ভর্তি জালিয়াতদের বহিষ্কার না করলে কঠোর আন্দোলন
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
- ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:১৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।
দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ সময় তারা ‘মেধাবীদের পাঠশালায় জালিয়াতের ঠাঁই নাই’, ‘আমার ক্যাম্পাস রাখিব জালিয়াত মুক্ত’, ‘মেধাবীদের ঢাবিতে জালিয়াতদের ঠাঁই নাই’, ‘জালিয়াতের ঠিকানা ঢাবিতে হবে না’, ‘জালিয়াত চক্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, চিটিং বাটপার জালিয়াত এই মুহূর্তে ঢাবি ছাড়’ ইত্যাদি লিখা প্ল্যাকার্ড বহন করে।
এর আগে ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে আজ এই মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতৃবৃন্দ।
তবে মানবন্ধনে ভিপি নুর এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও ছাত্রলীগ কিংবা ডাকসুর অন্য নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিটি ছাত্রের ইচ্ছা থাকে। এটি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেটি এদেশের মানুষকে ন্যায়ের পথ দেখিয়েছে। পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে, যাদের অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু সেসব বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারেনি। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে অনেকে ভর্তি হয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।
প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের দাবি কালক্ষেপণ না করে মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই জালিয়াতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থান নেয়া হোক।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন ডাকসুর স্বতন্ত্র জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন।
মানববন্ধনে শফিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য রয়েছে, তা এখন আর নেই। যারা জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলে সাধারণ মানুষের টাকায়। আমরা চাই না কোন চোর, লম্পট এই টাকার সুবিধা ভোগ করুক।
তারেক নামে অপর শিক্ষার্থী বলেন, আমরা জানি জালিয়াতি করে যারা ভর্তি হয়েছে তারা কারা। যারা ভর্তি জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে, তারা প্রশাসনকে কোন তোয়াক্কা করছে না। তারা একটি সংগঠনের সমর্থন নিয়ে চলছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যেন তাদেরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
গত কয়েক বছরে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনার অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। বর্তমানে এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। শিগগিরই আদালতে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে ঢাবির ঐতিহাসিক বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে ‘ভর্তি জালিয়াতবিরোধী’ সভায় অংশ নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় এবং ভর্তি জালিয়াতিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এসবের মধ্যে রয়েছে- জালিয়াতদের বহিষ্কারের জন্য প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান করা; প্রতিটি অনুষদের ডিন এবং কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের (যাদের জালিয়াত সংখ্যা তুলনামূলক বেশি) চেয়ারপারসন বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে; ডাকসু নেতৃবৃন্দকেও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করা; এসব লিগ্যাল অ্যাকশনগুলো নেয়ার পর ক্যাম্পাসে জালিয়াতদের ছবিসহ ব্যানার, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলা এবং তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানানো। এসবের পরও যদি প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে সবাইকে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেবে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত আসে।