২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি - নয়া দিগন্ত

ভিসি ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ও আট দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মঙ্গলবার সকালে পৃথকভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ২২তম দিনে সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি লোকমান হোসেন বলেন, ভিসির পদত্যাগ অথবা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন সময় শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন।

অপরদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে ববি শিক্ষক সমিতি। তৃতীয়দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আট দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষকরা।

এর আগে গত ২৬ মার্চ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আন্দোলন শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করেন। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।

চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম জানান, নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের কারণে আমরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে না গিয়ে আপাতত ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। মঙ্গলবার রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক ও তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, আমরা আমাদের আট দফা যৌক্তিক দাবী আদায়ে দুই ঘণ্টা করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছি। দাবি না মানা হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আরো পড়ুন : ভিসি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলায় উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো, (২৮ মার্চ ২০১৯)

শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়ার প্রতিবাদে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে অ্যাকাডেমিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নীচতলায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর উত্তাল আন্দোলনের কারণে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ছাত্রদের পাঁচ দফা হচ্ছে- ছাত্র সংসদ চালু, পরীক্ষা বর্জন করলে ফের পরীক্ষা নেয়ার জন্য কোনো জরিমানা না করা, এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হস্তান্তর করা, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের সংখ্যা বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ওভারব্রিজ তৈরি করা। এর আগে শিক্ষার্থীদের ছাড়াই মঙ্গলবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করার প্রতিবাদে সকালে হলের খাবার বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময়ও তারা ৫ দফা দাবি পেশ করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে ভিসির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি না মানা হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আলটিমেটাম দেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ক্যাম্পাসে। কিন্তু ফুল দেয়া ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানে (মধ্যাহ্ন ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে ২৬ মার্চ দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) একটি প্রোগ্রামে ভিসি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কটূক্তি করেন।

এ বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ভিসির বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ৫ দফা দাবি মানা না হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আন্দোলন চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন।

এ বিষয়ে ভিসি ড. ইমামুল হক জানান, বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানমালা রয়েছে। এমনকি স্বাধীনতা দিবসেও তাদের আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। বছরে শুধুমাত্র বিশেষ এসব দিনেই ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, বরিশালের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। এখানে ছাত্রদের কখনই রাখা হয় না। হঠাৎই এ বছর এমন করছে তারা। তাদের না রাখা হলে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।

তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চায় না, যারা এভাবে কথা বলে তাদের আমি কী বলে আখ্যায়িত করব? তাদের স্বাধীনতার পক্ষে বলে তো মনে হয় না। তাদের ব্যবহার রাজাকারের মতোই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে ড. ইনামুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আমি কিভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো মুক্তিযোদ্ধারও অনেক সন্তান রয়েছে। আমার কথা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কারণও ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মেয়াদ রয়েছে আর দুই মাস। আবার যদি আমাকে এখানে ভিসি নিয়োগ করা হয়-সে ভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখানোর চেষ্টা চলছে। আমি থাকলে অনেকে বিপদে পড়ে যেতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement