২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দাওয়াত না দেয়ায় ছাত্রলীগের হামলায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড

ছাত্রলীগের হামলার পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থল - নয়া দিগন্ত

সিলেটের মদন মোহন কলেজের তারাপুর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়ায় তা হামলা চালিয়ে পন্ড করে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিতও করে তারা। বৃহস্পতিবার শহরতলীর আলী বাহার চা-বাগানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠান চলাকালে দুপুরের দিকে সেখানে ব্যাপক ভাংচুর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত দুজন শিক্ষক হলেন- পঙ্কজ ও তামান্না।

জানা যায়, মদন মোহন কলেজের তারাপুর ক্যাম্পাসের একাউন্টিং ও ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের অদূরে আলী বাহার চা বাগানের বাংলোয় বৃহস্পতিবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলা দেড়টার দিকে অনুষ্ঠানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের ৩০/৩৫ জনের একটি গ্রুপ। সশস্ত্র মিছিল নিয়ে তারা অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।

এসময় অনুষ্ঠানের মঞ্চ, চেয়ার, সাউন্ড বক্সসহ চা বাগানোর বাংলোও ভাংচুর করে তারা। হাম,লার পাশাপাশি এসময় পঙ্কজ ও তামান্না নামে দুই শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা। হামলায় ৪/৫ জন আহত হন। হামলা ও ভাংচুরের ফলে পণ্ড হয়ে যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।

হামলায় আহত দুজন হলেন কলেজের তারাপুর ক্যাম্পাসের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কলি বেগম। আহতদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থী সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, মদন মোহন কলেজের দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। একটি শহরের লামাবাজারে, অন্যটি তারাপুরে। তারাপুর এলাকার ক্যাম্পাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ক্লাস হয়। বৃহস্পতিবার তারাপুর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। তাঁদের দাবি, লামাবাজর ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের দাওয়াত না দেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই হামলা চালান।

অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাড়ি পার্কিংকে কেন্দ্র করে ওই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের লামাবাজর ক্যাম্পাসের সভাপতি মাহমুদুল হাসানও একই কথা জানান।

ওই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিলেন পার্বন সাউন্ড সিস্টেমের পরিচালক কার্তিক পাল। তিনি বলেন, বেলা ১টার দিকে হঠাৎ বেশ কয়েকজন যুবক অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করেন ও হামলা চালান। সে সময় গান ও নাচের পর্ব চলছিল। হামলাকারীরা স্টেজে থাকা স্পিকার ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। এতে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে বাংলোতে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা সেখানে ঢুকেও হামলা চালান। ওই হামলায় অনুষ্ঠান স্থলে থাকা বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আহত হন।

এদিকে ভাংচুরের শিকার বাংলোর তত্ত্বাবধানে থাকা মোঃ জয়নাল মিয়া জানান, হামলাকারীরা বাংলোর দরজা–জানালা, চেয়ার-টেবিল ও রান্নাঘরের বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করেছেন। শিক্ষার্থীরা ভয়ে বাংলোতে আশ্রয় নেয়ায় হামলাকারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন ও সেখানেও ভাঙচুর চালান।

এদিকে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সানি দাবি করেছেন, ‘এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান ছিল। কলেজের নয়।’

এ বিষয়ে নগরীর বিমানবন্দর থানার ওসি এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ জড়িত ছিলো। ছাত্রলীগের আরেক পক্ষকে দাওয়াত না দেয়ায় তারা হামলা চালিয়েছে। হামলার পর আয়োজকরা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement