২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাঠ্যপুস্তকে জৈবিক চাহিদা নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য

পরিবারের কাজ নর-নারীর জৈবিক চাহিদা পূরণ - ছবি : সংগ্রহ

নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ১৪তম অধ্যায়ের নাম বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো ও সামাজিকীকরণ। বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো অধ্যায়ে পরিবার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে পরিবারের প্রকারভেদ, পরিবারের সাধারণ কাজ, সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা, গ্রাম ও শহরের পরিবারের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরিবারের সাধারণ কাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শুরুতেই প্রথম যে শিরোনাম তা হলো ‘জৈবিক চাহিদা পূরণ’। এ শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছে, সমাজ স্বীকৃতভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ পরিবার গঠন করে। বিয়ের মাধ্যমে পরিবার নর-নারীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করে। পরিবার গঠনের মূল উদ্দেশ্য সন্তান প্রজনন এবং লালন পালন করা। সন্তানের সুষ্ঠু লালন পালন সন্তান প্রজননের আনুষঙ্গিক কাজ। 

নর-নারীর জৈবিক চাহিদা পূরণ ছাড়া আরো যেসব শিরোনামে পরিবারের সাধারণ কাজ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো সন্তানের ভরণ-পোষণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষাদান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিনোদনের ব্যবস্থা, সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংরক্ষণ। 

অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক বলেছেন, মানুষ তার জৈবিক তাড়না থেকে জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ে করে ও পরিবার গঠন করে এটা সত্য। কিন্তু এটা নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে পরিবারের একনম্বর কাজ হিসেবে উল্লেখ করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জৈবিক চাহিদা কী এসব বিষয়তো অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বুঝিয়ে বলা যায় না। এ নিয়ে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এড়িয়ে যেতে হয় বলে জানালেন কোনো কোনো অভিভাবক ও শিক্ষক। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, এটি পরিবারের কাজ বটে। তবে এটিকে প্রথমে না রাখলেও চলত। 

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুগদা দিবা শাখার সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বর্তমানে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত নুরুল আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল দেওয়ান বাকিউল্লাহ নয়া দিগন্তকে এ বিষয়ে বলেন, আমি মনে করি এ বিষয়টি আলোচনা না করলে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হতো না। পরিবারের অন্য যেসব কাজ রয়েছে যা সর্বজনবিদিত সেগুলো আলোচনা করলেই যথেষ্ট ছিল। জগতে কত বিষয় রয়েছে। তার কয়টা আমরা পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শেখাতে পারি শিক্ষার্থীদের। তাই সব কিছু পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শেখাতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। 
বাংলাদেশের পরিবার কাঠামো অধ্যায়ে পরিবারের প্রকারভেদ বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন শিরোনামে। এর মধ্যে একটি শিরোনাম হলো ‘বিবাহোত্তর স্বামী-স্ত্রীর বসবাসের স্থানের ওপর ভিত্তি করে পরিবার’। এ শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছেÑ এ ভিত্তিতে পরিবার তিন ধরনের হয়, যেমন-পিতৃবাস, মাতৃবাস এবং নয়াবাস পরিবার। যে পরিবারে বিয়ের পর নবদম্পতি স্বামীর পিতৃগৃহে বসবাস করে তাকে পিতৃবাস পরিবার বলে। বিয়ের পর নবদম্পতি স্ত্রীর গৃহে বসবাস করলে তাকে মাতৃবাস পরিবার বলে। বিবাহিত দম্পতি স্বামী বা স্ত্রী কারো পিতার গৃহে বাস না করে পৃথক বাড়িতে বাস করলে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে। শহরে চাকরিজীবীদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।


পরিবারের এ ধরনের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক। পাঠ্যবইয়ে এসব আলোচনাকে অর্থহীন বলে মনে করেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, পিতৃবাস, মাতৃবাস তথা ঘরজামাই আর চাকরিজীবীদের শহরে বাসা নিয়ে বসবাসকে নয়াবাসÑ এসব নাম দিয়ে পরিবারের প্রকারভেদ করা এবং তা পাঠ্যবইয়ে আলোচনা আর পাঠ্যবই থেকে শেখার কোনো বিষয় নয়। স্বামী বা স্ত্রী কারো পিতার পরিবারে বাস না করে আলাদা বাস করলে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে পরিবারের এ ধরনের শ্রেণী বিভাজন আর নামকরণ অর্থহীন আলোচনা বলেই মনে হয় আমাদের কাছে। এসব আলোচনার মাধ্যমে অনর্থক ভারী আর ব্যাপক করা হয়েছে পাঠ্যবই যা দেখে বর্তমানে ভীত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। 

আবার স্বামী-স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতেও পরিবারের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন এক স্ত্রী থাকলে একপতœী পরিবার, একাধিক স্ত্রী থাকলে বহুপতœী পরিবার বলে। আবার একজন নারীর সাথে একাধিক পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে বহুপতি পরিবার বলে। এ ধরনের পরিবার আধুনিক সভ্যসমাজে দেখা যায় না। তবে একসময় তিব্বত, দক্ষিণ ভারতের মালাগড় ও টোডাদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যেত। 
পরিবারের এ ধরনের বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা কতটা তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement