২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলসহ ১৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীরা - নয়া দিগন্ত

বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ বাতিল, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের সব লেনদেন জিডিটাল করা, গবেষণায় বরদ্দ বৃদ্ধিসহ ১৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার থেকে থেকে তারা এই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

আন্দোলনের মুখপাত্র মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান সরওয়ার সৈকত দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরছি না। গত শনিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি আমাদের দাবির বিষয়ে। তবে আমাদের সাথে বুয়েট শিক্ষক সমিতি সমর্থন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, শনিবার আন্দোলন ও ১৬ দফা দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের সাথে কথা বলার কথা নিজ থেকে জানিয়েছেন। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলতে ও আমাদের দাবিগুলো তার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। তবে এখনো পর্যন্ত তিনি আসেননি।

জানতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডি. এস. ডব্লিউ স্যার নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধাণ্য দেয়া হয়, আমাদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বরং ছুটি চলাকালিন সময়ে সবার দৃষ্টির অগোচরে নতুন (ডি. এস. ডব্লিউ) ছাত্রকল্যাণ পরিচালক হিসেবে বিতর্কিত ও অভিযুক্ত ড. আবুল কাসেম স্যারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা চাই তার নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে শিক্ষার্থী বান্ধব একজন ডি.এস.ডব্লিউ নিয়োগ দেয়া হোক। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে এবং তিনি শিক্ষার্থীদের অভিবাবক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-
১. ক্যাম্পাসের প্রবেশ মুখে সুদৃঢ় তোরণ ও গেট নির্মাণ : ক্যাম্পাসের দুই প্রবেশ মুখ পলাশী এবং বকশীবাজারে সুদৃঢ় স্থাপনা সংবলিত তোরণ বা গেট নির্মাণ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সীনামানা নির্ধারণ পূর্বক শিক্ষার্থীদর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

২. বিতর্কিত প্রক্রিয়ার ডি.এস.ডব্লিউ স্যার নিয়োগ বাতিল করণ এবং পুণরায় নতুন ডি.এস.ডব্লিউ স্যার নিয়োগ: বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় ক্যাস্পাস ছুটির সময়ে লোকচক্ষুর আড়ালে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগের অর্ডার বাতিল করতে হবে। ছাত্র কল্যাণ পরিচালক হিসেবে আমরা ছাত্রবান্ধব কোনো শিক্ষক দাবি করি যার কাছে ছাত্র-ছাত্রীরদের গ্রহণ যোগ্যতা থাকবে এব তিনি সর্বোপরি ছাত্রদের কল্যাণেই কাজ করবেন। অনতিবিলম্বে যেকোনো ছাত্রবান্ধব শিক্ষককে নতুন ডি.এস.ডব্লিউ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। আমরা আশা করছি প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ছাত্র-ছাত্রীদের মতামতের প্রতিফলন থাকবে।

৩. ছাত্রী হলের নাম সাবেকুন নাহার সনি হল হিসেবে নাম করণ: বুয়েটের ছাত্রীদের জন্য একটি মাত্র হল রয়েছে এবং তা নামহীন। অনতিবিলম্বে ছাত্রী হলটির নাম সাবেকুন নাহার সনি হল হিসেবে প্রবর্তন করার ১৭ বছরের গণদাবি দ্রুত প্রশাসনেকে এজেন্ডাভুক্ত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. টার্মে দুইট সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার অনুমতি পুনঃপ্রদান করা: যেকোন নিয়মিত শিক্ষার্থীর ১০৮ কোর্স ক্রেডিট সম্পন্ন করার পরে এই টার্মে দুইটি সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পুণরায় প্রদান করতে হবে।

৫. দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবাসিক হল সমূহের উন্নয়ন কাজ বাস্তায়ন এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান: বুয়েটের আবাসিক হল সমূহের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন, লোকবল নিয়োগ এবং এক্ষেত্রে বরাদ্দ দ্রুততম সময়ে প্রদান করতে হবে। প্রতিটি হলের লাইব্রেরী আধুনিকীকরণ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট ব্রাউজিং সুবিধা, প্রির্ন্টিং সুবিধা এবং উন্নতমানের রিডিং রুম তৈরি করতে হবে। হলের সার্বিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ এবং তাদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। হল সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল অর্ডার এবং বরাদ্দ দ্রুত প্রদান করতে হবে। প্রতিটি হলে বর্ষাকালে পানি জমে যায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এজন্য প্রয়োজনীয় উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করতে হবে। হলের প্রতিটি ফ্লোরে ছাত্রদের চাহিদা অনুয়ায়ি সুপেয় পানি কলের ব্যবস্থা এবং অকেজো কল গুলোর সংস্কার করতে হবে।

৬. সুইমিং কমপ্লেক্স স্থাপন: সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাঁতার শিখার সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে সুইমিং কমপ্লেক্স স্থাপন অত্যন্ত জরুরী। সাতাঁরের প্রশিক্ষনের অভাবে বুয়েটের বহু শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে মারা গিয়েছে। অতএব, দ্রুততম সময়ে সুইমিং কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের সাতাঁর শেখার সুবিধা প্রদান করতে হবে। সুইমিং কমপ্লেক্সের নাম “সাইফ-সিয়াম স্মৃতি কমপ্লেক্স” প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

৭. বুয়েটের নির্মাধীন ভবন সমূহের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা: নির্মাণধীন টি.এস.সি ভবন, এম.ই.এন.এক্স ভবন, ইসিই ভবনের ক্যাফেটেরিয়া সহ অন্যান্য ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. প্রতিটি বিভাগে নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়ন এর ব্যবস্থা গ্রহণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগেই নিয়মিত কোর্স শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাসরুমে প্রয়োজনীয় সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার লেনদেন ডিজিটালাইজেশান করা: সকল প্রকার একাডেমিক ফিস, হলের চার্জ, বৃত্তিসহ যাবতীয় ফিসের লেনদেন অনলাইনের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০. ক্যাম্পাসে বিনা বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করা এবং কাটার যথাযথ কারণ দর্শানো: বিনাবিচারে ক্যাস্পাসের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। কেন গাছ কাটা হয়েছে তার যথাযথ কারণ দর্শাতে হবে। আমাদের দাবি। ক্যাম্পাসে যতগুলো গাছ কাটা হয়েছে তার দ্বিগুণ গাছ ভিসি স্যারকে উপস্থিত থেকে লাগাতে হবে।

১১. গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি: প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের থিসিসের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ এবং ফান্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রদান করতে হবে। গবেষণার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন ল্যাবে শিক্ষকের তত্ত্ববধানে ছাত্র-ছাত্রীদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং গবেষণা কাজ করার এক্সেস সহজে প্রদান করতে হবে। তার সাথে অন্তর্জাতিক প্রতিযোগতায় অংশ গ্রহনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ফান্ড ও যাতায়াত খরচ বিশ্বদ্যিালয় থেকে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১২. শিক্ষার্থীদের ইউনিভাসিটি ই-মেইল আইডির ব্যবস্থা করা: প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভাসিট ই-মেইল আইডির ব্যবস্থা করতে হবে। এই ই-মেইল আইডির অভাবে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিসার্চ আর্টিকেল বা সফটওয়্যার এক্সেস করার সুযোগ থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি ই-মেইল এড্রেস এর ব্যবস্থা করতে হবে।

১৩. বুয়েটের বিদ্যামান ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা আধুনিকরণ: বুয়েটের বিদ্যমান কম গতি সম্পন্ন ওয়াই-ফাই সিস্টেম শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। অনতিবিলম্বে ওয়াইফাই ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করতে হবে।

১৪. বুয়েট জিমনেশিয়ামের আধুনিকীকরণ: বুয়েটের জিমনেশিয়ামের উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদরে চাতিদা অনুযায়ি আধুনিক ইকুইপমেন্টস এর ব্যবস্থা করতে হবে।

১৫. বুয়টে মাঠরে উন্নয়ন সাধন: বুয়েট মাঠের উভয় পার্শ্বে উন্নতমানের গ্যালারি নির্মাণ করতে হবে।

১৬. টার্ম পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কোডিং সিস্টেম চালুকরণ: টার্ম পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের পরিবর্তে গোপন কোডিং ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রশাসন আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement