২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

টিএসসিতে তারুণ্যের আড্ডা মুখর ইফতার

টিএসটি চত্বরের ইফতার - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘হ্যালো, কই তুই, মুড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়। সময় কম তিন মিনিটে হাজির হবি। মান্নান কই? এদিকে আসতে বল।’ এমন হাকডাক আর উচ্ছ্বাসপূর্ণ কলরবে প্রথম রমজান থেকে মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ চত্বর। সূর্য হেলে পড়ার অপেক্ষার সাথে চলতে থাকে ইফতারের প্রস্তুতি। দীর্ঘ হতে থাকে টিএসসি মুখী তারুণ্যের পায়ে হাঁটা মিছিল। প্রতিটি মিছিল গিয়ে যোগ হচ্ছে টিএসসির আঙ্গিনায়। যেখানে ইফতার আয়োজন রূপ নেয় তারুণ্যের উৎসবে।

জুনিয়র-সিনিয়রদের যেন এক মিলনমেলা এখানে। সারা বছর যাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয় না তারাও রমজানের এই সময়টাকে কাজে লাগান। একসঙ্গে ইফতার-আড্ডার প্রিয় স্থান এই টিএসসি। তাতে কোন জাতভেদ নেই। মুসলমান বন্ধুদের সাথে ইফতারে অংশ নেন বন্ধু তালিকায় থাকা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই। পছন্দমতো খালি স্থান বেছে নিয়ে বসে পড়েন খবরের কাগজ বিছিয়ে। তারপর অপেক্ষা করেন ইফতারের নানা পদ নিয়ে। আজানের শব্দে যেন উৎসবের শুরু।

কেউ সংগঠন ভিত্তিক, কেউ বা বিভাগ বা হলের ব্যাচ ভিত্তিক ভাগ হয়ে বসেন ইফতার নিয়ে। তার মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়াও থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। কেউ বুয়েট বা ঢামেক থেকে আসা অতিথি। কেউ বা চাকুরিজীবী বা বাইরের ক্যাম্পাস থেকে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী।

টিএসির চত্বরে ইফতার করতে আসা ঢাকা মেডিক্যাল কলেছের ছাত্রা সোহাইব বলেন, রমজান মাসে টিএসসিতে ইফতারের এই পরিবেশটা সারাদিনের সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। এই ইফতারের আয়োজনে কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। সব বন্ধুরা মিলে ইফতার সত্যিই অন্যরকম সৌন্দর্য্য। ইফতারটা একটা সম্প্রীতির মেলবন্ধন। একসাথে ভালোবাসাটুকু ভাগ করে নিতে সবাই আয়োজন নিয়ে বসে পড়ে টিএসসির সবুজ ঘাসের উপর।
এই ইফতারির উৎসবকে উপলক্ষ করে টিএসসির বাইরে দোকানীরা সাজিয়ে বসেন নানা ইফতারের পসরা। তার মধ্যে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, পাকোড়া, চিকেন, জিলাপি, বুন্দিয়া, লেবু শরবত, রুহ আফজা, খেজুর ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও কিমা পরোটা, চিকেন উইংস, টিকিয়া, কাবাব, সিজলিংসহ অন্যান্য আইটেমও দেখা মেলে। দুপুর থেকেই শুরু হয় তাদের কেনাবেচার সময়, তবে হিড়িক পড়ে যায় বিকেল গড়াতেই। ইফতারের আগ মুহুর্তে যেন দম ফেলার ফুসরৎও পান না তারা। তবে এমন ব্যস্ততাকে তারা উপভোগ করেন বেশ আমেজের সাথেই।

বৃহস্পতিবার টিএসসির মাঠে একসঙ্গে বসে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের এক দল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে একসঙ্গে বন্ধুদের মধ্যে আরো আনন্দঘন সময় কাটাতে তারা প্রায় প্রতিদিনই এই মাঠে ইফতার করেন। প্রায় ২০ বন্ধুর এই গ্রুপের ইফতারে প্রতিদিন সবাই হাজির না হলেও অন্তত ১৫ জন উপস্থিত থাকেন।

নিজেদের বর্ষের সবাইকে নিয়েও একসঙ্গে ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তারা। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে টিএসসির পূর্ব দিকের গেট দিয়ে দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করছিলেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তৃঞ্চা আক্তার শান্তা। তিনি বললেন, বেশ কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে ইফতার করব। সবাইকে ডাকা ও খাবার দাবার গোছানোর দায়িত্ব আমিই নিয়েছিলাম। কিন্তু সবার পরে আমিই মাঠে আসলাম। এখন ইফতারের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের টিপ্পনীও মেনে নিতে হবে।

এমন খুনসুঁটি, স্মৃতিচারণ, ও হাসিতে ইফতার শুধু আর ইফতার নয়, দারুণ প্রাণবন্ত তারুণ্যের আড্ডায়।


আরো সংবাদ



premium cement