২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাতা মূল্যায়নে অবহেলার মাশুল দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থী
খাতা মূল্যায়নে অবহেলার মাশুল দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া বর্তমানে কোনো সাধারণ বিষয় নয়। আর শুধু নম্বর গণনার ভুলের কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থীর এ জিপিএ ৫ হাতছাড়া হয়ে যায় এমনকি ফেল দেখানো হয় তাহলে সে কষ্ট ঢেকে রাখার আর কোনো উপায় থাকে না বলে জানালেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়ন চ্যালেঞ্জর পর শুধুমাত্র ঢাকা বোর্ডেই ১৪৫ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, শুধু নম্বর গণনার ভুলের কারণে প্রতি বছর যদি কয়েক হাজার করে শিক্ষার্থীর এভাবে ফল পরিবর্তন হয় তাহলে নতুন করে পুরো উত্তরপত্র মূল্যায়নের সুযোগ দেয়া হলে আরো ব্যাপকভাবে ফল পরিবর্তন হতো। বঞ্চিত ও আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা সুবিচার পেতেন। 
পরীক্ষার হলে অনিয়ম, প্রশ্নফাঁস, খাতা মূল্যায়নে অবহেলাসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে যত নৈরাজ্য বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে তার সবগুলোরই মাশুল দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বলে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তারা। 

অনেকে বলেন, যাদের ফল পরিবর্তন হয়েছে তারা পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সবার কাছে হেয় হয়েছেন এবং নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। সবাই জেনেছেন তারা ভালো ফল করতে পারেনি। এ কষ্ট তাদের সহ্য করতে হয়েছে। আর হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের এ কষ্ট সইতে হয়েছে শুধু খাতা মূল্যায়নের সাথে জড়িত পরীক্ষক, নিরীক্ষক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের চরম গাফিলতি ও অবহেলার কারণে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের দুর্ভাগ্যের শিকার না হন সে জন্য দায়ী এসব শিক্ষককে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

খাতা মূল্যায়ন চ্যালেঞ্জ করে প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর লাখ লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করলেও তাদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থীরই ফল পরিবর্তন হয়। কারণ বর্তমানে আবার খাতা মূল্যায়নপদ্ধদিতে পুরো খাতা নতুন করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। শুধু নম্বর গণনা ও নম্বর তোলা সংক্রান্ত ভুল খতিয়ে দেখা হয়। সে কারণে নতুন করে খাতা মূল্যায়ন চ্যালেঞ্জ করা হলেও সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ছাড়া অবশিষ্টদের ফল অপরিবর্তিতই থেকে যায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, আবেদনকারী প্রার্থীরা সুবিচার পেতেন এবং ফলেরও অনেক পরিবর্তন হতো যদি নতুন করে খাতা মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ বাস্তবে দেখা গেছে একজন শিক্ষার্থী হয়তো প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয়ে গড়ে ৮০ বা তার অধিক নম্বর পেয়েছে। কিন্তু কোনো একটি বিষয়ে পেয়েছে অস্বাভাবিক কম নম্বর। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থীর বিশ্বাস যে বিষয়ে অস্বাভাবিক কম নম্বর পেয়েছেন সে বিষয়ের খাতাটি হয়তো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেননি পরীক্ষক। নতুন করে খাতাটি দেখার ব্যবস্থা করলে হয়তো তাদের ফল ভালো হতো। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় মাত্র এক নম্বরের জন্য আটকে গেছে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫। এ ক্ষেত্রে ফল পুনঃ নিরীক্ষার আবেদন করেও কোনো সুফল পান না কেউ কেউ। 

প্রতি বছরই নতুন করে ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের ক্ষেত্রে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এ বছর শুধুমাত্র ঢাকা বোর্ডে ৫২ হাজার ৯৮৪ জন পরীক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে নতুন করে ১৪৫ পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। ফেল থেকে পাস করেছেন ২৮৯ জন পরীক্ষার্থী। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৫৮৬ জনের। দেখা যাচ্ছে শতকরা তিনজনের মতো আবেদনকারীর ফল পরিবর্তন হচ্ছে ভুল সংশোধনীর মাধ্যমে। অবশিষ্ট আবেদনকারীদের ফলাফলের অসন্তোষ মেনে নিতে হচ্ছে। 
গত বছর এইচএসসিতে ১০ শিক্ষা বোর্ডে এক লাখ ২৫ হাজার ২৩৮ শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। অনেকে একাধিক বিষয়ে আবেদন করায় আবেদনের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন লাখ। 

২০১৭ সালে এইচএসসিতে ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন দেড় লাখ শিক্ষার্থী। 

অপর দিকে এবার এসএসসিতে ১০টি বোর্ডে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। লাখ লাখ এসব আবেদনকারীর মধ্যে সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল সংশোধন করা হয়েছে গণনা সংক্রান্ত ভুল সংশোধনের মাধ্যমে।


অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে জানান, পরীক্ষক যদি প্রতিটি খাতার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতেন তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। বৃদ্ধি পেত শিক্ষার মান। আর সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন না করায় কম মেধাবীদেরও অনেকে অপেক্ষাকৃত ভালো ফলাফল করছেন। তাদের মতে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন না হলে ভালো ও মন্দের মধ্যে পাথর্ক্য থাকে না।


আরো সংবাদ



premium cement