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ও আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাদেরকে সার্বক্ষনিক থাকতে হয় এখানে। কিন্তু আবাসকি হলে থাকার অনুমতি না পেয়ে তারা অনেকেই নিজেদের কর্মস্থল তথা ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সমিতির অফিস কিংবা প্রেসক্লাবেই অবস্থান করছেন।

 বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেল, যারা প্রাইভেট টিউশনির সাথে জড়িত কিংবা অন্য কোনো কোচিং সেন্টারে পাঠদান করেন তারা এখন পরেছেন উভয় সংকটে। তারা না পারছেন গ্রামের বাড়িতে যেতে, আবার না পারছেন ক্যাম্পাসেও থাকতে।  এ অবস্থায়  তারা ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকাতে বন্ধু কিংবা অন্য কোনো আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। অনেকে বাইরে বন্ধু বা ক্লাসমেটের ভাড়া বাসা কিংবা মেসে থাকছেন। বঙ্গবন্ধু হলের আসাদ নামের এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি একটি কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত। ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তিনি এই মুহুর্তে বাড়িতে যেতে পারছেন না। তাই এক বন্ধুর  মেসে  তাকে ডাবলিং করে থাকতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গেরুয়া , সাভার, নবীনগর, বিশমাইল এলাকায় অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসায়  রাতে থাকছেন। দিনের বেলাতে ক্যাপম্পাসে কিংবা অন্য কোথাও তারা সময় কাটান। এই অবস্থায় তারা  দুপুর কিংবা রাতের খাবারও  ভাগাভাগি  করছেন। আর বন্ধুর বাসা কিংবা মেসে যারা অতিরিক্ত গেস্ট হয়ে থাকছেন তারাও ছোট একটি রুমে রাতে পালা করে ঘুমাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস  ও হলগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে ছাত্রীরা নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী।

জাবির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অনার্স ফাইনাল বর্ষের ছাত্রী মারিয়াম ছন্দা  নয়া দিগন্তকে  জানান, আমরা হলে থাকার অনুমতি চাই। অন্যথায় ভিসির দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের সাথে  হল খুলে দেয়ারও আন্দোলন শুরু হবে। তিনি আরো জানান, আমি এখন পাশের গেরুয়া এলাকায় আমার এক বান্ধবীর সাথে কষ্ট করে আছি। আমার মতো আরো অনেক ছাত্রী  সেখানে অন্যান্য বান্ধবীর সাথে কষ্ট করে  শেয়ার করে থাকছে।

ইতিহাস বিভাগের নায়িম নামের অপর  শিক্ষার্থী জানান, আমি বিশমাইল এলাকায় আমার এক দুরসর্ম্পকের আত্মীয়ের বাসায় থাকি। আমি সেখানে দু’টি টিউশনি করি। সামনে ছাত্রদের ফাইনাল পরিক্ষা। তাই বাড়িতে চলে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। কষ্ট করেই দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের অনেককেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের একটু পরেই বাম পাশে ক্যাফেটেরিয়ার পেছনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবে গিয়ে দেয়া গেল ক্যাম্পাস ভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও এখানে একইভাবে পালা করে ঘুম আর ভাগাভাগি করে খাবার খাচ্ছেন।  হলগুলো বন্ধ ঘোষণার পর প্রশাসনের সাথে কথা বলেও তারা নিজেদের পেশা ও দায়িত্বের কথা জানালেও হলে অবস্থান করার সুযোগ পাননি কেউই।  তাই তারা নিজেদের পেশার প্রতি দায়িত্বশীল হয়েই সাংবাদিক সমিতি এবং প্রেসক্লাবের ফ্লোরে রাতে পালা করে ঘুমাচ্ছেন। এখানে খাবার কোনো ব্যবস্থা নেই।   বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রধান গেটের কাছে একমাত্র খাবার হোটেল আছে। সেখানে সব সময় খাবার পাওয়া যায় না। তাই প্রায় সময়েই তাদেরকে দূরে ইসলামনগর কিংবা নবীনগর অথবা সাভারে গিয়ে খাবার খেয়ে আসতে হয়। এতে খাবারের  খরচের সাথে যাতায়াত ভাড়াও গুনতে হচ্ছে তাদের।

 

জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি  প্লাবন তারিক নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩৮ জন।  আমরা জাবি প্রশাসনের সাথে আলাপ করেছিলাম যাতে অন্তত সাংবাদিকরা হলে থাকার সুযোগটি পায়। কিন্তু আমরা সেই সুযোগটিও পাইনি। তাই সমিতির এই একটি কক্ষেই আমরা গাদাগাদি করে থাকছি। দিনে যেখানে বসে কাজ করি, রাতে সেখানেই পালা করে ঘুমাই। 

সাংবাদিক সমিতির অফিসে গিয়ে কথা হয় আরো কয়েকজন রিপোর্টারের সাথে। এদের মধ্যে হাসান আল মাহমুদ, মিজান, ইমরান হোসেন, রাহুল ও তৌহিদ জানান, তারা ৫ নবেম্বরের পর থেকেই এখানে বলতে গেলে একা পড়ে আছেন। পেশাগত দায়িত্বের কারণে তারা  ক্যাম্পাস ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার জন্য যেতে পারছেন না।

সাংবাদিক সমিতির বিপরীত পাশেই জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। সেখানেও ঠিক একই চিত্র। দিনে কাজ রাতে সেখানেই ঘুম। ছোট একটি কক্ষে পালা করেই ঘুমাতে হচ্ছে তাদেরকে। জাবি প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা ১৮ জন। তাদেরকে প্রত্যেককেরই এই একই অবস্থা। এখানে ইমন মাহমুদ ও ফাইজার শাওলীন নামের দুই ছাত্র জানালেন তারা কষ্ট করেই এখানে অবস্থান করছেন। আন্দোলনের সংগ্রাম শেষ না হলে এবং হলগুলো খুলে দেয়া না হলে এই কষ্টের কোনো ইতি টানার লক্ষ্যনও দেখছেন না তারা।

এ বিষয়ে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য জানতে  বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার রহিমা কানিজের সাথে মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement